মধ্যযুগে পুতুল নয়, শিশুদের সাজানো হতো কাকতাড়ুয়া

কখনো কাকতাড়ুয়া দেখেছেন? গ্রাম-বাংলার গ্রামীণ জনপদের একসময়ের অতি পরিচিত দৃশ্য এই কাকতাড়ুয়া। কাক কিংবা অন্যান্য পশুপাখিকে ভয় দেখানোর জন্য ফসলের জমিতে কাকতাড়ুয়া প্রতিস্থাপন করা হতো। মূলত ফসলের জন্য ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যেই কাকতাড়ুয়া দাঁড় করানো অবস্থায় রাখা হয়।
এছাড়াও কৃষকদের বিশ্বাস ছিল কাকতাড়ুয়া স্থাপন করলে ক্ষেতের ফসলে কারও নজর লাগবে না। ফসল ভালো হবে।
৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম মিশরীয় সভ্যতায় কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার শুরু হয়। নীল নদের অববাহিকার উর্বর পলিমাটিতে মিশরীয়রা চাষাবাদ করত।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: হেলিপ্যাডে ‘এইচ’ লেখা থাকে কেন?
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
সে সময় প্রযুক্তির উন্নতি না হওয়ায় নানা ধরনের শস্য খুব পরিশ্রম করে ফলাতে হতো। কিন্তু পাখির আক্রমণে ফসল রক্ষা করাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। ফসল রক্ষার জন্য ফসলের ওপর জাল বিছিয়ে পাখি ধরত তারা। এর কারণে ফসলও বাঁচত, পাখির মাংসও খাওয়া হতো। কিন্তু এই পদ্ধতিটি ছিল বেশ ঝামেলার।
এছাড়াও পশুদের আটকানো যাচ্ছিল না। তখনই পাথর দিয়ে ভয়ালদর্শন কিছু কাঠামো সাজিয়ে ক্ষেতে দাঁড় করিয়ে রাখা শুরু হয়। এভাবে শুরু হয় সভ্যতার প্রথম কাকতাড়ুয়ার আবির্ভাব। মধ্যযুগে ব্রিটেন ও ইউরোপে বাচ্চাদের কাকতাড়ুয়া সাজানো হতো।
বিজ্ঞাপন
শিশুরা লাঠি দিয়ে টিনের বাক্স বাজিয়ে ফসলের মাঠে ঘুরে বেড়াতো, যাতে টিনের বাক্সের শব্দ শুনে পাখিরা ফসলের মাঠে না আসে। কিন্তু কিছুকাল পর পুরো ইউরোপে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর ফলে ইউরোপে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যায়। ফসলের মাঠে পাখি তাড়ানোর জন্য যথেষ্ট শিশু পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন কৃষকরা পুরোনো কাপড় ও খড় দিয়ে শিশুদের আদলে কাকতাড়ুয়া বানানো শুরু করেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের তালিকায় যেসব স্থান
বিজ্ঞাপন
কাকতাড়ুয়া তৈরি করা অনেক সহজ। বাঁশ, খড়, মাটির হাড়ি, দড়ি, কাপড় ইত্যাদি দিয়ে কাকতাড়ুয়া তৈরি করা হয়। বানানো শেষে এটি দেখতে দু'হাত প্রসারিত মানুষের মতো মনে হয়। মাথার আকৃতি দিতে কেউ খড় ব্যবহার করেন। আবার কেউবা মাটির হাড়ি বসিয়ে হাড়িতে সাদা রং বা কয়লা দিয়ে চোখ মুখের ছবি একে দেয়। এরপর শরীর ঢাকতে পুরোনো শার্ট বা গেঞ্জি পরিয়ে ফসলের জমিতে পুঁতে রাখেন। দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোনো মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন।
বিজ্ঞানের যুগ সবকিছুই আধুনিকায়ন হচ্ছে। কৃষির উন্নয়নে নানা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তাই কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সনাতন পদ্ধতিগুলো। তবে কাকতাড়ুয়ার মতো সনাতন পদ্ধতিগুলো এখনো অনেক কৃষক ব্যবহার করেন।
কেএসকে/এমএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন