এসিল্যান্ড যেসব দায়িত্ব পালন করেন
এসিল্যান্ড শব্দ দুটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। বিভিন্ন সময় চাকরির খবরসহ নানান সংবাদে সরকারি এই পদটির নাম বারবার উঠে আসে। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না এই পদটিতে আসলে কারা চাকরি করেন, তাদের দায়িত্ব কী?
চলুন জেনে নেওয়া যাক এই পদটির বিষয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর-
এসিল্যান্ড কারা?
এসি মূলত অ্যাসিসটেন্ট বা সহকারী কমিশনারের সংক্ষিপ্ত রূপ। অর্থাৎ মাঠ পর্যায়ে ভূমি ব্যবস্থাপনার জন্য সহকারী কমিশনার কে এসিল্যান্ড বলা হয়; এবং পদটির নাম হল সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
এটি বাংলাদেশ প্রশাসন ক্যাডারের গ্রেড‑৯ এর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাঠ প্রশাসনিক পদ। তারা সরাসরি জেলা প্রশাসক বা ডিসি এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা এডিসি‑র অধীন থেকে কাজ করেন এবং একই সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
এসিল্যান্ড পদের দায়িত্ব কী কী?
১. ভূমি রেকর্ড রক্ষণাবেক্ষণ ও জরিপ: মজুতখাতা তৈরি, ভূমির মালিকানা তথ্য সংরক্ষণ করা।
২. রেভিনিউ সংগ্রহ ও আদায়: ভূমি সংক্রান্ত কর আদায় কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং কর আদায় নিশ্চিত করা।
৩. খাস ভূমি ব্যবস্থাপনা ও অবৈধ দখলমুক্তি: সরকারের খাস ভূমি সংরক্ষণ এবং দখলমুক্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৪. ভূমি বিরোধ মীমাংসা: সীমারেখা সংক্রান্ত বা ভূমি মালিকানা ও দখল নিয়ে বিরোধ সমাধান করা।
৫. ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা এবং জরিমানা, শাস্তি প্রদান করা।
৬. ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন: প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম এবং পুনর্বাসন সমন্বয় করা।
মোট কথা, এসি‑ল্যান্ড মাঠ পর্যায়ে ভূমি প্রশাসন, আইন‑শৃঙ্খলা, এবং সরকারি নীতির বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন।
এই পদে চাকরি পেতে হয় কীভাবে?
এসি‑ল্যান্ড পদে চাকরি পেতে হলে প্রথমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এই পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা – এই তিনটি ধাপ পেরিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে নির্বাচিত হতে হয়।
এরপর মেধার ভিত্তিতে যারা প্রশাসন ক্যাডারে সুযোগ পান, তাদের সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হয়। প্রশিক্ষণ শেষে যোগদানের পর প্রার্থীদের দুই বছরের জন্য ‘প্রবেশন’ বা পরীক্ষামূলক সময় পার করতে হয়।
এই সময়ের পারফরম্যান্স ও কার্যক্ষমতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে তাকে স্থায়ীভাবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি‑ল্যান্ড পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এই পদের চাকরির সুযোগ সুবিধা কেমন?
সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসিল্যান্ড পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন-ভাতা সরকারি বেতন কাঠামোর ৯ম গ্রেড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। শুরুতে বেসিক বেতন প্রায় ২২,০০০ টাকা। এর সঙ্গে ঢাকায় বাড়িভাড়া ভাতা বেসিকের ৬০% পর্যন্ত, অন্যান্য জেলাগুলোর ক্ষেত্রে ৫০–৪৫% পর্যন্ত পাওয়া যায়।
এছাড়া প্রতি মাসে চিকিৎসা ভাতা (প্রায় ১,৫০০ টাকা) এবং সন্তানের জন্য শিক্ষা ভাতাও দেওয়া হয়। সব মিলে প্রাথমিক পর্যায়ে একজন এসিল্যান্ড কর্মকর্তার মাসিক আয়ের সঙ্গে আরও কিছু অতিরিক্ত সুবিধার সুযোগও থাকে।
এই পদের একটি বড় আকর্ষণ হলো পদোন্নতির সুযোগ। সময় ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী টাইম-স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে বেতন বৃদ্ধি ও উচ্চ পদে উত্তরণের সুযোগ রয়েছে। একজন এসিল্যান্ড ধাপে ধাপে উপসচিব, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পরবর্তীতে সচিব পর্যায়েও উন্নীত হতে পারেন। সরকারি দায়িত্বে থেকে জনগণের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার ফলে সমাজে এই পদের সম্মান ও প্রভাবও অনেক বেশি।
এসিল্যান্ড বা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদটি বাংলাদেশের প্রশাসনে অত্যন্ত সম্মানজনক ও দায়িত্বপূর্ণ একটি পথ। এই পদটি দেশ ও জনগণের ভূমি‑ব্যবস্থাপনা‑শৃঙ্খলায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থেকে কাজ করার সুযোগ দেয়। বেতন‑ভাতা, সামাজিক সম্মান ও পদোন্নতির স্পষ্ট পথ থাকার কারণে বিসিএস উত্তীর্ণ অনেকেই এই ক্যাডার পছন্দ করেন।
সূত্র: বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস্
এএমপি/জিকেএস