যেভাবে তুরস্কের সরকারি বৃত্তি পেলেন মাইনুল

আনিসুল ইসলাম নাঈম
আনিসুল ইসলাম নাঈম আনিসুল ইসলাম নাঈম , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৫৯ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাইনুল ইসলাম লক্ষ্মীপুরেরর রায়পুর উপজেলার সন্তান। তিনি হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আর এম কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম সম্পন্ন করেন। এরপর বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। স্বপ্ন থেকে চেষ্টা চালিয়ে যান। দিনকয়েক আগে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। তিনি তুরস্কের ‌‘তুর্কিয়ে বুর্সলারি বৃত্তি’ পেয়েছেন। তুরস্কের কুকরোভা ইউনিভার্সিটিতে স্নাতক প্রোগ্রামে পড়বেন পলিটিকাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সে।

সম্প্রতি তার তুরস্কে সরকারি বৃত্তি পাওয়ার গল্প ও নতুনদের জন্য পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

জাগো নিউজ: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা সম্পর্কে বলুন—
মাইনুল ইসলাম: লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার চরআবাবিল গ্রামে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই নদী-প্রকৃতি ঘেরা গ্রামীণ জীবনে বড় হয়েছি। শৈশবটা কেটেছে খেলাধুলা, পড়াশোনা আর স্বপ্নের মিশেলে। ছোটবেলায় শিক্ষক ও লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু পরে একসময় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন জাগে। পরিবার ছিল সাধারণ। তবে শিক্ষার প্রতি উৎসাহ আর নৈতিকতার ভিত্তি পরিবার থেকেই পেয়েছি। আমি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছি স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে। পরে হায়দরগঞ্জ তাহেরিয়া আর এম কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম সম্পন্ন করি।

জাগো নিউজ: ছাত্রজীবনে কী ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে পারদর্শী ছিলেন?
মাইনুল ইসলাম: আমি সহশিক্ষা কার্যক্রমে সব সময় সক্রিয় ছিলাম। বিতর্ক, সামাজিক কার্যক্রম, স্বেচ্ছাসেবা, কর্মশালা ও সাংগঠনিক কাজে অংশগ্রহণ করেছি। পাশাপাশি পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমেও যুক্ত ছিলাম। যার ধারাবাহিকতায় শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে ২০২৩ সালে নেদারল্যান্ডসের ‘আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার’র জন্য মনোনীত হয়েছি। পাশাপাশি মেধাবী কিশোর ক্যাটাগরিতে আরটিভি এসএমসি মনিমিক্স প্রেরণ পদক ২০২৩ অর্জন করেছি।

জাগো নিউজ: তুর্কিয়ে বুর্সলারি বৃত্তি নিয়ে পড়বেন—এমন স্বপ্ন দেখলেন কখন থেকে?
মাইনুল ইসলাম: উচ্চশিক্ষা বিদেশে করার স্বপ্ন আমার মাধ্যমিক শেষ করার পর থেকেই ছিল। তবে তুরস্কেই পড়বো এরকম কোনো চিন্তা ছিল না। আমার প্রয়োজন ছিল একটি ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ। যার ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। আমার প্রথম আবেদন ছিল তুর্কিয়ে বুর্সলারি স্কলারশিপে। তারপর সেখান থেকে ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপে অফার পেয়েছি।

জাগো নিউজ: বৃত্তিতে কুকরোভা বিশ্ববিদ্যালয়ে অফারের গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছিলেন?
মাইনুল ইসলাম: আমি প্রথমেই প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংগ্রহ করি—শিক্ষাগত সনদ, মার্কশিট, পাসপোর্ট, শিক্ষকদের রিকোমেন্ডেশন লেটার, লেটার অব ইন্টেন্ট এবং আমার সব সহশিক্ষা কার্যক্রমের সার্টিফিকেট। আবেদন করার পরপরই ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিই। ইন্টারভিউতে আমার পড়াশোনার লক্ষ্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, তুরস্ক কেন চয়েজ করেছি, আমার সাবজেক্টে পড়াশোনার পর কী করবো, পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসবো কি না ও নেতৃত্বগুণ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সব ধাপ সফলভাবে শেষ করার পর অফার লেটার পাই। সেটিই আমার জীবনের অর্জনগুলোর একটি।

জাগো নিউজ: তুরস্কের সরকারি বৃত্তি পেয়ে পড়ার সুযোগ পেলেন, অনুভূতি কেমন ছিল?
মাইনুল ইসলাম: এটি আমার জীবনের অন্যতম একটি আনন্দের মুহূর্ত। মনে হয়েছে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হলো আমার জন্য। পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের চোখে আনন্দ দেখে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছি।

জাগো নিউজ: তুর্কিয়ে বুর্সলারি বৃত্তিতে পড়তে কীভাবে আবেদন করতে হয়?
মাইনুল ইসলাম: অনলাইনে তুর্কিয়ে বুর্সলারি স্কলারশিপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হয়। প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ, ডকুমেন্ট আপলোড এবং সঠিকভাবে ফর্ম সাবমিট করলেই আবেদন সম্পন্ন হয়। আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে ভালো একটি রেজাল্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া পূর্ববর্তী শিক্ষার সার্টিফিকেট ও মার্কশিট, পাসপোর্ট, সুপারিশপত্র, উদ্দেশ্য বিবৃতি, ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণ (যদি থাকে), ছবি ও শিক্ষকদের রিকোমেন্ডেশন লেটার প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া সক্রিয় সহশিক্ষা কার্যক্রম থাকলে অন্যদের থেকে অনেকগুণ এগিয়ে থাকা যায়।

জাগো নিউজ: এ বৃত্তিতে কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে?
মাইনুল ইসলাম: পূর্ণ টিউশন ফি, মাসিক ভাতা, আবাসন, স্বাস্থ্যবিমা, ফ্লাইট টিকিট ও ভাষাশিক্ষা কোর্সসহ নানা সুবিধা দেওয়া হয়। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজের সুযোগ সীমিত। মূল লক্ষ্য থাকে পড়াশোনা ও গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া।

জাগো নিউজ: নতুন যারা এ বৃত্তিতে পড়তে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
মাইনুল ইসলাম: নতুনদের বলবো—স্বপ্ন দেখুন কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা, কঠোর পরিশ্রম আর নিয়মিত প্রস্তুতি নিন। ইংরেজি ও অন্যান্য দক্ষতা উন্নত করুন। আবেদনপত্রে সত্যনিষ্ঠভাবে নিজের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য প্রকাশ করুন। ইনশাআল্লাহ, লেগে থাকলে অবশ্যই সফল হবেন।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।