যুদ্ধবিরতি চুক্তি: মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা
ফিলিস্তিনের রামাল্লাহ। ছবি: এএফপি
অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্টই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে শান্তির অগ্রগতি আনার চেষ্টা করেছেন। গাজায় অবিরাম হত্যাযজ্ঞের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই অল্পসংখ্যক নেতাদের তালিকায় যুক্ত হয়েছেন, যারা বাস্তবে কোনো সাফল্য পেয়েছেন।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির প্রাথমিক চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করেছে। পথটি সংকীর্ণ হলেও এটি ১৯৯৩ ও ১৯৯৫ সালের অসলো চুক্তির পর থেকে টেকসই শান্তির সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা।
এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অসলো-পরবর্তী অচল ধারণা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি মানচিত্র আর দুই রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক অন্তহীন আলোচনার পরিবর্তে বাস্তবভিত্তিক একটি পথ দেখায়। গাজা যখন পুনর্গঠিত হবে, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাবমুক্ত হবে, তখন ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা বুঝবে—সহাবস্থান ধ্বংসের চেয়ে বেশি লাভজনক। এই সাফল্য কোনো হোয়াইট হাউজের আনুষ্ঠানিক চুক্তিপত্র নয়, বরং বছরের পর বছর ধরে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ, পশ্চিম তীরে সহিংস ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের নিয়ন্ত্রণ, রকেট হামলার হুমকি হ্রাস এবং মানুষদের মধ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রতি ক্রমবর্ধমান বিশ্বাসের প্রতিফলন।
এই শান্তিচুক্তি ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগমূলক ও বাস্তববাদী কূটনীতির এক বড় সাফল্য। মিশরের শার্ম আল-শেখে উভয় পক্ষ যখন আলোচনায় ব্যস্ত ছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতাকারীরা চাপ প্রয়োগ করছিলেন। যদিও সব বিবরণ প্রকাশ পায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, হামাস অবশিষ্ট ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, বিনিময়ে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেবে, মানবিক সহায়তা প্রবাহিত হবে এবং ইসরায়েলি সেনারা গাজার প্রধান শহরগুলো থেকে আংশিকভাবে সরে যাবে।
ট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরবর্তী ধাপে হামাস-বিহীন একটি সরকার গাজা পুনর্গঠন করবে, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী নিরাপত্তা দেবে, আর ট্রাম্প নিজে তদারকি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকবেন যতদিন না ফিলিস্তিনিরা পূর্ণ দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয়। চূড়ান্ত লক্ষ্য—ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মধ্যে চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা।
তবে চ্যালেঞ্জও বিশাল। হামাসের নিরস্ত্রীকরণসহ নানা বিষয়ে উভয় পক্ষের মতভেদ রয়ে গেছে। গাজা প্রায় ৭৮ শতাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় পুনর্গঠন কঠিন হবে। সবচেয়ে বড় বাধা হলো—ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শান্তির প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যাওয়া।
অসলো চুক্তির তিন দশক পর এবং ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর অধিকাংশ ইসরায়েলি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ঘৃণার এক ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। ২০১২ সালে যেখানে ৬১ শতাংশ ইসরায়েলি দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করেছিল, এখন তা নেমে এসেছে মাত্র এক-চতুর্থাংশে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিদের বড় অংশ ইসরায়েলকে দখলদার ও দমনমূলক রাষ্ট্র হিসেবে দেখে। মে মাসের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ শতাংশ ফিলিস্তিনি ৭ অক্টোবরের হামলাকে সমর্থন করেছে এবং ৮৭ শতাংশ হামাসের নৃশংসতা অস্বীকার করেছে।
তবু আশার আলো রয়েছে। যুদ্ধের অবসান দুই পক্ষেই নেতৃত্ব পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিতে পারে। ইসরায়েলে এক বছরের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে, যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান ঘটাতে পারে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পরিস্থিতি অনুকূল। বিশ্ব এখন শান্তির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। ট্রাম্প, যিনি ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে দ্বিধা করেন না, এই মুহূর্তে একটি প্রভাবশালী মধ্যস্থতাকারী। ইরান ও তার প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর দুর্বল অবস্থানও অঞ্চলে স্থিতিশীলতার সুযোগ বাড়িয়েছে। উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলো গাজার পুনর্গঠন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক সহায়তা দিতে রাজি—এটি বিশাল ইতিবাচক পদক্ষেপ।
তবে উভয় পক্ষের উগ্র মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করতে বাইরের শক্তিদের সক্রিয় থাকতে হবে। ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ রোধ, ফিলিস্তিনি প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতা দমন করা জরুরি। অন্যদিকে, আরব রাষ্ট্রগুলোকে ফিলিস্তিনিদের অহিংসার পথে আনতে ও প্রশাসনিক সংস্কার ত্বরান্বিত করতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য হতে পারে একটি নতুন আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো—যেখানে ইসরায়েল ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা গভীরতর হবে, ২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তির ভিত্তিতে। এটি সিরিয়া ও লেবাননের সঙ্গেও নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে, যারা ইরানের প্রভাব থেকে ক্রমে মুক্ত হচ্ছে।
সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হলো গাজা। বিশ্ব দেখবে, ইসরায়েল কি সত্যিই আন্তর্জাতিক সহায়তায় গাজার নতুন প্রশাসন গঠনে রাজি হয়, এবং গাজার ফিলিস্তিনিরা কি আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সশস্ত্রগোষ্ঠীমুক্ত শাসন দেখাতে পারে।
ট্রাম্প যেভাবে যুদ্ধবিরতি আনতে সক্ষম হয়েছেন—চাপ, তাগিদ ও চরম বাস্তববোধে ভর করে—সেই কৌশল দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় যথেষ্ট নাও হতে পারে। তবুও, এক অবিরাম রক্তপাতের অঞ্চলে এটি এক বিরল মুহূর্ত, একটি ক্ষীণ হলেও বাস্তব সম্ভাবনা, নতুন সূচনার।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এমএসএম
টাইমলাইন
- ০৮:২২ এএম, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ মিশরে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গাজা শান্তিচুক্তিতে সই করলেন ট্রাম্প
- ০২:১২ পিএম, ১২ অক্টোবর ২০২৫ শান্তি প্রস্তাব মানলেও অস্ত্র জমা দেবে না হামাস
- ০৬:৪৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যে ৬ নেতাকে মুক্তি দেবে না ইসরায়েল
- ০৫:৫৮ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫ যুদ্ধবিরতি কার্যক্রমে টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্ব মানবে না হামাস
- ০৩:৫৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫ ইসরায়েল কেন বারঘুতিকে ছাড়তে ভয় পায়?
- ০১:৫৩ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫ ঝুঁকি নিয়ে ট্রাম্পের কাঁধেই হাত রাখলো হামাস, কারণ কী?
- ০৮:৫৪ এএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার থেকে ইসরায়েলি বন্দিরা মুক্তি পাবে: ট্রাম্প
- ০৬:৫৬ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫ উত্তর গাজায় ফিরতে শুরু করেছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা
- ০৪:৪৪ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫ গাজায় যুদ্ধবিরতি আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয়েছে : আইডিএফ
- ১২:২২ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫ হামাস কি অস্ত্র সমর্পণ করবে?
- ১১:৪২ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর
- ১১:২৮ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫ যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে মার্কিন সেনা মোতায়েন নিয়ে যা জানা গেলো
- ১০:১৮ এএম, ১০ অক্টোবর ২০২৫ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির অনুমোদন করলো ইসরায়েল সরকার
- ০৯:২৩ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ যুদ্ধবিরতি চুক্তি: মধ্যপ্রাচ্যে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা
- ০৮:৪৬ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ২ হাজার ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিলেও বারঘুতিকে ছাড়বে না ইসরায়েল
- ০৮:০২ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো স্পেন
- ০৫:৪৭ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল দেওয়ার আহ্বান ইসরায়েলের বিরোধী দলনেতার
- ০৫:৩৮ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ গাজায় স্বাস্থ্যসেবা বাড়াতে প্রস্তুত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
- ০৪:১৪ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে ৫৫ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু
- ০৪:১১ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ জিম্মি উদ্ধারের পর হামাসকে ধ্বংস করতেই হবে: ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী
- ০৪:০৪ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যা বলছেন বিশ্ব নেতারা
- ০২:০৪ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ যুদ্ধবিরতির খবরে গাজায় আনন্দ-শঙ্কার মিশ্র প্রতিক্রিয়া
- ০১:৩৪ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ গাজা চুক্তির আওতায় মুক্তি পাবে প্রায় ২০০০ ফিলিস্তিনি বন্দি
- ১২:৪২ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের পর গাজা ‘পুনর্নির্মাণ হবে’: ট্রাম্প
- ১২:০৭ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ হামাসকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে: ইসরায়েলি দূত
- ১১:৪১ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ গাজার জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনাই সেরা : রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- ১১:১২ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ চুক্তির পরেও ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় না ফিরতে ইসরায়েলের সতর্কতা
- ১০:৪৬ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্যেও গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
- ১০:১২ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
- ০৯:৫০ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ গাজা চুক্তি ‘বিশ্বের জন্য একটি দুর্দান্ত দিন’: ট্রাম্প
- ০৮:৫৫ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০২৫ প্রথম পর্যায়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইসরায়েল-হামাসের স্বাক্ষর