ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

আজ রাতে চাঁদ উঠবে না: গোপন ব্যথার বিষথলি

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:২১ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

মুহম্মদ নিজাম

বছরে অন্তত দুটি নতুন লেখকের বই পড়ার চেষ্টা করি। নতুন লেখকদের নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসি। দায়িত্ব হিসেবেও জ্ঞান করি। শফিক রিয়ানের বই দুই বছর আগেই আমার হাতে এসেছিল। পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে পড়া যাচ্ছিল না। এবার মেলার শুরুতেই একটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে সপ্তাহকাল ধরে বাসায় প্রায় অকেজো হয়ে বসে ছিলাম। এই বসে থাকার সময়টাকে কাজে লাগাতেই শফিকের বইটা হাতে তুলে নিলাম। বইয়ের নাম ‘আজ রাতে চাঁদ উঠবে না’। এটি সমকালীন উপন্যাস।

‘আজ রাতে চাঁদ উঠবে না’ শফিক রিয়ানের প্রথম উপন্যাস। কোনো লেখকের প্রথম লেখা পড়ার যোগ্য হলে আমি খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ি। গল্পের পাশাপাশি গল্পের আড়ালে থাকা লেখকটাকে পাঠ করার চেষ্টা করি। নতুনদের বই হাতে নিয়ে কয়েক পৃষ্ঠা পড়ার পর প্রথম যেটা ভাবি, বইটা পড়ার যোগ্য কি না। অযোগ্য বইও শত শত ছাপা হয়। ভুল কাজে সময় ইনভেস্ট করতে চাই না বলেই অযোগ্য বই শেষ না করে রেখে দিই।

শফিকের বই কি পড়ে শেষ করতে পেরেছি? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ! খুবই আরাম করে পড়তে পেরেছি এবং শেষ কয়েক পৃষ্ঠায় এসে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। পূর্বেই বলেছি, এটি লেখকের প্রথম বই, বয়সের হিসেবেও লেখক একেবারেই তরুণ। সেই হিসেবে বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা ছিল সুখপাঠ্য। লেখালেখির নামে কাগজের অপচয় সে করতে আসেনি।

গল্পটা মূলত মায়া নামের একটি মেয়েকে কেন্দ্র করে। মায়ার চারপাশে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে এসেছে ওর স্কুলমাস্টার বাবা, মৃত মা, পিতৃসম অভিভাবক হাজী মজিদ, আনোয়ারা (আনু), বান্ধবী বিথী এবং প্রেমিক সাহেদ। গল্পের আরেক অন্ধকার চরিত্র হচ্ছে রতন নামের এক কলেজ মাস্টার।

আরও পড়ুন
আহমেদ শিমুর ‘অচেনা পথে চেনা মানুষ’
বইমেলায় মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের ‘চাঁদপুর সমগ্র’

উপন্যাসে মায়ার প্রেমের ভাষা গীতিময়। ওই বয়সে যেমনটা হয়ে থাকে। মায়ার জীবনের গোপন ক্ষতগুলো অনুচ্চার্য। কিন্তু ওর বিদ্রোহ ও বিপ্লবের ভাষা সূর্যের আলোর মতো দীপ্তিময়। মায়া যখন প্রেম করে আমাদের হৃদয়ে প্রেম জাগে, যখন গোপন ব্যথার বিষথলি দেখিয়ে কান্না করে আমাদের চোখ থেকে জল খসে, আর যখন প্রতিবাদী মেজাজ নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়; আমরা হাতের তেলো মুষ্ঠিবদ্ধ করে ওর সাফল্য কামনা করতে বাধ্য।

গল্পের শুরুতে অগ্রজ লেখকদের ভাষা ও শব্দের প্রভাব লক্ষ্য করে সমালোচনার মেজাজটাকে চাগিয়ে দিচ্ছিলাম। তারপর ইয়াদ করলাম, প্রথম বইয়ে পূর্ববর্তী লেখকদের মঞ্চ তো অনেক খ্যাতিমান সাহিত্যিকরাও করেছেন। ধীরে ধীরে সেখান থেকে বেরিয়ে নিজস্ব মঞ্চ, নিজস্ব বাচনশৈলী তৈরি করে খ্যাতিও ছড়িয়ে দেখিয়েছেন। সুতরাং এইটুকু স্পেস তাকে দেওয়া যায়। শফিকের সর্বশেষ প্রকাশিত উপন্যাস ‘বিষাদের ছায়া’ হাতে আছে। বিষাদের ছায়া পাঠ করে এই গ্রাফটা দেখে নেবো।

শেষ করি, শেষাংশের মুগ্ধতা দিয়েই। গল্পের একেবারে শেষদিকে এসে লেখক নিজেকে নেহাত একটা ফিকশনে আটকে রাখেননি। গল্পের চরিত্রসহ নিজেকে সপে দিয়েছেন বাস্তব পৃথিবীর হাতে। এ পৃথিবীর মানুষই তো মায়াদের জীবনের আনন্দ-বেদনার কাব্যের আসল রচয়িতা। কেমন আছে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা স্বপ্নবান মায়ারা? আমরা কি আদৌ তাদের একটা সুখী বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলে দিতে পেরেছি?

নাকি শেষ অবধি রতনের মতো শিশ্নবাজেরাই জয়ী হয়? একশ আটটি লাল পদ্ম হাতে দাঁড়িয়ে থাকা যুবক সাহেদের প্রেম কতখানি পূর্ণতার দেখা পায়? অল্প বয়সে, প্রথম বইয়েই লেখক জীবনকে গল্পে তুলে নিয়ে এসেছেন। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা যায়। শফিকের সঙ্গে ছবি তুলে রাখলাম। স্বপ্নের জয় হলে যেন বলতে পারি, আমরাও সঙ্গে ছিলাম!

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন