অজিত দোভালের বক্তব্য ভাইরাল
দেওবন্দিদের দিয়ে তালেবান মোকাবিলার ‘গোপন কৌশল’ ভারতের
দেওবন্দ মাদরাসায় আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংবর্ধনা/ ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
দেওবন্দিদের দিয়ে তালেবান মোকাবিলায় ভারতের ‘গোপন কৌশল’ নিয়ে দেশটির জাতীয় উপদেষ্টা অজিত দোভালের একটি পুরোনো বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হওয়ার কয়েক মাস আগে, ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তামিলনাড়ুর শাস্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত দশম ‘ননি পালকিওয়ালা মেমোরিয়াল লেকচার’-এ ওই বক্তব্য রাখেন তিনি।
সেখানে অজিত দোভাল বলেন, আমরা তালেবানকে আমাদের মতো করে মোকাবিলা করবো। তালেবান দেওবন্দি আলেমদের কথা বেশি শুনবে। আজকের দিনে আফগানিস্তানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেশ ভারত। আমি বলতে চাই, বিশ্বের সব দেশের মধ্যে আফগানদের কাছে ভারতীয়রাই সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধার ও ভালোবাসার পাত্র। আমরা তাদের যেভাবে মোকাবিলা করা দরকার, সেভাবেই করব। আমাদের পাকিস্তানের প্রয়োজন নেই। পাকিস্তানকে তালেবান সমস্যায় নিজেই রক্তাক্ত হতে দাও।
আরও পড়ুন>>
পাকিস্তানের হাত ছেড়ে আফগানিস্তান কেন ভারতমুখী হলো?
ইসলামী কঠোর ‘বিধান’ থেকে ‘নমনীয়’ কূটনীতি, যেমন চলছে তালেবানের পররাষ্ট্রনীতি
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সংঘাতে মধ্যস্থতায় নামছেন ট্রাম্প
তিনি বলেন, কীভাবে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে আলাদা করবে? কীভাবে তাদের দমিয়ে রাখা যায়? তিনটি জিনিস বঞ্চিত করলেই তারা টিকতে পারবে না। অর্থাৎ তাদের ‘অক্সিজেন’ কেটে দিতে হবে। তাদের অস্ত্র, অর্থ ও জনবল—এই তিনটি পথ বন্ধ করে দিতে হবে।
‘যদি তাদের বাজেট হয় ১ হাজার ২০০ কোটি, তাহলে তার দেড়গুণ অর্থাৎ ১ হাজার ৮০০ কোটিতে তাদের প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ, তাদের অনেকেই অর্থের বিনিময়ে লড়ছে—তারা ভাড়াটে যোদ্ধা। ভাবছো তারা নাকি কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে লড়ছে? মোটেও না। তারা বেকার, বিভ্রান্ত, কিংবা কেউ তাদের ভুল পথে ঠেলে দিয়েছে।
তাই তাদের মোকাবিলায় গোপন উপায়ে আর্থিক প্রতিযোগিতাই যথেষ্ট। তারা যদি মাদক থেকে অর্থ উপার্জন করে, আমরা জাল মুদ্রা বা অর্থনৈতিক কৌশল দিয়ে তা প্রতিহত করতে পারি। ভারত বড় দেশ, বড় অর্থনীতি—আমরা টাকায় টাকায় পাল্লা দেবো। তাদের অস্ত্রের উৎস বন্ধ করবো, তাদের নতুন যোদ্ধা সংগ্রহ বন্ধ করবো
এটাই সবচেয়ে জরুরি। এজন্য মুসলিম তরুণদের মধ্যে কাজ করতে হবে—আর তা করতে হবে মুসলিম সংগঠনগুলোর মাধ্যমে।’
দেওবন্দে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা
এদিকে, ভারত সফরকালে গত শনিবার ঐতিহাসিক দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় গিয়েছিলেন আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওলানা আমির খান মুত্তাকি। সেখানে প্রতিষ্ঠানটি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাদিস শিক্ষাদানের অনুমতিপত্র ‘সনদ’ গ্রহণ করেন তিনি। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর এই প্রথম তাদের কোনো জ্যেষ্ঠ নেতা দেওবন্দে গেলেন।
শনিবার সকালে দিল্লি থেকে দেওবন্দে পৌঁছালে মুত্তাকিকে স্বাগত জানান মাদরাসার প্রধান মাওলানা মুফতি আবুল কাসেম নোমানী ও ১৫ সদস্যের আলেম প্রতিনিধিদল। ছাত্র ও শিক্ষকরা ফুল ছিটিয়ে আফগান মন্ত্রীর আগমনকে বরণ করেন এবং অনেকেই তার সঙ্গে ছবি তুলতে যান।
আরও পড়ুন>>
ভারতের দেওবন্দ থেকে ‘সনদ’ পেলেন আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতে আফগান মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিক নেই কেন?
আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে ভারত
মাদরাসার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে তিনি মৌলানা নোমানীর নেতৃত্বে ‘দারসুল হাদিস’ নামে একটি ধর্মীয় আলোচনায় অংশ নেন। পরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে হাদিস শিক্ষাদানের অনুমতি দেওয়া হয়—যা এক বিরল সম্মান। এখন থেকে তিনি নিজের নামের সঙ্গে ‘কাসেমী’ উপাধি যুক্ত করতে পারবেন।
তালেবান নেতার আগমন উপলক্ষে দীর্ঘদিনের প্রথা ভেঙে দারুল উলুম দেওবন্দ শনিবার একদিনের জন্য সব শিক্ষাকার্যক্রম স্থগিত রাখে, যা প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে নজিরবিহীন।
জমিয়ত উলেমায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানী এ সফরকে ‘নিজ ঘরে ফেরা’র মতো বলে মন্তব্য করেন। মুত্তাকি তার বক্তব্যে দেওবন্দ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এমন অভ্যর্থনা ও ভালোবাসার জন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আশা করি ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্ক আরও এগিয়ে যাবে।’
১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দারুল উলুম দিওবন্দ তালেবানদের আদর্শিক ভিত্তির মূল কেন্দ্র। যদিও অনেক তালেবান নেতা পাকিস্তানের দারুল উলুম হাক্কানিয়ায় পড়াশোনা করেছেন, যা দেওবন্দের মডেলে প্রতিষ্ঠিত—তবু মুত্তাকির এই সফর ভারতের মূল দেওবন্দি কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, দারুল উলুম দেওবন্দ
কেএএ/