সালাহউদ্দিন আহমদ

‘জান্নাতের টিকিট বিক্রি’ করে ভোটের বৈতরণী পার হতে চায়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক মৌনমিছিল পূর্ব সমাবেশে কথা বলছেন সালাহউদ্দিন আহমদ, ছবি: জাগো নিউজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘দেশে একটি রাজনৈতিক দল যারা ধর্মের নামে রাজনীতির ব্যবসা করে জান্নাতের টিকিট বিক্রি করে ভোটের বৈতরণী পার হতে চায়, তাদের হাতে নারীরাও নির্যাতিত হচ্ছে।’

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান: প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক মৌনমিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, তারা চায় যেন এদেশের নারীরা অন্দরমহলে বন্দি থাকে, দেশের অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে যেন এই দেশে নারীর অগ্রগতি না হয়।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সারা বাংলাদেশে যে নারী নির্যাতন বর্তমানে হচ্ছে বা অতীতে হয়েছে তার কোনো কার্যকর প্রতিবাদ এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। কিছু কিছু আইন প্রণয়ন হয়, কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে আইন কঠিন হলে সঠিকভাবে কার্যকর হয় না। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে নারী নির্যাতনকারীরা, ধর্ষকরা বেরিয়ে যেতে পারে।

সালাহউদ্দিন বলেন, সেই জন্য তারা বলছে নারীর কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিতে হবে। অথচ, দেখা যায় সেই কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে, নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে। তারা তাদের কর্মস্থলে সম্মানের সঙ্গে চাকরি করবে এবং সঠিক কর্মসংস্থানের জন্য কর্মঘণ্টা অনুযায়ী কাজ করবে এবং যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করবে। আমরা চাই, নারীর কর্মসংস্থা বৃদ্ধি করা হোক। যদি কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে যারা অফিস আদালত, কলকারখানা পরিচালনা করেন তারা নারীদের চাকরি দিতে চাইবেন না। ফলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে।

উপস্থিত নারীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে তিনি জানতে চান আপনারা কী চান নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাক, তখন নারীরা সমস্বরে জবাব দেন ‘না’। যারা কর্মঘণ্টা কমানোর বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য খারাপ বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, তারা চায় নারীরা অন্দরমহলে বন্দি থাকুক। সমাজের অগ্রগতি তারা চায় না। দেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে গেলে বাংলাদেশের মোট জনসমষ্টির অর্ধেক পুরুষ-অর্ধেক নারী তাদের সবার প্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের সামাজিক রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের পারিবারিক মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।

শিক্ষা-দিক্ষায়, কর্মসংস্থান সমাজের সর্বত্র যাতে নারীরা নিরাপদ থাকে, সেই জন্য আমরা আগামীতে ৩১ দফার ভিত্তিতে নারীদের জন্য পরিকল্পনা করছি বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, সেই হিসেবে বাংলাদেশ হবে অগ্রগতির চরম শিখরে উঠা একটি দেশ। সেখানে অংশগ্রহণ থাকবে নারী-পুরুষের সমান।

রাজশাহীর কাটাখালীতে ধানের শীষের প্রচার চালাতে গিয়ে দুই নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজশাহীতে আমাদের বোনদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। জুতা-পেটা করছে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী, যারা ধর্মের নামে রাজনীতি করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই, বাংলাদেশে এমন একটি সমাজ বিরাজ করুক, যেখানে আমরা সবাই সমান। ধর্মের ভিত্তিতে এখানে কোনো বিভাজন থাকবে না। এখানে জাতের ভিত্তিতে কোনো বিভাজন থাকবে না। এখানে ধর্ম-বর্ণ, সংস্কৃতি ভাষাভাষী সকলে মিলে আমরা বাংলাদেশি। সুতরাং আমরা সবাই বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে সবাই সমান অধিকার ভোগ করবো। এ জন্যই আমরা সংগ্রাম করেছি। এজন্য আমরা রক্ত দিয়েছি।

নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম এই মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে মুখে কালো কাপড় বেঁধে শাহবাগ থেকে মৌনমিছিল বের করা হয়, যা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক ও বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান সভাপতিত্ব করেন। ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন শিরীন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, সানজিদা ইসলাম তুলি, রেহানা আক্তার শিরীন প্রমুখ।

কেএইচ/এসএনআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।