চাঁদাবাজিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: আসিফ মাহমুদ
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: জাগো নিউজ
রাজধানীর গুলশানে সাবেক একজন এমপির বাসায় চাঁদা আদায়ের ঘটনায় জানে আলম অপুর দেওয়া বক্তব্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আসিফ মাহমুদ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘অপুর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই। আমার মনে হয় না এখনো কেউ এরকম প্রমাণ দিতে পেরেছেন যে, আমার সম্পৃক্ততা আছে। বরং যার (জানে আলম অপু) সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, এই সাক্ষাৎকার একজন রাজনৈতিক নেতার বাসায় একজনকে জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, এটা অত্যন্ত গুরুতর একটা অভিযোগ। এটা পরিবারের দিক থেকে এসেছে, যথেষ্ট রিলায়াবল, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে যে আমার সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরকম অনেক কিছু আপনারাও ইতিমধ্যে দেখেছেন। আমরা সেগুলো ডিফেন্ড করেছি। এখন দেখছেন, সামনেও হয়তো দেখবেন।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে (চাঁদাবাজির অভিযোগ) যেহেতু এখনো তদন্ত চলছে, এটা নিয়ে মন্তব্য করা উচিত নয়, তারপরও যেহেতু আমার নাম সুনির্দিষ্টভাবে সেখানে এসেছে, নাম আসার পরে আমি এক রকম অবাকই হই।’
তিনি বলেন, ‘জানে আলম আপুকে আমি চিনতাম যখন ছাত্র অধিকার পরিষদে ছিলাম, ২০২২ সালে যখন আমরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সেও ছাত্র অধিকার পরিষদ করত, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিতে প্রথমে ছিল। তখন চিনতাম, কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তার সঙ্গে আমার কোনো কথা বা দেখা হয়নি।’
উপদেষ্টা আসিফ বলেন, ‘এ ধরনের একটা ক্লেইম আসার পর আমরা আরেক জায়গা থেকে জানতে পারলাম আজকে তার স্ত্রী পরিচয় একজন সংবাদ সম্মেলন করেছেন, আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি আসলে কি ঘটনা। তিনি সেখানে দাবি করেছেন অপুকে গুম করে এ স্টেটমেন্ট (চাঁদাবাজিতে তাকে জড়িয়ে বক্তব্য) আদায় করা হয়েছে। এ রকম কিছু যদি হয়ে থাকে, তবে সেটা আসলেই অত্যন্ত শঙ্কাজনক। ৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আমরা যদি আবার আগের মত... এটা আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্ট রুমেও তো আপনারা জানেন, এখানে আয়না ঘর ছিল। সেগুলো ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ফলে অকার্যকর। সেই প্র্যাকটিসের দিকেই আমরা যাচ্ছি কিনা, সেটাও ভাবনার বিষয়।’
আরও পড়ুন
সেদিন হোটেল ওয়েস্টিনের সামনে আপনি গিয়েছিলেন কিনা, সিসিটিভির ফুটেজে দাবি করা হচ্ছে, সেদিন ভোররাতে আপনি মোটরসাইকেলে করে সেখানে গিয়েছিলেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাতে যখন আমার কাজ শেষ হয়ে যায়, কখনো কখনো ভোর হয়ে যায়। ওই সময় আসলে বাসায় খাবার-দাবার দেওয়ার মত কেউ থাকে না। আমি বেশিরভাগ সময়ই তিনশফিটে নীলা মার্কেট নামে একটা জায়গায় আছে, সেখানে যাই। সেখানে হাঁসের মাংস খুব ভালো পাওয়া যায়, সেখানে আমরা চার-পাঁচ জন মিলে যাই। ওইটা আবার বেশি ভোর হয়ে গেলে বন্ধ থাকে। তখন ওদিকে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়। তবে ওই দিন আমি গিয়েছিলাম কিনা, সেখানে ছিলাম কিনা- সেটা আমি বলতে পারব না।’
সেটা ছিল ১৭ জুলাই- জানাতেই তিনি বলেন, ‘দেখেন সিসিটিভির ফুটেজে হেলমেট পড়া যদি যে কাউকে আমি বলে দাবি করা হয়, এটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য। আমি এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না, কারণ এটা তদন্তাধীন।’
রাজধানীর গুলশানে সাবেক একজন এমপির বাসায় চাঁদা আদায়ের ঘটনায় ওই মামলায় গ্রেফতার বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, চাঁদাবাজির ঘটনার পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন জানে আলম অপু।
৩৫ মিনিটের ওই ভিডিওতে ঘটনার আদ্যোপান্ত বর্ণনা করেন তিনি।
ভিডিওতে জানে আলম অপু বলেন, গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় টাকার ব্যাগ নিতে যে ছেলেকে দেখেছেন, সেটা আমি। আপনার একটি ফুটেজের মাধ্যমে দেখেছেন যে সমন্বয়করা চাঁদাবাজিতে জড়িত। যে সমন্বয়ক গত বছর ছিল মহানায়ক তারা হয়ে গেলো চাঁদাবাজ।
তিনি বলেন, আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আপনারা কি জানেন, ওইদিন ভোর ৫টায় ওই জোনের ডিসি-এসিকে অবগত করে একদম অফিসিয়াল প্রসেসে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শাম্মির (সাবেক এমপি) বাসায় আমরা অভিযান চালাই। আপনারা কি জানেন, সেই অভিযানে যাওয়ার আগে গুলশানের কোনো একটি জায়গায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমার কথা হয়।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগে সংবাদ সম্মেলন স্ত্রী আনিসা জানান, জুলাইয়ের ৩১ তারিখ রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত অপুকে বন্দি করে যে স্বীকারোক্তি নিল, এটা কারা নিল? আর গোপীবাগ কার বাসা? গোপীবাগ ইশরাক হোসেনের বাসা না?
অপুর স্ত্রী আরও বলেন, ‘অপুকে তো ইশরাক হোসেনের বাসার সামনে থেকেই ধরেছে। আর আপনারা দেখেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ভিডিও-ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে, এগুলো সব ইশরাকের বাসায়ই।’
আরএমএম/এনএইচআর/এমএস