ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

নারীদের কর্মঘণ্টা নিয়ে কেন এত আলোচনা?

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৪১ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

নারীদের কর্মঘণ্টা কত হবে, কেনই কম বা বেশি এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বক্তব্যে বলেন জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টা করা হবে। এর বিপরীতে বক্তব্য দিয়েছে বিএনপিও। নারীর অধিকার প্রশ্নে এখন রাজনীতির মাঠে টক অব দ্য টাউন এই ইস্যু।

২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে ‘কোয়ালিশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন’-এর আয়োজনে গণসংবর্ধনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সন্তানের হক আদায় করার জন্য নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেবো উল্লেখ করে বলেন, কর্মক্ষেত্রে আমারও আট ঘণ্টা তারও (নারীর) আট ঘণ্টা, এটা কি তার ওপর অবিচার নয়? আমরা ক্ষমতায় গেলে ইনশআল্লাহ তাদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেবো। তার সন্তানের হক আদায় করার জন্য এবং মা হিসেবে তাকে সম্মান করার জন্য এটাই হবে তাদের প্রতি ইনসাফ। এটা কোনো দয়া নয়।

আরও পড়ুন:
ক্ষমতায় গেলে নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করা হবে

তিনি আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা যদি আট ঘণ্টার জায়গায় তাদের জন্য পাঁচ ঘণ্টা করি তাহলে মায়েরা এতই সিনসিয়ার এতই কমিটেড যে, তারা চিন্তা করবে সরকার আমাদেরকে সম্মান দিয়েছে, আমাদের উচিত আট ঘণ্টার কাজ পাঁচ ঘণ্টায় করে দেওয়া।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের ব্যাপারে বদনাম দেওয়া হয় যদি আমরা ক্ষমতায় যাই, মহিলাদেরকে তালা দিয়ে ঘরের ভিতরে রেখে দেবো। অতো তালা কিনার পয়সা কোথায় পাবো? আমাদের কি মা-বোন নেই? আমাদের সবার মা-বোন আছে। তারা কি শিক্ষাদীক্ষা নেয়নি? তারা কি সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে না? আলহামদুলিল্লাহ সবাই রাখছে।

জামায়াত আমিরের এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ড. মির্জা গালিব। ২৭ অক্টোবর, মির্জা গালিব তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, জামায়াতের আমির কর্মক্ষেত্রে নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার প্রপোজাল দিয়েছেন। আমরা প্রথমে দেখতে চাইবো, তাদের নিজেদের কোনো প্রতিষ্ঠানে এইটার বাস্তবায়ন। এইটা কাজ করে কি না? বাস্তবায়ন করতে গেলে এইটার কি কি পজিটিভ-নেগাটিভ দিক দেখা যায়।

আরও পড়ুন:
নারীদের কর্মঘণ্টা আগে জামায়াতের প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন করতে হবে

তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। রাজনৈতিক দলের নেতারা নানান প্রপোজাল/কমিটমেন্ট দেবেন এখন। কিছু কিছু প্রপোজাল কথার কথা, আর কিছু কিছু প্রপোজাল সিরিয়াস। এখন, কোন প্রপোজাল সিরিয়াস কি না এইটা আমরা কীভাবে বুঝবো? এইটা বোঝার উপায় হলো, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নযোগ্য কি না, সেই ডিটেইলস প্রপোজালে আছে কিনা, সেইটা দেখা। আর এই প্রপোজাল বাস্তবায়নের জন্য কোনো ছোট আকারে পাইলট প্রজেক্ট করা হইছে কি না?’

অপরদিকে, জামায়াত আমিরের বক্তব্যের জেরে নারীদের কর্মঘণ্টা নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ নেতাও। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক মৌনমিছিল পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তারা চায় যেন এদেশের নারীরা অন্দরমহলে বন্দি থাকে, দেশের অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে যেন এই দেশে নারীর অগ্রগতি না হয়।

সালাহউদ্দিন বলেন, সেই জন্য তারা বলছে নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। অথচ, দেখা যায় সেই কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে, নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে। তারা তাদের কর্মস্থলে সম্মানের সঙ্গে চাকরি করবে এবং সঠিক কর্মসংস্থানের জন্য কর্মঘণ্টা অনুযায়ী কাজ করবে এবং যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করবে। আমরা চাই, নারীর কর্মসংস্থা বৃদ্ধি করা হোক। যদি কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে যারা অফিস আদালত, কলকারখানা পরিচালনা করেন তারা নারীদের চাকরি দিতে চাইবেন না। ফলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস এর তথ্য বলছে, দেশে মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৪৪ দশমিক দুই শতাংশই নারী। আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় আড়াই কোটির মতো নারী কর্মে যুক্ত।

তবে এ ধরনের অবস্থান আদতে নারীদের নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ তৈরি করবে বলেই মনে করেন নারী অধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, নারীদের কর্মঘণ্টা না কমিয়ে বরং কর্মক্ষেত্রে বেতন, পদোন্নতিসহ নানা বিষয়ে তাদের প্রতি যে বৈষম্য রয়েছে, সেটি কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে ভাবা দরকার।

আরও পড়ুন:
‘জান্নাতের টিকিট বিক্রি’ করে ভোটের বৈতরণী পার হতে চায়

বিষয়টি নিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমি হিসাব করে দেখেছি নারীদের পাঁচ কর্মঘণ্টার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে শুধু গার্মেন্টস সেক্টরেই অন্তত ১৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে।

এর ফলে কর্মক্ষেত্রে নারীরা আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বলেও মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। তবে অনেকে মনে করছেন, যেহেতু সামনে নির্বাচন সেকারণে এটি নিছক ভোটের মাঠে রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতির আলাপও হতে পারে।

এসএনআর/এমএস