রাগ হলে নিজেকে শান্ত রাখবেন যেভাবে
ছবি: সংগৃহীত
‘রাগ’ একটি স্বাভাবিক মানবিক অনুভূতি। অবহেলা, অন্যায়, অপমান কিংবা অতিরিক্ত চাপ যেকোনো কিছু থেকেই রাগ জন্ম নিতে পারে। কিন্তু সমস্যা তখনই, যখন এই রাগ আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। মুহূর্তের রাগে ভেঙে যেতে পারে সম্পর্ক, নষ্ট হতে পারে সিদ্ধান্ত, এমনকি বিপদে পড়তে পারে নিজের জীবনও। তাই রাগ না হওয়া নয়, বরং রাগ হলে নিজেকে শান্ত রাখতে পারাই আসল দক্ষতা।
রাগ আসার সংকেত চিনে নিন
রাগ সাধারণত হঠাৎ আসে না। এর আগে শরীর ও মন নানা সংকেত দেয় হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শরীর গরম লাগা, চোয়াল শক্ত হয়ে যাওয়া, কথা বলার স্বর চড়া হওয়া। এই লক্ষণগুলো বুঝতে পারলে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়।

সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া নয়, বিরতি নিন
রাগের মুহূর্তে সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ হলো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। এই সময় নিজেকে কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটের বিরতি দিন। মনে মনে বলুন ‘এখন না’। এই ছোট বিরতিটুকুই আপনাকে ভুল সিদ্ধান্ত থেকে বাঁচাতে পারে।
আরও পড়ুন:
- ভিড়ের মধ্যে অসুস্থ লাগলে আগে করুন এই কাজগুলো
- সঙ্গীর সঙ্গে গসিপ করার উপকারও আছে
- ঘুমের অভাবে কমে যেতে পারে শুক্রাণুর কোয়ালিটি
- নারীরা কেন পুরুষের সহিংসতার শিকার হন
- গ্রিন ফ্ল্যাগ চেনার উপায়, সম্পর্কের নতুন ট্রেন্ড ‘লাউড লুকিং’
শ্বাস-প্রশ্বাসকে কাজে লাগান
রাগের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত ও অগোছালো হয়ে যায়। তখন ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরে শ্বাস নিন, নাক দিয়ে শ্বাস নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখুন, তারপর মুখ দিয়ে ছাড়ুন। কয়েকবার এমন করলেই স্নায়ুতন্ত্র ধীরে ধীরে শান্ত হতে শুরু করে।
পরিবেশ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন
যে জায়গা বা পরিস্থিতিতে রাগ বেড়েছে, সেখান থেকে সাময়িকভাবে সরে যাওয়া খুব কার্যকর পদ্ধতি। এটি পালিয়ে যাওয়া নয়, বরং নিজেকে সামলানোর সুযোগ দেওয়া। একটু হাঁটা, খোলা জায়গায় দাঁড়ানো বা একা বসে থাকা রাগ কমাতে সাহায্য করে।
রাগের সময় নিজের মনের ভেতরের কথাগুলো অনেক সময় বাস্তবের চেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। নিজেকে প্রশ্ন করুন-
- বিষয়টা কি সত্যিই এত বড়?
- পাঁচ বছর পর এটি কি গুরুত্বপূর্ণ থাকবে?
- আমি কি এই মুহূর্তে নিজের ক্ষতি করছি?
- এই আত্মকথন রাগের তীব্রতা কমাতে সহায়ক।
শরীরচর্চা ও শারীরিক নড়াচড়া
রাগ মানে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত শক্তি। হাঁটা, হালকা ব্যায়াম, দৌড় কিংবা স্ট্রেচিং এই শক্তিকে স্বাস্থ্যকরভাবে বের করে দেয়। নিয়মিত শারীরিক কর্মকাণ্ড রাগ জমতে দেয় না।

অনুভূতি চেপে না রেখে প্রকাশ করুন
রাগ চেপে রাখলে তা আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। তবে রাগ প্রকাশ মানেই চিৎকার বা আঘাত নয়। শান্তভাবে, গুছিয়ে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে শিখুন ‘আমি কষ্ট পেয়েছি’, ‘আমি বিরক্ত বোধ করছি’। এভাবে কথা বললে সংঘাত কমে।
প্রত্যাশা ও নিয়ন্ত্রণের সীমা বুঝুন
সবকিছু আমাদের ইচ্ছামতো হবে এই প্রত্যাশা থেকেই অনেক রাগ জন্ম নেয়। কোন বিষয় আপনার নিয়ন্ত্রণে আর কোনটি নয় এই পার্থক্য বুঝতে পারলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।
দীর্ঘমেয়াদি অভ্যাস গড়ে তুলুন
রাগ নিয়ন্ত্রণ কোনো একদিনের বিষয় নয়। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার, নিয়মিত বিশ্রাম ও মানসিক যত্ন রাগের প্রবণতা কমায়। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়াও দুর্বলতা নয়, বরং সচেতনতার পরিচয়।
রাগ নয়, নিয়ন্ত্রণই শক্তি
রাগ মানুষকে দুর্বল করে না, কিন্তু রাগের কাছে হার মানা মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যে মানুষ রাগের মুহূর্তে নিজেকে সামলাতে পারে, সে-ই আসলে সবচেয়ে শক্তিশালী। কারণ নিজেকে শান্ত রাখতে পারা মানেই নিজের জীবনকে সম্মান করা।
জেএস/