ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

ভাঙা হাড় সহজে জোড়া লাগে না যে রোগ থাকলে

লাইফস্টাইল ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:১৪ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৫

বয়স বাড়া, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি-র অভাব– এসব কারণে অনেক সময় আমাদের হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এরকম হলে সামান্য চাপ লাগলে বা পড়ে গেলেই হাড় ভেঙে যায়, সহজে জোড়াও লাগে না আর।

হাড়ের এই অবস্থাকে বলে অস্টিওপোরোসিস। আজ (২০ অক্টিাবর) বিশ্ব অস্টিওপোরোসিস দিবস। এ দিবসটির দিনটির মূল উদ্দেশ্য হাড়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা। কারণ, কিছু সহজ পরিবর্তন ও নিয়ম মেনে চললেই হাড়কে দীর্ঘদিন মজবুত রাখা সম্ভব। এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন ডা. এম ইয়াছিন আলী

জাগো নিউজ: অস্টিওপোরোসিস কী?

ডা. এম ইয়াছিন আলী: ধরেন, ঘরে যদি একটি কাঠের দরজা লাগানো হয়। একসময় দেখা যায়, এটি দুর্বল হয়ে ঘুণে ধরে যায়। তেমনি আমাদের হাড়ের ঘনত্বও কমে যায়। এমন হলে বোন মিনারেল ডেনসিটি (বিএমডি) টেস্ট করে এটিকে স্কোর করা হয়।

হাড়ের ঘনত্ব মাইনাস ১ পর্যন্ত নরমাল। মাইনাস ২ পর্যন্ত বলা হয় অস্টিওপেনিয়া। হাড়ের ঘনত্বের স্কোর ২.৫ বা তার উপরে হলে একে অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ভঙ্গুরতা বলা হয়। এই রোগটিকে নীরব ঘাতক বলা হয়।

সাধারণত এই রোগের কোন উপসর্গ থাকেনা। যার কারণে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব দেই না। একসময় দেখা যায়, সামান্য পা পিছলে পড়ে গিয়েও হাড় ভেঙে যায়। নারীদের ক্ষেত্রে নিতম্বের হাড় ভাঙার প্রবণতা বেশী থাকে। নারীদের যখন মেনোপজ শুরু হয় বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়, তখন হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে থাকে। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে এটির উন্নতি বা কনভার্ট হয়। তাই সূর্যের আলোতে না গেলে এটি কনভার্ট হবেনা।

জাগো নিউজ: অস্টিওপোরোসিস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব কতটা লক্ষ্য করেন?

ডা. এম ইয়াছিন আলী: এই রোগ সম্পর্কে অনেক মানুষ জানেই না। এজন্য এটিকে নীরব ঘাতক বলা হয়। কোন দূর্ঘটনা বা পড়ে গিয়ে হাড় ভেঙে গেলে এক্স-রে করে দেখা যায় হাড়ের ঘনত্ব কমে গেছে। তখন আমরা বোন মিনারেল ডেনসিটি (বিএমডি) টেস্টের মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে জানতে পারি।

আরেকটা বিষয়, হাড় ভেঙে গেলে জোড়া লাগতে হয়। যাদের অস্টিওপোরোসিস রোগ রয়েছে এমনিতে তাদের হাড়ের ক্ষয় হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের হাড়ের জোড়া লাগানো খুব কষ্ট হয়ে যায়। তখন সেখানে যদি প্লাস্টার বা জোড়া লাগানো হয়, সহজে জোড়া লাগতে চায়না। এজন্য মানুষের মধ্যে এই রোগের সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

ভাঙা হাড় সহজে জোড়া লাগেনা যে রোগ থাকলে

এজন্য নারীদের ক্ষেত্রে বয়স চল্লিশের উপরে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর হলে বোন মিনারেল ডেনসিটি (বিএমডি) টেস্ট করতে হবে। নারীদের পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার পর তাদের হাড়ের ক্ষয়টা বেশি হয়। বাংলাদেশে গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছর। যারা বয়স্ক ব্যক্তি তাদের হাড় ভেঙে গেলে জোড়া লাগানো বা অপারেশন করারও সুযোগ নেই। একসময় তাদের পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। তাদের যেন পঙ্গুত্ব বরণ করতে না হয়, এজন্য এই দিবসকে ঘিরে মানুষের মধ্যে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেই।

জাগো নিউজ: কেন আমাদের হাড় ক্ষয় হয়?

ডা. এম ইয়াছিন আলী: আমাদের শরীরের হাড়ের গঠন শুরু হয় মায়ের গর্ভ থেকে। বাচ্চা জন্মের পর থেকে হাড়ের গঠন শুরু হয়। ধরেন, আমরা একটা বিল্ডিং তৈরি করব। এজন্য পিলার দিতে হবে। এরপর দেওয়াল গাঁথার কাজ শুরু হয়। হাড় আগে হয়, তারপর মাংসপেশি দিয়ে আবৃত হয়। এরপর হাত-পায়ের গঠন এবং স্পাইন তৈরি হয়।

দুই বছর থেকে আঠারো বছর বয়সে এসে হাড়ের গঠন পরিপূর্ণ হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ২২ বছর পর্যন্ত এটা চলতে থাকে। এরপর একটা স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। বাইশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত হাড়ের ক্ষয় বা গঠন তেমন হয়না। পঁয়ত্রিশ বা চল্লিশ পেরোলে আস্তে আস্তে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। স্পাইনে স্পন্ডিলাইসিস ও বিভিন্ন জয়েন্টে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়। তবে ক্ষয় রোগ এবং ভঙ্গুরতা রোগ ভিন্ন। হাড়ের ভেতর যখন ঘনত্ব কমে যায় তখন অস্টিওপোরোসিস হয়। এর প্রাথমিক অবস্থাকে বলা হয় অস্টিওপেনিয়া। পঞ্চাশোর্ধ নারী এবং ষাটোর্ধ্ব পুরুষের ক্ষেত্রে এই রোগ আক্রান্তের হার বেশী।

জাগো নিউজ: আধুনিক জীবনযাত্রার কোন অভ্যাসগুলো আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য নষ্ট করছে?

ডা. এম ইয়াছিন আলী: আধুনিক জীবনযাত্রায় অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য নষ্ট করছে। প্রতিনিয়ত ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড ও মুখরোচক খাবার খেয়ে থাকি। এসব খাবারে পুষ্টিগুণ নেই বললেই চলে। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ উপাদান এসব খাবারে নেই।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আমাদের শারীরিক কার্যক্রম কমে গেছে। আমরা আগে নিজ থেকেই কাজকর্ম করতাম। দোকান থেকে খাবার কিনে আনতাম। কিন্তু এখন অনলাইনে খাবার অর্ডার করছি। গাড়িতে চড়ে অফিস যাওয়া-আসা করছি। এভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রেই হচ্ছে।

একজন মানুষ যখন আধাঘন্টা ঘাম ঝরিয়ে হাঁটবে, এতে তার ব্লাড সার্কুলেশন সিস্টেম বাড়বে, হাড়ের মধ্যে পুষ্টি পৌঁছাবে। এই জায়গাতে আমাদের ঘাটতি দেখা যায়। একদিকে শারীরিক কাজকর্ম কমে যাওয়া এবং অন্যদিকে খাবারে পুষ্টিগুণ না পাওয়া। এতে অস্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

ভাঙা হাড় সহজে জোড়া লাগেনা যে রোগ থাকলে

জাগো নিউজ: হাড়কে শক্তিশালী রাখতে দৈনন্দিন জীবনে কী ধরনের ব্যায়াম করা জরুরি? এছাড়া কোন সহজলভ্য খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব?

ডা. এম ইয়াছিন আলী: একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন আধাঘণ্টা হাঁটলে, সাইকেল চালালে বা সাঁতার কাটলে তা হাড়ের জন্য ভালো ব্যায়াম হিসেবে কাজ করে। সপ্তাহে তিন দিন এমন ব্যায়াম যথেষ্ট। পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার — যেমন টকদই, ছোট মাছ, ডিমের সাদা অংশ, শাকসবজি ও হলুদ ফল রাখা দরকার। ভিটামিন-ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ায়; এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। ভিটামিন-ডি পেতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে অন্তত আধাঘণ্টা রোদে থাকা উচিত।

জাগো নিউজ: কখন একজন মানুষের হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করানো উচিত?

ডা. এম ইয়াছিন আলী: অস্টিওপোরোসিসকে নীরব ঘাতক বলা হয়, কারণ এটি ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের ক্ষতির করে থাকে। অস্টিওপোরোসিস হলে কোন ব্যাথা হয়না। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কোন উপসর্গই নেই। যখন পড়ে গিয়ে হাড় ভেঙে যায়, তখন বিএমডি টেস্ট করা হয়। টেস্টে দেখা যায়, হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। আবার কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শারীরিক দুর্বলতা থাকে, মাংসপেশিতে ব্যাথা থাকে। তবে এটা ম্যান্ডেটরি না। তাই পয়তাল্লিশ বছরের উপর নারী ও পঞ্চাশ বছরের উপর পুরুষের বছরে একবার এই পরীক্ষা করা উচিত।

জাগো নিউজ: তরুণ প্রজন্ম যারা এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করতে চায়, হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী হবে?

ডা. এম ইয়াছিন আলী: আজকের তরুণরাই একদিন বার্ধক্যে পৌঁছাবে — এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। তবে সচেতন থাকলে বয়স বাড়লেও হাড়কে সুস্থ রাখা সম্ভব। এজন্য নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করা, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, প্রতিদিন কিছুটা সময় সূর্যের আলোতে থাকা এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। নগরজীবনে সূর্যের আলো শরীরে না পড়ায় অনেকের শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি দেখা দেয়, ফলে ক্যালসিয়াম শোষণ ব্যাহত হয়। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুদের এ অভ্যাস শেখানো জরুরি।

আমাদের সমাজে হেলথ এডুকেশনের অভাব আছে। শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও এই ঘাটতি স্পষ্ট। অথচ স্বাস্থ্যশিক্ষা সম্পর্কে জানা থাকলে অস্টিওপোরোসিসসহ অনেক রোগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে জোর দিতে হবে।

ডাক্তার পরিচিতি: ডা. এম ইয়াছিন আলী
বাত-ব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল।

এএমপি/এএসএম

আরও পড়ুন