বর্ষার চারটি ছড়া ও কবিতা

কোলা ব্যাঙের বিয়ে
বিলকিস নাহার মিতু
কোলা ব্যাঙের বিয়ে হবে
দিচ্ছে টোপর মাথায়,
গেট সাজাচ্ছে সবাই মিলে
ঝালর বেঁধে ছাতায়।
পোকামাকড় রান্না করতে
ব্যস্ত ব্যাঙের দল,
বিয়ে খেতে হাজির হলো
খেঁকশিয়ালের দল।
টুকটুকে লাল শাড়ি দিয়ে
সাজছে ব্যাঙের পাত্রী,
বউকে নিতে হাজির হলো
কোলা ব্যাঙের যাত্রী।
****
ব্যাঙ মামার বিয়ে
শাহনাজ শিউলী
ব্যাঙ মামা আজ বর সেজেছে
তার নাকি বিয়ে,
ঘর বেঁধেছে কলমিলতার
শ্যাওলা পাতা দিয়ে।
কুনো, সোনা নাচছে আজি
গাইছে চারিপাশে,
পাটের পাতার রুমাল দিয়ে
মুখ ঢেকে সে হাসে।
লাল চীনা ব্যাঙ বৈঠা নিয়ে
বাইছে উজান তরী,
বামন, পানার গান শুনে সব
হেসেই গড়াগড়ি।
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর বাজনা বাজায়
কটকটি আর পাতা,
ঝিঁঝি, কোলা ধরছে মামার
মাথার ওপর ছাতা।
নদীর পাড়ে ব্যাঙ্গার বাড়ি
যায় শোনা শোরগোল,
মশা, মাছি, ছারপোকা আর
রাঁধছে কেঁচোর ঝোল।
****
অশ্রুসম বর্ষা
রবিন ইসলাম
আকাশ আজ নিজেকে খুলে দিয়েছে এক দুর্বার স্বীকারোক্তিতে—
প্রতিটি ফোঁটা যেন কোনো না বলা চিঠির স্তব্ধতা।
তীব্র নির্জনতায় ভিজে যায় পাতার শিরা,
যেন আত্মার ভেতরে জেগে ওঠে দীর্ঘ অনাহূত সংলাপ।
পথঘাট নিঃশব্দ, শুধু বৃষ্টির জল গড়িয়ে যায় শূন্যতায়—
সেই শূন্যতা কোনো এক প্রাক্তনের শ্বাস,
যার ধ্বনি থেমে গেছে, অথচ উপস্থিতি অপার।
এই বর্ষা শোনায় না কোলাহল,
সে শোনায় বিস্মৃতির নূপুরধ্বনি,
চেতনার অলিন্দে জেগে থাকা এক মৌন কুসুম,
যা ফোটে না, ঝরে না—
শুধু বাঁচে অভিমানী মেঘের গর্ভে।
নদীর পাড়ে বসে মন আজ আর কিছু চায় না—
শুধু জেনে যেতে চায়—কে প্রথম বৃষ্টিকে ভালোবেসেছিল?
আর কে তাকে ভুলে থেকেও বুকে ধারণ করেছে আজীবন?
****
সেই বিকেল বেলা
নাজমুস সায়েম
বেরিয়েছিলাম বৃষ্টির সাথে কথা বলবো বলে—
তাকে জড়িয়ে নেবো বলে গায়ে, মেঘ কালো করা বৃষ্টি;
যে বৃষ্টি ছড়িয়ে দেয় শীতলতা এ ধরাতে।
বৃষ্টি এলো না, তবে তুমি এলে
দেখালে শহর, এগোলো প্রহর—
ক্লান্ত বিকেলের আগমন
মেঘলা আকাশের সাথে স্নিগ্ধ বিকেলের
কী অমলিন সন্ধি।
রেলগাড়ির বিদায়ী ধ্বনির সাথে
মৃদু বাতাস এসে আছড়ে পড়লো গায়ে
সাথে চুমুক রঙিন চায়ে—
বাদামকে চিবুকের সঙ্গী করে আবার পথচলা
ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার সাথে একাত্মতায়
দুজনের বিদায় বলা; আহ! কী সুন্দর সেই বিকেলবেলা!
এসইউ/এমএস