ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

চল্লিশের পর বাড়তে থাকে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি

লাইফস্টাইল ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

চল্লিশে পা রাখা অনেকের কাছেই জীবনের দ্বিতীয় অংশে প্রবেশ করার মতো। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন যে, এটাই সেই সময়, যখন নারীর শরীর দ্বিতীয়বার নীরবে কিন্তু গভীরভাবে বদলাতে শুরু করে।

মাসিকচক্র থমকে আসা, হরমোনের ঢেউ-খেলানো ওঠানামা, ওজন বৃদ্ধি, রক্তচাপের ওঠানামা —এসব কিছু মিলেই ৪০-এর দশক পরিণত হয় নারীর স্বাস্থ্যের টার্নিং পয়েন্টে।

শরীরে ঝুঁকি কেন বাড়ে?

নিউইয়র্কের নর্থওয়েল হেলথ–এর কার্ডিওলজিস্ট স্টেসি রোজেন বলেন, এই দশকই নারীর প্রিভেনটিভ হেলথের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মেনোপজের পর অনেক কিছুই কঠিন হয়ে যায়।

চল্লিশের পর বাড়তে থাকে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি

এ সময়ে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ওজন এবং শারীরিক কার্যকলাপ — সবকিছুরই কৌশলী নিয়ন্ত্রণ ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের অন্তত একটি করে হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হয়ে যায়।

তার ওপরে, মাসিকচক্রের শেষ দশক শুরু হওয়ায় শরীরে ইস্ট্রোজেন কমতে থাকে, যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হৃদরোগ, থাইরয়েড, মেটাবলিক সিনড্রোম ও কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে শুরু করে।

কোলন ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং শুরু

চল্লিশে পৌঁছেই নারীর জন্য দু’টি বড় স্ক্রিনিং জরুরি হয়ে ওঠে — ম্যামোগ্রাফি ও কোলোরেক্টাল ক্যানসার স্ক্রিনিং।

চল্লিশের পর বাড়তে থাকে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি

মার্কিন ইউএসপিএসটিএফ পরামর্শ দিয়েছে - ৪০ বছর বয়স থেকেই দুই বছর পরপর ম্যামোগ্রাফি এবং ৪৫ বছর থেকে প্রথম কোলনোস্কপি করা উচিত।

গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজিস্ট রাজীব জৈন বলেন, কোলনোস্কপিকে শুধু টেস্ট ভাবলে ভুল হবে। এটি পলিপ খুঁজে বের করে সেগুলো কেটে ফেলার সুযোগ দেয় — যা ভবিষ্যতের ক্যানসার প্রতিরোধে অনন্য। স্টুল-টেস্ট বা ডিএনএ-স্টুল টেস্টের মতো বিকল্প থাকলেও এগুলোর কাজ শুধুই রোগ ধরা; প্রতিরোধ নয়।

অন্যদিকে, ম্যামোগ্রাফিতে ভুল–পজিটিভ হওয়া খুব স্বাভাবিক। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১০টির মধ্যে একটি রিপোর্টে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, এবং অতিরিক্ত পরীক্ষা লাগতে পারে। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই; বরং এগুলোকে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই দেখুন।

মানসিক ও প্রজনন স্বাস্থ্য

৪০–এর দশকে পৌছানোর আগেই বেশিরভাগ নারীর সন্তান জন্মদানের অধ্যায় শেষ হয়ে যায়। তাই এসময় বেশি জরুরি -
>> পেরিমেনোপজের প্রস্তুতি
>> ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি বা দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেসের চিকিৎসা
>> পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবনে শান্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও
>> অতীতে প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি বা উচ্চরক্তচাপজনিত গর্ভকালীন জটিলতা থাকলে হৃদরোগঝুঁকি পুনর্মূল্যায়ন করা।

চল্লিশের পর বাড়তে থাকে নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি

থাইরয়েড ও মেটাবলিক স্বাস্থ্যের নজরদারি

থাইরয়েড সমস্যা এই বয়সে বেশি প্রকাশ পায়। ওজন বেড়ে যাওয়া, ক্লান্তি, চুল–ঝরা, ঠান্ডা–সহ্যক্ষমতা কমে যাওয়া — এসব উপসর্গ দেখা দিলে টিএসএইচ ও ফ্রি–টি৪ চেক করানো ভালো।

এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও রক্তে শর্করা নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।

চোখ, ত্বক ও দাঁতের স্বাস্থ্য

৪০ বছর হলো বেসলাইন চোখের পরীক্ষা করার সঠিক সময়। একই সঙ্গে দাঁতের স্কেলিং–ক্লিনিং বছরে দুইবার চালিয়ে যেতে হবে।

ত্বকে এবার দেখা দেবে সূক্ষ্ম ভাঁজ, ইলাস্টিসিটি কমে যাওয়া ও শুষ্কতা। বিশেষজ্ঞরা রেটিনয়েড ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আর সবচেয়ে জরুরি হলে প্রতিদিন প্রতিদিন ব্যবহার করা, এমনকি মেকআপে এসপিএফ থাকলেও।

ভ্যাকসিন — সুরক্ষার শেষ সুযোগ

এই বয়সে এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়ার শেষ সুযোগ রয়েছে, যা জরুয়ামুখের ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়। এটি ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত দেওয়া যায়। এর পাশাপাশি প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ও কোভিড–১৯ ভ্যাকসিন নিতে হবে।

চল্লিশের দশক নারীর স্বাস্থ্যের সবচেয়ে রূপান্তরমুখর সময় — যেখানে সামান্য সচেতনতা ভবিষ্যতের বড় অসুখকে দূরে রাখে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায় - এটাই সেই দশক, যখন নিজের প্রতি বিনিয়োগ করলে পরবর্তী জীবনে তার লাভ বহুগুণে ফেরত আসে।

চল্লিশে পৌঁছানো মানে ক্লান্তি নয়, বরং নতুন করে নিজের যত্ন নেওয়ার স্ট্র্যাটেজি সাজানো, যাতে জীবনের পরবর্তী অধ্যায়টা হয় আরও শক্ত, স্বাস্থ্যবান ও আত্মবিশ্বাসী।

সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

এএমপি/জেআইএম

আরও পড়ুন