ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিবিধ

আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা

নির্বাচিত ও শক্তিশালী সরকারের বিকল্প নেই

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:২৯ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০২৫

মো. মাহমুদ হোসেন, এফসিএ

অর্থনীতি ও রাজনীতি একটি রাষ্ট্রের দুইটি প্রধান চালিকাশক্তি—যা একে অপরের পরিপূরক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন ছাড়া একটি দেশের আর্থিক খাত টেকসই ভিত্তি লাভ করতে পারে না। একটি অন্তর্বর্তীকালীন বা অনির্বাচিত সরকারের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা ও সীমিত মেয়াদ দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই বাস্তবতায় দেশের আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত, দায়বদ্ধ ও কার্যকর রাজনৈতিক সরকারের দ্রুত প্রয়োজন।

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগের আস্থাহানি
বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এক সংকটকাল অতিক্রম করছে। বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে, দেশি উদ্যোক্তারাও নতুন উদ্যোগ নিতে অনিচ্ছুক। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, নীতিগত অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের মূলধন নিরাপদ খাতে স্থানান্তর করছেন। উদাহরণস্বরূপ, গত এক বছরে এফডিআই (ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা শ্রমবাজারে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।

ব্যাংকিং খাতে জটিলতা ও অনাস্থা
ব্যাংকিং খাত বর্তমানে চরম অনিয়ম ও দুর্বৃত্তায়নের শিকার। অনেক ব্যাংকে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার ফলে বাজারে ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু গুণগত মান ও তদারকির ঘাটতি বেড়েছে বহুগুণ। অর্থনীতির মাপে না দেখে যেভাবে ব্যাংক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তা বিশ্বের অন্য কোথাও নজিরবিহীন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদকে ব্যবহার করে মালিকপক্ষ নিজেদের সম্পদ বাড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করেছে। বিশেষত, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের রদবদল ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে, যেখানে আমানতকারীদের টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে এসব দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

আরও পড়ুন
যতীন স্যারদের মৃত্যু হয় না
কেন কথায় কথায় ভারতের দাদাগিরি?

বন্ধ একাউন্ট জব্দ ও ব্যবসায়ী শ্রেণির সংকট
সম্প্রতি অনেক ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব দীর্ঘদিন ধরে জব্দ করে রাখা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা তৈরি করছে। যদি কোনো প্রতারণা বা অর্থপাচারের সুস্পষ্ট প্রমাণ না থাকে, তবে এসব অ্যাকাউন্ট দ্রুত খোলার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। অন্যথায় ব্যবসা-বাণিজ্য, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, অনেক আমানতকারী চিকিৎসার জন্য বা জরুরি প্রয়োজনেও ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না, যার ফলে মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটেছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু আমানতকারী চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন—এটি রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক এবং অনিরাপদ আর্থিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি।

খেলাপি ঋণ ও মর্টগেজ সম্পত্তির জটিলতা
বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। এর বড় অংশই রয়েছে প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতাদের দখলে। এসব খেলাপি ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ রাখা অনেক সম্পত্তি আইনি ও ব্যবহারিক জটিলতায় জর্জরিত। নিলামে বিক্রি করা যাচ্ছে না, আবার কেউ এগিয়ে আসছে না কেনার জন্য—বিশেষ করে প্রভাবশালী ঋণগ্রহীতার সম্পত্তির ক্ষেত্রে।

দুর্বল একীভূতকরণ প্রক্রিয়া ও সাধারণ মানুষের আস্থা সংকট
বর্তমান সরকার দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রাথমিকভাবে সঠিক মনে হলেও তার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জটিল ও অস্বচ্ছ। এতে জনমনে সন্দেহ ও অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। সরকারের উচিত ছিল এই প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ ও ইনক্লুসিভ করা, যাতে জনগণের আস্থা ফিরে আসে এবং আর্থিক খাতের মেরুদণ্ড সুদৃঢ় হয়।

পরিশেষে বলবো, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দেশের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে একটি কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সরকার অপরিহার্য। অনির্বাচিত বা সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন সরকারের পক্ষে এই বিশাল সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পাদন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া টেকসই অর্থনীতি সম্ভব নয়। তাই অবিলম্বে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী সরকার গঠন সময়ের দাবি।

লেখক: অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন