ফুসফুসের রোগ সিওপিডি কী? জানুন লক্ষণ
ফুসফুস আমাদের শরীরের প্রধান শ্বাসযন্ত্র। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ধুলাবালি, ধোঁয়া, দূষণ বা ধূমপানের সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসকষ্টের রোগটি তৈরি হয়, তার নাম সিওপিডি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ।
২০২১ সালের একটি রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সিওপিডি বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ।
সিওপিডি কী?
এটি মূলত ফুসফুসের একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এখানে ফুসফুসের বায়ুনালী সরু হয়ে যায়, ভেতরে প্রদাহ বাড়ে এবং বায়ুথলি তাদের স্থিতিস্থাপকতা হারায়।
ফলে দম নিতে সমস্যা হয় কারণ ফুসফুস পুরোপুরি বাতাস বের করতে পারে না। এতে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে এবং একসময় রোগী স্বাভাবিক কাজকর্মও করতে পারেন না।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
১. ধূমপায়ী বা যারা পরোক্ষ ধূমপানের ধোঁয়ায় থাকেন।
২. ইটভাটা, গার্মেন্টস, কন্সট্রাকশন বা ধুলাবালিতে ভরা পরিবেশে যারা কাজ করেন।
৩. রান্নায় কয়লা, কাঠ জাতীয় জ্বালানী ব্যবহার করা পরিবারের সদস্যরা।
৪. শৈশবে শ্বাসযন্ত্রের মারাত্মক কোনো সংক্রমণ হয়েছিল এমন ব্যক্তি।
৫. অ্যাজমা বা ফুসফুসের অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগেন এমন মানুষ।
৬. দূষিত বায়ুতে বসবাসকারীরা।
যেসব লক্ষণ দেখে সাবধান হবেন –
১. শ্বাসকষ্ট: হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা বা হালকা কাজেও দম ফুরিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হওয়া।
২. দীর্ঘমেয়াদি কাশি: তিন মাস বা তার বেশি সময় ধরে থাকা কাশি, বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বাড়ে – এমন কাশি থাকা।
৩. বেশি কফ বের হওয়া: হলুদ, সাদা বা ধূসর রঙের কফ প্রতিদিন বের হওয়া।
৪. ঘন ঘন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ: ফ্লু, সর্দি-কাশি বা নিউমোনিয়ায় বারবার আক্রান্ত হওয়া।
৫. বুকে চাপ লাগা: বুক ভারী লাগা বা টান টান অনুভূতি হওয়া।
৬. শারীরিক পরিশ্রমে দুর্বলতাধ: আগের মতো দৌড়, হাঁটা বা অন্য কাজ করতে না পারা।
লক্ষণ দেখলে কী করবেন?
শ্বাসকষ্ট বা দীর্ঘমেয়াদি কাশি উপেক্ষা করবেন না। এক বা একাধিক লক্ষণ একসঙ্গে দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকত রোগ নির্ণয়ের জন্য টেস্ট করতে দিতে পারেন।
সিওপিডি ধরা পড়লেও আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন। ধূমপান বন্ধ করা, দূষণ এড়িয়ে চলা এবং নিয়মিত ওষুধ খাওয়া — এগুলোই সিওপিডি নিয়ন্ত্রণে মূল হাতিয়ার।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন, এনএইচএস
এএমপি/এমএস