ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

পিয়াস সরকারের রম্যগল্প

বোতল-বালিশ ও মশার এগ্রিমেন্ট

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:৪৪ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

নতুন একটা অভিযোগ এসেছে। এবারের অভিযোগদাতা বালিশ। তার লিখিত বয়ান অনুযায়ী, অবৈধ প্রেমে জড়িয়েছে কোলবালিশের সাথে। মাথার বালিশের কোনো যত্ন নেই। নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। যেদিন মাথায় কীসব জেল লাগায়। সেদিন তো দম আটকে যায় বালিশের। কোলবালিশের কাভার গত মাসেই ধুয়েছে। আবার এ সপ্তাহে ধোয়া হলো। কিন্তু আমার খোঁজই নেয় না। কাভারটার বছর দুয়েক হলেও পাল্টানোর নাম নেই। আরও কিছু অভিযোগ, যা পড়তে গিয়েও থেমে গেলো এহান।

দিনগুলো যেন কেমন হয়ে গেছে এহানের। ভার্সিটি শেষে চাকরি করছে। প্রেমিকা নেই। ইচ্ছা থাকলেও চেষ্টা-আত্মবিশ্বাস নেই। আড্ডাবাজ এহানের এখন আড্ডাটা দেওয়াই হয় না। বন্ধুরা সব ব্যস্ত। একাই একটা রুম নিয়ে থাকে। বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য মৃদু চাপ আছে। এহানের ইচ্ছা আছে কিন্তু মনগত সাহসটা নেই। নতুন একটা সমস্যা হয়েছে। তার ব্যবহার্য বস্তুগুলো বিদ্রোহ করছে। লিখিত আকারে চিঠি আসছে কিন্তু কাগজ ছাড়া।

এই তো সেদিন, পানির বোতল অভিযোগ করল। কোথা থেকে উটকো কীসব কোমলপানীয়ের বোতল আসছে। থাকছে আবার ফ্রিজে। ফিল নিয়ে পান করছে। এদিকে দীর্ঘদিনের সঙ্গী পানির বোতলটাকে রাখে যাচ্ছেতাই করে। কখন খাটের কিনারে, মেঝেতে। লাথি খাওয়াটাও তার নিয়মিত ঘটনা।

জুতা জোড়া সেদিন ধর্মঘট করে বসলো। তার অভিযোগ, ঘাম-দুর্গন্ধ নিয়ে আর কাজ করতে পারবে না। অফিসে সবাই জুতা জোড়াকে বিশ্রাম দেয়। কিন্তু তার সেই সুযোগ নেই। অফিসে খুললেই সবার নাকে হাত।

এক রাতে হলো ভিন্ন ঘটনা। হঠাৎ রাত তিন-চারটার দিকে একদল মশা তাকে ডেকে তুললো। তাদের হাতে এগ্রিমেন্ট পেপার। তাতে লেখা, প্রতিদিন দুঘণ্টা তাদের কামড়াতে দিতে হবে। তাহলে তারা কোনো জীবাণুওয়ালা মশাকে বাসায় আসতে দেবে না। তা যদি না করে, তাহলে যখন-তখন হুল ফুটাবে। ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া যে মশাই আসুক না কেন, তারা আটকাবে না।

স্মার্টওয়াচ কিনে আরেক বিপদে পড়েছে এহান। এখন এই ওয়াচকে তার স্যার মনে হয়। এই যে বলা শুরু করে, পানি খাও, আজ হাঁটা কম হয়েছে, রাত করে ঘুমানো যাবে না ইত্যাদি। এই ওয়াচেরও অভিযোগ, নিয়মিত মোবাইল চার্জ দেওয়া হলেও ওয়াচে চার্জ দেওয়া হয় না। চার্জ না থাকলেও ডিউটি করতে হয় তাকে। মোবাইল পকেটে থাকে কিন্তু ওয়াচ সারাদিন হাতের সাথে ঝুলে থেকে রোদ-ধুলা খায়। ওয়াটার প্রুফ হয়ে আরেক বিপদ। বৃষ্টি এলেও পাত্তা দেয় না।

আরও পড়ুন
লীলা এখন আর আসে না 
ফারজানা অনন্যার গল্প: নরকের গান 

অফিস শেষে এহান একটু ধানমন্ডি লেকে গেলো। কী হচ্ছে এসব। তা নিয়ে ভাবছে। বন্ধুদের কথা মনে হচ্ছে। কত আড্ডা, কত স্মৃতি। কিন্তু তার চিন্তায় বালিশ-বোতলদের বিদ্রোহ। মশার এগ্রিমেন্ট পেপার।

মেসে ফিরে দেখে এক হুলস্থুল কাণ্ড। সভায় বসেছে সবাই। বিদ্রোহী গ্রুপের প্রেসিডেন্ট বালিশ, সেক্রেটারি বোতল। অপজিশন কোলবালিশ। অ্যাকশনের দায়িত্ব দেওয়া হলো মশাদের। যদিও মশারা ঠিক ঠাওর করতে পারছে না। কোনটায় তার লাভ-ক্ষতি।

বালিশের হাতে লেখা, ‘কভার চাই, সম্মান চাই, সপ্তাহে একবার গোসল চাই’। জুতার গলায় ঝোলানো প্লাকার্ড, ‘আমার সাইজ ৪২, সম্মান শূন্য’। বোতলের কপালে লেখা, ‘আর নয় অবহেলা, এবার চাই পূর্ণ সম্মান’। সবগুলো ব্যানার পড়া হলো না। জুতাজোড়া সিগন্যাল মিলতেই চুপ হয়ে গেলো, লুকিয়ে ফেললো বিপ্লবী লেখাগুলো।

কিছুটা অফিসের কাজ বাসায় নিয়ে এসেছে এহান। কলমটা হাতে নিতেই ফসকে পড়ে গেলো। আর বলে উঠল, এসব অফিসিয়াল কাগজে সাইন করার জন্য কি আমার জন্ম? একটা প্রেমপত্রও তো লেখা যায়। ব্যাগের চেইন লাগাতে যাবে; ব্যাগ বলে, ‌‘দুপুরের খাবার ব্যাগে না নিলে চেইন লাগানো যাবে না।’

শোয়ার পর আরেক বিপত্তি। চাদর বলে উঠলো, এবার না গোসল করালে আর কোনো কাজে পাওয়া যাবে না। এহান ভাবছে, সমাধান কী? হঠাৎ আয়নাটায় চোখ গেলো। ধুলো জমে গেছে। আয়নাটাকে প্রশ্ন করে, কেন সবাই বিদ্রোহ করছে? সমাধান কী? আয়নাটার জবাব শুনে একটু স্বস্তি পেলো। বোতল, বালিশরাও যেন সম্মতি দিলো। মশারা বলে উঠল, ‘ইউ আর ইন সঠিক ওয়ে।’

ক’দিন পরেই বাড়ি গেলো এহান। মায়ের আদর আর মজার খাবার। এরপর মায়ের ইচ্ছায় এহান গেলো এক আন্টির বাসায়। শুভ্র সকালের আলোর মতো দেখাচ্ছে প্রভাকে। প্রভা একই স্কুলে ছিল, তিন বছরের ছোট। কোনদিন ভালো করে দেখেই নাই। মায়ের ইচ্ছার গুরুত্ব তো আছেই। কিন্তু এহান ভাবলো, এবার বিদ্রোহ দমাতে হবে। ভাবছে, বিদ্রোহ দমানোর জন্যই প্রভা এসেছে একমুঠো আলো নিয়ে।

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক মানবজমিন।

এসইউ

আরও পড়ুন