মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন অর্থাৎ আমৃত্যু কারাবাস
‘বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে সকল আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেবেন তাদের ক্ষেত্রে আমৃত্যু কারাবাস প্রযোজ্য হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, বিচারিক আদালতে যেসব রায়ের মৃত্যুদণ্ড (ফাঁসি) কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া হবে শুধু তাদের আমৃত্যু কারাবাস প্রযোজ্য হবে। তবে, নিম্ন আদালতে অন্যান্য যে সকল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে সেগুলোর ক্ষেত্রে আইনে যা আছে তা বলবৎ থাকবে।
‘যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত সকল আসামির ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের ঘোষিত এ রায় প্রযোজ্য নয়।’
মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে যদি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগ যদি তা করেন তবে তার ইফেক্টটা হবে আমৃত্যু কারাদণ্ড অর্থাৎ তাকে আমৃত্যু কারাগারেই থাকতে হবে।’
‘আপিল বিভাগের রায় অ্যাপ্লিকেবল হবে। যার নাকি জীবন চলে যেত ফাঁসিতে, তাকে যদি যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হয়, এরপর তিনি বেরিয়ে চলে যাবেন- এটাতো হয় না। আইন ব্যাখ্যা করেই এটা করা হয়েছে’ বলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।
দণ্ডবিধি ৫৭ ধারায় যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর কারাদণ্ড। এটি বতিল বা সাংঘর্ষিক হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘দণ্ডবিধির ৫৭ ধারার সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক হবে না। এগুলো আপিল বিভাগ ৫৭ ও অন্যান্য ধারা ব্যাখ্যা করেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। নরমাল ক্ষেত্রে রায়টা বিস্তারিতভাবে না পড়ে বলা যায় না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আইনের সংশোধন দরকার হবে না।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগ যে রায়টি দিয়েছেন এবং যেটি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ পেয়েছে; বিষয়টি হলো, দু’জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড ছিল। তা থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত হলো, তাদেরকে আমৃত্যু কারাগারেই থাকতে হবে। যার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ছিল সেটাকে কমিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া হয়; এ যাবজ্জীবনের অর্থ হলো আমৃত্যু কারাদণ্ড।’
তিনি বলেন, ‘এ আসামিদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের যে ক্ষমতা, জেলকোডের ক্ষমতা; এগুলো অ্যাপ্লিকেবল হবে না, কমানো যাবে না। শুধু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা উনি এক্সারসাইজ করতে পারবেন। উনি কমাতেও পারবেন, মাফও করতে পারবেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ রায় প্রকাশের ফলে সবার মনে যে প্রশ্ন জেগেছে, এটা সর্বক্ষেত্রে হবে কিনা। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই লোকের সাজা যাবজ্জীবনে রূপান্তরিত করা হয়েছে। যাবজ্জীবনে রূপান্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ বলে দিয়েছেন, আমৃত্যু ধরতে হবে তার সাজা। এক্ষেত্রে জেলকোড বা অন্যান্যভাবে তার সাজা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। এটা যে মামলার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে, বিস্তারিত রায় পড়ে যদি দেখা যায় তার ইন্ডিকেশনটা (ইঙ্গিত) যদি অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এপ্লিকেবল হবে। এক্ষেত্রে পুরো রায়টা না পড়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব না।’
অপরদিকে, একই বিষয়ে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় যেটা বেরিয়েছে সেটা যদি আমি না পড়ে একটা কথা বলি, তাহলে সেটা অন্য রকম হয়ে যাবে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপিটা যদি আজ পাই, সেটা পড়ে কয়েকদিনের মধ্যে এ বিষয়ে কথা বলব।’
প্রসঙ্গত, ২৪ এপ্রিল আপিল বিভাগ এক রায়ে বলেন, ‘যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড। কোনো মামলায় আপিল বিভাগ বা হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ডের সাজা পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন তবে সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কারাভোগ করতে হবে। আদালতের এ রায়ের কপি পাওয়ার পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অপরাপর আসামির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব ও কারা মহাপরিদর্শককে বলা হয়।’
১৫ বছর আগে সাভারে সংঘটিত জামান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ কথা বলা হয়।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জামান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আবেদন খারিজ করে রায় দেন আপিল বিভাগ। এ রায় লেখার পর ২৪ এপ্রিল তা প্রকাশিত হয়।
এফএইচ/এমএআর/এমএস
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - আইন-আদালত
- ১ ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ময়মনসিংহে তিন হত্যার প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ
- ২ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি
- ৩ নোয়াখালী-৫: ফখরুলের মনোনয়ন প্রত্যাহারে বিএনপি মহাসচিবকে নোটিশ
- ৪ দুই জনের বিরুদ্ধে মাহমুদুর রহমানের মামলার আবেদনে যা বলা হয়েছে
- ৫ মান্নার আবেদনের শুনানি চেম্বার আদালতে সোমবার পর্যন্ত মুলতবি