ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

পান্থকুঞ্জ অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজধানীর কারওয়ান বাজার সংলগ্ন এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক, পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পান্থকুঞ্জ পার্ক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, লেখক ও গবেষকদের দায়ের করা টিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।

এর আগে রাজধানীর সোনারগাঁও সংলগ্ন পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন পরিবেশকর্মী আমিরুল রাজিব, অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ও অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিনসহ ৯ জন। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ রিট করা হয়। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট।

আইনজীবী জ্যেতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি পান্থকুঞ্জে নতুন যন্ত্রপাতি এনে জড়ো করা হয়েছে। নতুনভাবে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগে সংক্ষুব্ধ হয়ে রিট আবেদনটি করা হয়। প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন।’

এই আইনজীবী জানান, ২০১৫ সালে বাংলদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিটে হাইকোর্ট পান্থকুঞ্জ নিয়ে আদেশ দিয়েছিলেন। পান্থকুঞ্জকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তখন সেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের র‌্যাম্প নামানোর কাজ চলছিল। হাইকোর্ট সেটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। ওই অদেশের বিরুদ্ধে সরকার বা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ কোনো আপিল করেনি। ফলে ২০১৫ সালের সেই আদেশ বা রায় এখনো কার্যকর রয়েছে।

আইনজীবী জানান, রাজধানীর পান্থকুঞ্জ উদ্যান দিয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে পান্থকুঞ্জ উদ্যান জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (দ্রুতগতির উড়ালসড়ক) প্রকল্পের এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজের জন্য গাছ কাটা শুরু হলে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর থেকে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন। টানা ১৬৮ দিন সেখানে অবস্থানসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। সংগঠনটির ডাকে আন্দোলনে যোগ দেন দেশের লেখক, শিক্ষক, গবেষক ও পরিবেশকর্মীরা। লাগাতার ১১ দিন কর্মসূচি পালনের পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সেখানে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এরপর এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ বাতিলের দাবি জানিয়ে গত ৬ মে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন। চিঠিতে এই সংযোগ সড়ককে ‘রাজধানীর পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল ধ্বংসকারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

দাবি জানানো হয়, এই সংযোগ সড়ক নকশা প্রণয়নকারী, পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহির আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। এক পর্যায়ে গত ৩০ মে ‘পান্থকুঞ্জ মোকদ্দমা: জনগণ বনাম অন্তর্বর্তী সরকার’ শীর্ষক গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন।

শুনানি শেষে পান্থকুঞ্জ উদ্যান জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত এবং সেখানে গাছরক্ষা আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে রায় দেন গণ-আদালত। একই সঙ্গে পান্থকুঞ্জে জনসাধারণের অবাধ প্রবেশ ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গণস্বার্থ বিষয়ে এটিই প্রথম গণ-আদালত। এরপরও প্রকল্পের কাজ বন্ধ না হওয়ায় হাইকোর্ট রিট করেন আন্দোলন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রিটকারীরা হলেন- বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, সামিনা লুৎফা, লেখক, গবেষক ও পরিবেশকর্মী পাভেল পার্থ, অধ্যাপক আদিল পার্থ, সৈয়দ মাহবুবুল আলম, লেখক ফিরোজ আহমেদ, নাইম-উল হাসান।

রিটে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর (রাজউক) চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।

তথ্য অধিকার আইন অনুসারে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে গত ৯ জানুয়ারি পরবিশে অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জে চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে পরিবেশ ছাড়পত্র আছে কি না, সেই তথ্য চাওয়া হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর তথ্য দিয়ে জানায়, ২০২২ সালের ৩ এপ্রিল এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটিকে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়, যার মেয়াদ ছিল ২০২৩ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরপর প্রকল্পের অনুকূলে ছাড়পত্র নবায়ন করা হয়নি। তার মানে হচ্ছে পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।

এফএইচ/বিএ/এমএস