শিশু জাঙ্ক ফুডে আসক্ত হলে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে
শিশুরা রাস্তায় বের হলে বার্গার, পিৎজা খাওয়ার বায়না করা এখন সাধারণ দৃশ্য। ব্যস্ত কাজের সময়সূচির কারণে অনেক অভিভাবকও কখনো কখনো জাঙ্ক ফুডের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হন। স্কুলে যাওয়ার পথে তাড়াহুড়া করে দ্রুত কিছু স্ন্যাক খেয়ে নেওয়াই যেন হয়ে উঠেছে নতুন ধরনের ব্রেকফাস্ট রুটিন। মুখরোচক স্বাদে ভরপুর এসব খাবার শিশুদের কাছে যেমন প্রিয়, তেমনি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই উপকারী নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণা দেখাচ্ছে, নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে শরীরে নানা ধরনের স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলো শুধু বড়দের ক্ষেত্রেই নয়, ছোটদের মধ্যেও সমানভাবে প্রভাব ফেলছে।
জাঙ্ক ফুড স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব খাবারে থাকে নানা ধরনের প্রিজারভেটিভ, যা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এতে ভিটামিন, মিনারেল বা ফাইবারের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রায় থাকে না বললেই চলে। বরং থাকে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, কৃত্রিম রং, আর অতিরিক্ত চিনি ও লবণ-যা শিশুদের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করে । নিয়মিত এই ধরনের খাবার খেলে ছোটদের শরীরে নানা স্বাস্থ্যসমস্যা দেখা দিতে পারে, যেগুলো ভবিষ্যতে বড় ধরনের জটিলতার কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ওবেসিটি বা স্থূলতা
শিশুদের মধ্যে স্থূলতার হার বিশেষ করে স্কুলগামী বয়সের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এর পেছনে মূল কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খেলে শরীরে প্রবেশ করে অতিরিক্ত ক্যালোরি, সঙ্গে থাকে অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাট-যা দ্রুত ওজন বাড়ায় এবং স্থূলতার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে। শরীর এই বাড়তি ক্যালোরি ব্যয় করতে না পারলেই ধীরে ধীরে ওজন বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা সময়ের সঙ্গে রূপ নেয় স্থূলতায়।
হার্টের সমস্যা
হার্টের সমস্যা কম বয়সেও দেখা দিতে পারে। গবেষণা বলছে, জাঙ্ক ফুড নিয়মিত খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকি প্রায় ৫০% বেড়ে যায়। যদিও ছোটদের মধ্যে প্রথম দিকে এই ধরনের সমস্যা স্পষ্টভাবে দেখা দেয় না, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বিশেষ করে টিনএজারদের মধ্যে হাই কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেশারের সমস্যা ধীরে ধীরে দেখা দেয়, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির সূচনা করে।
মেটাবলিক ডিসঅর্ডার
নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে শিশুদের বিপাক হার ব্যাহত হয়, যার প্রভাব পড়ে পুরো হজম ব্যবস্থায়। ধীরে ধীরে হজম স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীরের স্বাভাবিক শক্তি কমে আসে। পাশাপাশি, ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকিও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ছোটদের মধ্যে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যার হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এর মূল কারণটাই হলো এই অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
নিয়মিত চিনি, লবণ ও ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার গ্রহণ লিভারে চর্বি জমার প্রবণতা আরও বাড়িয়ে তোলে, যা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর জটিলতায় রূপ নিতে পারে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস
শিশুদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। নিয়মিত এই ধরনের খাবার খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে, যা প্রি-ডায়াবেটিক অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে ক্রনিক অসুখের ঝুঁকি এড়াতে হলে শিশুদের এসব খাবার থেকে দূরে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
আরও পড়ুন:
সন্তানকে একলা থাকার সুযোগ দিতে হবে যে কারণে
দীর্ঘদিন ভেজাল খাবার খেলে শরীরে কী ঘটে
এসএকেওয়াই/এমএস