ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ নির্দেশ ট্রাম্পের
ভেনেজুয়েলায় যাওয়া-আসা করা নিষেধাজ্ঞাভুক্ত সব তেল ট্যাংকারের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই নির্দেশ দেন।
পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, মাদুরো সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ চুরি করেছে এবং ‘সন্ত্রাসবাদ, মাদক পাচার ও মানব পাচারের’ সঙ্গে জড়িত।
ট্রাম্প লেখেন, এই কারণে আজ আমি ভেনেজুয়েলায় যাওয়া ও সেখান থেকে বের হওয়া সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারের ওপর সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধের নির্দেশ দিচ্ছি।
এই ঘোষণার এক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে একটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করে। এ ঘটনায় ভেনেজুয়েলা সরকার এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘বিকৃত ও ঘৃণ্য হুমকি’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ট্রাম্প তার পোস্টে আরও দাবি করেন, ভেনেজুয়েলা বর্তমানে ‘দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নৌবহর দ্বারা সম্পূর্ণভাবে ঘেরা’। তিনি বলেন, এই নৌবহর আরও বড় হবে এবং ‘এমন কিছু হবে, যা তারা আগে কখনো দেখেনি’।
মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে চুরি করা তেল ব্যবহার করে ‘মাদক সন্ত্রাসবাদ, মানব পাচার, হত্যা ও অপহরণে’ অর্থ জোগানোর অভিযোগও তোলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগ করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী ফেন্টানিলসহ অবৈধ মাদক বহনের অভিযোগে নৌযানে হামলা চালিয়ে অন্তত ৯০ জনকে হত্যা করেছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজও মোতায়েন করেছে। অন্যদিকে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণিত তেল মজুদের অন্যতম অধিকারী ভেনেজুয়েলা পাল্টা অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটন তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের চেষ্টা করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন- দুই প্রশাসনই বছরের পর বছর মাদুরো সরকারের বিরোধিতা করে আসছে ও কঠোর নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চাপ প্রয়োগ করছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র আরও ছয়টি জাহাজের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যেগুলো ভেনেজুয়েলার তেল বহন করছিল বলে দাবি করা হয়। একই সঙ্গে মাদুরো প্রেসিডেন্টের কয়েকজন আত্মীয় ও তার ‘অবৈধ শাসনের’ সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এর এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, তারা ভেনেজুয়েলার উপকূল থেকে ‘স্কিপার’ নামের একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। হোয়াইট হাউসের দাবি, জাহাজটি ‘অবৈধ তেল পরিবহনের’ সঙ্গে জড়িত ছিল এবং সেটিকে একটি মার্কিন বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে।
এ ঘটনায় ভেনেজুয়েলার সরকার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। প্রেসিডেন্ট মাদুরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাহাজটির নাবিকদের ‘অপহরণ’ করেছে এবং জাহাজটি ‘চুরি’ করেছে।
ট্যাংকার জব্দের কয়েক দিন আগে থেকেই ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক উপস্থিতি বাড়ায়। অভিযানে হাজার হাজার সেনা এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড মোতায়েন করা হয়, যা ভেনেজুয়েলার আঘাতের পরিসরের মধ্যেই ছিল।
এদিকে, টেক্সাসের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান জোয়াকিন কাস্ত্রো বলেছেন, ট্রাম্পের এই ‘নৌ অবরোধ নিঃসন্দেহে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ভেনেজুয়েলার সঙ্গে শত্রুতা বন্ধের নির্দেশ দিতে একটি প্রস্তাবের ওপর ভোট দেবেন।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ