‘সেলফ্ কেয়ার’ মানেই কি বিলাসিতা

একজন সাধারণ বাঙালি আসলে নিজের যত্ন নেওয়া বা সেলফ্ কেয়ার বলতে কী বোঝেন? সিনেমা-নাটকে সেলফ্ কেয়ার বোঝাতে যে বিলাসিতাগুলো দেখানো হয়, সবার বাস্তবতা কি তেমন?
উত্তর হচ্ছে, না। নিজের মন ভালো করতে হঠাৎ করে বিউটি স্পা নিতে চলে যাওয়া, পাহাড়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়া, বা উচ্চমানের কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে চলে যাওয়ার মতো অবস্থা সবার থাকে না। এগুলো করতে পারলে ভালো নিশ্চয় লাগবে। কিন্তু যার বিলাসিতার সুযোগ নেই, তার কি নিজের যত্ন নেওয়া লাগবেনা?
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
মূলত নিজের যত্ন নেওয়া দৈনন্দিন জীবনধারার একটি অপরিহার্য অংশ। এটি কোনো বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা। আপনার প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজে লুকিয়ে আছে নিজের যত্ন নেওয়ার মূহুর্তগুলো। তবে সেসব মূহুর্তকে গুরুত্ব দিতে মনে থাকেনা আমাদের অনেকেরই।
আমরা প্রতিদিন পরিবার, অফিসের কাজ, সমাজের চাপে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, নিজের দিকে তাকানোর সময় হয়ে ওঠে না। অথচ, নিজের যত্ন নেওয়া একটি সুস্থ জীবনধারার অপরিহার্য অংশ। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন এর মতে, নিয়মিত সেলফ কেয়ার মানসিক চাপ কমাতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সামগ্রিকভাগে জীবনকে সুখকর করতে সহায়তা করে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
তাই বাংলাদেশের মতো ব্যস্ত ও চাপপূর্ণ সমাজে, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা এখনও কম, সেখানে সেলফ কেয়ারের গুরুত্ব আরও বেশি।
সেলফ কেয়ার মানে কেবল স্পা করা বা শপিং নয়। এর প্রকৃত অর্থ হলো- নিজের শরীর, মন ও আবেগকে সচেতনভাবে গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু তেন গুরুত্ব দেওয়া এতো জরুরি?
বিজ্ঞাপন
আজ (২৪ জুলাই) আন্তর্জাতিক সেলফ কেয়ার দিবসে জেনে নিন এর গুরুত্ব -
১. মানসিক স্বাস্থ্য
২০১৮ সালে প্রকাশিত বিএমসি সাইকোলজি জার্নালে বলা হয়- নিয়মিত নিজের যত্ন নেওয়ার অভ্যাস উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমাতে সহায়তা করে। কিছুক্ষণের জন্য ফোন বন্ধ রাখা, এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসা, বা পছন্দের গান শোনা – এই ছোট ছোট জিনিসও মানসিক শান্তি আনে।
বিজ্ঞাপন
২. শারীরিক সুস্থতা
নিয়মিত ঘুম, পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, হালকা ব্যায়াম – এসবই নিজের যত্ন নেওয়ার অংশ। হার্ভার্ড হেলথ্ পাবলিশিংয়ের মতে, এ ধরনের অভ্যাস হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩. আত্মবিশ্বাস ও সম্পর্কের উন্নয়ন
বিজ্ঞাপন
যখন আপনি নিজেকে মূল্য দেন, তখন অন্যরাও আপনাকে সম্মান করে। এটি কর্মক্ষেত্র এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কীভাবে শুরু করবেন?
নিজের যত্ন শুরু করার জন্য কোনো বড় পরিকল্পনার দরকার নেই। আপনি ধীরে ধীরে কিছু ছোট অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন -
বিজ্ঞাপন
>> নিজের জন্য সময় বের করুন
প্রতিদিন ১৫–২০ মিনিট শুধুমাত্র নিজের জন্য রাখুন। এই সময়ে আপনি বই পড়তে পারেন, হাঁটতে পারেন, কিছুই ইচ্ছা না করলে নীরবে বসেও থাকতে পারেন।
>> ঘুমের সময় ঠিক করুন
বিজ্ঞাপন
রাতে অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমই হলো শরীর ও মনের মেরামতের সময়। তাই ঘুমের সঙ্গে সমঝোতা নয়।
>> পরিমিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করুন
দিনে কয়েক ঘণ্টা মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকলে মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ্-এর মতে, অতিরিক্ত ডিজিটাল তথ্যের চাপ মানসিক ক্লান্তি বাড়ায়।
>> না বলতে শিখুন
সব অনুরোধে হ্যাঁ বললে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন। নিজেকে সময় দিতে চাইলে মাঝে মাঝে ‘না’ বলাও জরুরি।
>> পছন্দের কিছু করুন
যা আপনাকে আনন্দ দেয়, যেমন - রান্না, সেলাই, বাগান করা বা সঙ্গীত, সেগুলোতে সময় দিন। এগুলো স্নায়ুকে শান্ত করে।
নিজের যত্ন নেওয়া মানে স্বার্থপর হওয়া নয়, বরং সচেতন হওয়া। আপনি ভালো থাকলে আপনার পরিবার, কাজ, সমাজ – সব কিছুই ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারবেন। নিজের যত্ন নেওয়া শুরু করুন ছোট পদক্ষেপ দিয়ে, এতেই বড় পরিবর্তন আসবে।
আপনি যেমন আপনার প্রিয়জনদের খেয়াল রাখেন, তেমন নিজের প্রতিও সেই মমতা দিন। কারণ, আপনি নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।
সূত্র: ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ্, বিএমসি সাইকোলজি জার্নাল, হার্ভার্ড হেলথ্ পাবলিশিং, আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন
এএমপি/জেআইএম
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন