ভিডিও EN
  1. Home/
  2. গণমাধ্যম

আলী রীয়াজ

লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও মালিকরা কেন গণমাধ্যম চালান?

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:২৪ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২৫

লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও মালিকরা কেন গণমাধ্যম চালান তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, পেশাগত দায়িত্বের ক্ষেত্রে ওয়েজ বোর্ডের প্রশ্নটা ওঠে। অনেকে বলেন, ওয়েজ বোর্ড তো বাস্তবায়ন হয় না, তাহলে ওয়েজ বোর্ড করে লাভ কী? কোনো লাভ নেই। কেন হয় না ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন? কারণ, প্রতিষ্ঠানটি কোনোভাবেই ব্যবসায়িক লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়নি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, একজন দোকানদার দোকান চালান, লাভজনক না হলে বন্ধ করে দেন। গণমাধ্যম মালিকরা লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও কেন গণমাধ্যম চালান? নিশ্চই একটা কারণ থাকতে হবে। এই যে প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক হবে কীভাবে- সেই প্রশ্নটা তুলুন।

সাংবাদিকদের কল্যাণে ও স্বাধীনতার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি দরকার বলেও জানান তিনি।

রোববার (৩১ আগস্ট) ‌‘প্রস্তাবিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ডেইলি স্টার ভবনে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের সহযোগিতায় ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) এ সভার আয়োজন করে।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিতে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, রাজনীতিবিদরা যখন ক্ষমতায় যাবেন, তখন আপনাদের কাছেই তো আসতে হবে। তাদের ধরেন এখনই। তাদের জিজ্ঞাসা করেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এই অঙ্গীকারগুলো করতে বলুন।

তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় যাওয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানই সুরক্ষা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে না। এজন্য গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের দরকার হয় না।

এই অধ্যাপক বলেন, আপনাকে পেশাগত জায়গা থেকে যে সুবিধা দেওয়ার কথা, অর্থাৎ দায়িত্ব পালনের জন্য যে সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার কথা চাকরি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, সেই কাজটা মালিক করেন না, কারণ মালিক জানেন আপনার সঙ্গে এই আচরণ করার পরও আপনি এই সরকার, রেজিম বা আদর্শকে সার্ভ করবেন অথবা আপনি থাকবেন। আর উনি (মালিক) এটা দিয়ে সুবিধা নেবেন। সেই কারণে মালিকানার যে ধরন তৈরি হয়েছে, সেটা অব্যাহত রেখে সংবাদপত্র বলেন, টেলিভিশন বলেন, রেডিও বলেন- স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা দুরূহ।

ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আরও বলেন, মব ভায়োলেন্সের সুবিধা সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ পাচ্ছেন। ওমুককে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে, তমুককে অফিসে বসিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে না? পরের ওমুকটা যদি না থাকে, তাহলে আগের অমুকটা সাহস পাবে না।

তিনি আরও বলেন, যে দেশে নাগরিকদের আইনি সুরক্ষা নেই, বিচারবহির্ভূত হত্যা হয়, গুম হয়, নিপীড়ন হয়, সেখানে আপনার একটা সাংবাদিকের আইডি কার্ড থাকবে, তাহলে কি আইনের সুরক্ষা পাবেন? এটা কি সম্ভব? আমার ধারণা সম্ভব না।

বিজেসির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন ও বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. আল মামুনের স্বাগত বক্তব্যে এবং ইলিয়াস হোসেন ও শাহনাজ শারমিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেসির নির্বাহী মিল্টন আনোয়ার।

সভাপতির বক্তব্যে বিজেসির চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক বলেন, গণমাধ্যম হলো রাষ্ট্রে চতুর্থ স্তন্ত। অতীতের সরকারগুলো গণমাধ্যমকে ব্যবহার করেছে। আমরা নিজেরাই কখনো কখনো ব্যবহার করতে দিয়েছি। আমরা সাংবাদিক নাকি পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট? যতদিন এই অবস্থা থাকবে, ততদিন সরকারও ব্যবহার করতে চাইবে, আমরাও ব্যবহৃত হবো। মানুষের আস্থা আমরা হারিয়েছি অনেক আগেই।

দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহউদ্দিন বলেন, পুরো বাংলাদেশের সংস্কার দরকার। কিন্তু আমরা গণমাধ্যম সংস্কারের মতো ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে বসে আছি। কিন্তু সংকট হচ্ছে পুরো বাংলাদেশের সংস্কার করার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের জন্য উপযুক্ত নয়। আমাদের এখন যে সংকট, এতদিন ধরে যে সংকটগুলো আছে, আমাদের সাংবাদিকতার মান, মর্যাদা, রুটি-রুজিতে আঘাত করছে টাউট সাংবাদিকতা, ব্ল‍্যাকমেইলিং সাংবাদিকতা এবং দালালি সাংবাদিকতা। যেটা আমরা দীর্ঘদিন করে আসছি এবং এখনো করছি। এই দালালি সাংবাদিকতা করেই আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছি।

সরকার গণমাধ্যম কমিশনকে ফেলনা মনে করে মন্তব্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মিনহাজ উদ্দীন বলেন, সরকার গণমাধ্যম কমিশনই করবে না, সম্প্রচার কমিশন তো অনেক দূরের কথা। কারণ এগুলো করলে সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব খর্ব হবে।

গণমাধ্যমকে বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে চাইলে সেটি দুর্বল হবে মন্তব্য করে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসনাইন খুরশেদ বলেন, গণমাধ্যমকে সংস্কারে প্রাধান্য দিতে হবে। মালিকদের হস্তক্ষেপ থেকে গণমাধ্যমকে দূরে রাখতে হবে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মৌলিক প্রস্তাবনায় ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে কথা বলে সেই ঘটতি দূর করতে হবে। এ সময় তিনি ওয়েজবোর্ড করে লাভ কী, যদি সেটি বাস্তবায়ন না হয় সেই প্রশ্নও তোলেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, আমাদের আগে ঠিক করতে হবে, আমি সাংবাদিক নাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আমাদের আগে এই গোড়ায় হাত দিতে হবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সহ-সভাপতি মুনিমা সুলতান, বিজেসির ট্রাস্টি ও যমুনা টিভির সিইও ফাহিম আহমেদ, বিজেসির ট্রাস্টি পরিচালক তালাত মামুন, ট্রেজারার মানস ঘোষ উপস্থিত ছিলেন।

এনএইচ/ইএ/জেআইএম