সয়াবিন নাকি সরিষা, ভাজা-পোড়ায় কোন তেল বেশি ক্ষতিকর
মচমচে আলুভাজি, মাছভাজি, চপ, বড়া, সিঙ্গাড়া, সামুচা, চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বেরেস্তা, নাগেটস্ – কত খাবার যে আমাদের রান্নাঘরে রোজ ডুবোতেলে ভাজা হয়, তার শেষ নাই। তবে আমাদের হিসেবী মন আবার একবার ব্যবহৃত তেল ফেলে দিতে চায় না।
ফলে আমাদের রান্নার তেল – হোক তা সয়াবিন কিংবা সরিষা - বারবার উচ্চতাপে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলাফল কী?
আবার, একবার ব্যবহার করলেও উচ্চতাপে ব্যবহারের জন্য কোন তেল বেশি ক্ষতিকর? এসব নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন আল্-হায়াত হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কনসালটেন্ট ডায়টেসিয়ান ও পুষ্টিবিদ মোহাম্মদ আরিফ ইকবাল।

তিনি বলছেন সয়াবিন তেলের স্মোকিং পয়েন্ট বা তুলনামূলকভাবে বেশি। অর্থাৎ, ফ্রাই বা ডিপ-ফ্রাই করার সময় এটি সহজে পুড়ে যায় না এবং কম ধোঁয়া দেয়। সরিষার তেল মাঝারি থেকে উচ্চ তাপে ব্যবহারযোগ্য হলেও খুব বেশি গরম করলে এর প্রাকৃতিক ঝাঁজালো স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে আনরিফাইন্ড সরিষার তেল ঝাঁজালো হওয়ার কারণে দীর্ঘ সময় গরম করলে তেলটির কার্যকারিতা কমে যায়।
এ কারণে উচ্চতাপে তেলে কিছু ভাজা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। রিফাইন্ড সয়াবিন বা সরিষার তেল ৩৫০–৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নিরাপদে ব্যবহার করা যায়, তবে একটানা ৫–৭ মিনিটের বেশি গরম করা ঠিক নয়। দীর্ঘ সময় তেল গরম করলে ট্রান্সফ্যাট এবং ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হতে পারে।

ট্রান্সফ্যাট হলো একটি ধরনের ক্ষতিকর চর্বি, যা প্রাকৃতিকভাবে কিছু খাবারে খুব কম পরিমাণে থাকে, কিন্তু মূলত প্রক্রিয়াজাত বা হাইড্রোজেনেটেড তেলে তৈরি হয়। এটি -
১. খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়ায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) কমায়।
২. হার্টের সমস্যা ও করোনারি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. রক্তনালীর প্লাক জমা বাড়ায়, যার ফলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।
৪. দীর্ঘমেয়াদে মেটাবলিক সিনড্রোম, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও স্থূলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

অর্থাৎ, ট্রান্সফ্যাট শরীরের জন্য একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয় এবং যতটা সম্ভব এড়ানোই উত্তম।
মোহাম্মদ আরিফ ইকবালের মতে, ভাজাপোড়ার জন্য রিফাইন্ড তেল ব্যবহার সবথেকে নিরাপদ, কারণ এতে স্বাদ বজায় থাকে এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকে। সরিষার তেল ঝাঁজালো স্বাদের কারণে দীর্ঘক্ষণ গরম করলে ক্ষতিকর পদার্থ তৈরি হতে পারে। সয়াবিন তেল তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ, তাই ফ্রাই বা ডিপ-ফ্রাইয়ের জন্য এটি উপযুক্ত।
সারসংক্ষেপে, ভাজাপোড়ার সময় তেলের ধরনের নির্বাচন, গরম করার সময় ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ—এই তিনটি বিষয়ই স্বাস্থ্য রক্ষার চাবিকাঠি। সঠিক তেল ও ব্যবহার নিশ্চিত করলে তেলে ভাজা খাবারের ক্ষতি কমাতে পারবেন।
এএমপি/জিকেএস