স্কুল পর্যায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণের গুরুত্ব

সাইমা হাসান
আমাদের জীবনে আমরা সবাই কমবেশি কোনো না কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি অথবা আমাদের আশপাশের মানুষের দুর্ঘটনার শিকার হতে দেখেছি। দুর্ঘটনা, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ অ্যাক্সিডেন্ট হলো একটি অদৃষ্টপূর্ব, অকল্পনীয় এবং আকস্মিক ঘটনা বা বিষয় যা প্রায়ই অমনোযোগিতা কিংবা প্রয়োজন-অপ্রয়োজনের ফলে সৃষ্টি হয়ে থাকে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
নিত্যদিনের কাজ, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, অফিস কিংবা ঘরের ভেতর কোথাও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা একেবারে শূন্য নয়। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়া, কেটে যাওয়া, পুড়ে যাওয়া, সাপে কাটা, পানিতে ডুবে যাওয়া বা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া-এসবই হতে পারে যে কোনো সময়, যে কোনো মানুষের সঙ্গে।
এসব আকস্মিক পরিস্থিতিতে কেউ আহত হলে হাসপাতালে নেওয়ার আগে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির অবস্থার অবনতি রোধ করার জন্য এবং তার জীবন বাঁচাতে তাৎক্ষণিক কিছু চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যাকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা বলে থাকি। এর মূল উদ্দেশ্য হলো জীবন রক্ষা করা, অবস্থার অবনতি হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং পুনরুদ্ধারের জন্য সাহায্য করা। যে কেউ এই চিকিৎসা দিতে পারে তবে তার জন্য সেই ব্যক্তির সঠিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সঠিক প্রশিক্ষণ ব্যতীত প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে রোগীর উপকারের চেয়ে আরও ক্ষতি হবে, এমনকি তার জীবনের ঝুঁকি আরও বাড়বে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
একজন মানুষ যদি প্রাথমিক চিকিৎসার মৌলিক কৌশলগুলো শিখে রাখে, তাহলে সে শুধু নিজের পরিবারের জন্য নয়, আশপাশের মানুষের জন্যও এক বড় সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ কোনো চিকিৎসক তৈরি করে না, বরং সাধারণ মানুষকে প্রাথমিক ধাপে কীভাবে ক্ষতস্থল পরিষ্কার করতে হয়, কীভাবে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হয়, কীভাবে সিপিআর দিতে হয়, কোন পরিস্থিতিতে রোগীকে না নাড়িয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়-এসব জরুরি বিষয় শেখায়। অনেক সময় দুর্ঘটনাস্থলে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই গুরুত্বপূর্ণ কয়েক মিনিট বা ঘণ্টা ঠিকভাবে সামলাতে না পারলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারে দক্ষ হাতে দেওয়া প্রাথমিক চিকিৎসা।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে এখনো প্রাথমিক চিকিৎসার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ খুব সীমিত পরিসরে দেওয়া হয় এবং সচেতনতার অভাবে এর গুরুত্ব সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট নয়। এখনো দেশের বেশিরভাগ স্কুল কিংবা কলেজে এই প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এমনকি অনেক স্কুল কিংবা কলেজে প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স অবদি নেই। যদিও কিছু কিছু স্কুল-কলেজে ফার্স্ট এইড বক্স থেকে থাকে, তার ভেতরে রাখা ঔষধগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ কিংবা তা ঠিক মতো ব্যবহার করতে কেউ জানেন না।
বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অধীনে ২০১০ সালে ‘শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য’ নামক বিষয়টি জায়গা পায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যে। কিন্তু তার সঠিক ক্লাস এবং কোনো প্রাকটিকাল ক্লাস না নেওয়ায় এ বিষয়টি শুধু নামমাত্রই পাঠ্যপুস্তকের অংশ থেকে যায়। অতএব এটি বাস্তব জীবনে কারো কোনো কাজে আসে না।
‘বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’র মতো সংস্থাগুলো প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করলেও তার তেমন একটা সুফল এখনো দেখা মেলে না। তবে এ চেষ্টা আরও বাড়াতে হবে। সকলেরই কমবেশি প্রাথমিক চিকিৎসার নুন্যতম ধারণা রাখা প্রয়োজন। প্রাথমিক চিকিৎসার অভাবে বহু অমূল্য প্রাণ প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
অনেকে ভুল ধারণা ও কুসংস্কারের কারণে প্রাথমিক চিকিৎসার জায়গায় ক্ষতিকর পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যা রোগীর অবস্থা আরও জটিল করে তুলছে। তাই শুধু বই পড়ে নয়, হাতে-কলমে শিখিয়ে দিতে হবে কীভাবে দুর্ঘটনার পরপর কী করতে হবে, কী করা যাবে না। স্কুল পর্যায়ে সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ছোটবেলা থেকেই সচেতন হবে এবং যে কোনো জরুরি মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে শিখবে।
প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষণ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদি আপনি জানেন কীভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হয় তাহলে আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের সামনে হঠাৎ বিপদ আসলে বা অচেনা কারো বিপদের মুহূর্তে আপনার দু’টি হাতই হতে পারে সবচেয়ে বড় ভরসা। তাই প্রতি নাগরিকেরই প্রাথমিক চিকিৎসার মৌলিক ধারণা থাকা উচিত এবং এর জন্য স্কুল পর্যায়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের উপর কতৃপক্ষের গুরুত্ব দেওয়া অধিক বাঞ্ছনীয়।
বিজ্ঞাপন
- আরও পড়ুন
- সোনা, ওয়াইন ছাড়াও যা থাকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ৩ আইসক্রিমে
- বিমানের একটি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল কত, নির্ধারণ হয় কীভাবে?
লেখক: শিক্ষার্থী, অনার্স ৩য় বর্ষ, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।
কেএসকে/জিকেএস
বিজ্ঞাপন