দেশে-বিদেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন যারা
নির্বাচন কমিশন ভবন। ফাইল ছবি
আগামী বছরের ৫ কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এমন সম্ভাবনাকে ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যদিও সুনির্দিষ্ট তারিখ জানায়নি ইসি, তবে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য বিশ্লেষণে এমন ইঙ্গিত মিলছে। শেষ মুহূর্তে একই দিনে গণভোট যুক্ত হওয়ায় কমিশনকে নতুন রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হচ্ছে। গণভোট ও সীমানা–সংক্রান্ত জটিলতা তফসিলেও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিলের আগের দিন যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদের ভোটাধিকারও নিশ্চিত করবে ইসি।
ভোট দেওয়ার জন্য যা যা লাগবে
• অনলাইন জন্মসনদ।
• বাবা–মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
• পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের মেয়র/চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব বা জাতীয়তা সনদ।
• পৌরসভা/ইউনিয়ন মেয়র/চেয়ারম্যান কর্তৃক নতুন ভোটার হওয়ার প্রত্যয়নপত্র (আবেদনকারীর বিস্তারিত তথ্যসহ)।
• স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি বা কাবিননামা (বিবাহিত হলে)।
• বিদ্যুৎ বিলের কপি এবং বিলদাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি।
• বাড়ির কর রশিদের কপি।
• রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার প্রতিবেদন।
• পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা শিক্ষাগত সনদের কপি (যদি থাকে)।
• অঙ্গীকারনামা—অত্র গ্রাম ও ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং প্রথমবার ভোটার—এ মর্মে।
• প্রয়োজনে অফিস কর্তৃক চাওয়া অতিরিক্ত কাগজপত্রাদি দিতে হবে।
ইসি জানায়, নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য services.nidw.gov.bd সাইটে গিয়ে সঠিকভাবে অনলাইন ফরম পূরণ করতে হবে। ফরম-পূরণের পর ডাউনলোড করে প্রিন্ট নিলে শনাক্তকারীর আইডি ও স্বাক্ষর ৩৪ ও ৩৫ নম্বর ঘরে এবং যাচাইকারীর (কাউন্সিলর/মেম্বার) নাম, আইডি নম্বর, স্বাক্ষর ও সিল ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর ঘরে দিতে হবে।
ফরমে আগে কেন ভোটার হতে পারেনি তার কারণ ক্রমিক ৩২ এ বাদ পড়ার কারণে লিখতে হবে। অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার পর ভোটারের ছবি তোলার মেসেজ যাওয়ার তারিখে উপস্থিত হতে না পারলে আবেদনটি পরবর্তীতে কোনো কারণ ছাড়া বাতিল করা হবে। তাই সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত হয়ে ভোটারের ছবি তুলতে হবে। বিষয়টি অতীব জরুরি।
ভোটার হতে পারবেন যেসব প্রবাসী ও প্রয়োজনীয় দলিলাদি
• অনলাইন জন্মসনদ।
• শিক্ষা সনদ (যদি থাকে)।
• পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের মেয়র/চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদ।
• মেয়াদ সম্বলিত বৈধ পাসপোর্টের কপি।
অনলাইনে ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদন করা ফরম থেকে পূরণ করে প্রিন্ট করতে হবে। ফরমের ৩৪ নম্বর কলামে শনাক্তকারীর (বাবা, মা, ভাই, বোন বা পরিচিত কেউ) সই ও এনআইডি নম্বর উল্লেখ করতে হবে। আবেদন করা ফরম প্রিন্ট করে ৪১ নম্বর কলামে যাচাইকারীর (কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান) সই ও সিল লেপনসহ এনআইডি নম্বর উল্লেখ করবেন। ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোন, ট্যাক্স রশিদের কপি)। বাবা, মা, স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি কপি (মৃত হলে মৃত্যুর সন উল্লেখ করতে হবে) এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সুরক্ষা সেবা বিভাগ হতে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদের ক্ষেত্রে- সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণকালে পঠিতব্য শপথ বাক্যে নিজ দেশের (বাংলাদেশের) আনুগত্য প্রত্যাহারের বিষয় উল্লেখ না থাকলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি প্রত্যাহারের বিষয় থাকে তাহলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের প্রয়োজন হবে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ প্রয়োজন নেই। বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জনকারী বিদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে নেওয়া নাগরিকত্ব সনদ আবশ্যক।
কীভাবে পোস্টাল ব্যালটের জন্য নিবন্ধন
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রবাসী ভোটার যে দেশ থেকে ভোট দিতে ইচ্ছুক, কেবল সেই দেশের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট প্রাপ্তি এবং ভোট দেওয়ার জন্য গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে পোস্টাল ভোট বিডি মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড ও ইনস্টল করতে হবে। ব্যবহারকারী বাংলা অথবা ইংরেজি যে কোনো একটি ভাষা নির্বাচন করে অ্যাপে নিবন্ধনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্দেশাবলি সম্পর্কে জানতে পারবেন। আবেদনকারী ভোটার নিয়মানুযায়ী নিবন্ধন করবেন। ওটিপি, লাইভলিনেস ও এনআইডি যাচাই করে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। বিদেশে ব্যালট-প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে নির্ভুল ঠিকানা দেওয়া আবশ্যক।
পোস্টাল ব্যালটে কীভাবে ভোটগ্রহণ
পোস্টাল ভোট বিডি মোবাইল অ্যাপে নিবন্ধিত সব ভোটারের কাছে পর্যায়ক্রমে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধিত ভোটাররা তাদের ঠিকানায় নির্বাচন কমিশনের পাঠানো পোস্টাল ব্যালটসহ খাম পাবেন। খাম পাওয়ার পরপরই ভোটাররা পোস্টাল ভোট বিডি মোবাইল অ্যাপে লগইন করে খামের ওপর থাকা কিউআর কোডটি স্ক্যান করবেন। এতে তিনি যে ব্যালট পেপারটি হাতে পেয়েছেন তা সিস্টেমে শনাক্ত হবে।
ভোটাররা নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া বহির্গামী খামে একটি পোস্টাল ব্যালট সংবলিত খামের মধ্যে পোস্টাল ব্যালট পেপার, একপাশে ভোট দেওয়ার নির্দেশনা, অপর পাশে একটি ঘোষণাপত্র সংবলিত একটি পৃথক কাগজ এবং একটি ফেরত খাম পাবেন, যেখানে সংশ্লিষ্ট আসনের রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানা মুদ্রিত থাকবে।
ব্যালট পেপারে সব প্রতীক মুদ্রিত থাকবে যার প্রতিটি প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘর থাকবে। ভোট দেওয়ার আগে ভোটাররা নির্দেশনাপত্র পড়ে ঘোষণাপত্রে যথাযথভাবে ব্যালট পেপারের ক্রমিক নং, ভোটারের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করে সই করবেন। নিরক্ষর অথবা অক্ষম ব্যক্তি অন্য একজন বৈধ ভোটারের সাহায্যে ঘোষণাপত্রের সংশ্লিষ্ট অংশ পূরণের পর সত্যয়ন করে সই করবেন। এই ঘোষণাপত্র বাঁ সত্যয়নপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ছাড়া ব্যালট পেপারটি বৈধ হিসেবে গণ্য হবে না। আর প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হলে অ্যাপের মাধ্যমে অথবা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ভোটাররা জানতে পারবেন। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটাররা অ্যাপে লগইন করে সংশ্লিষ্ট আসনের প্রার্থীদের তালিকা দেখতে পাবেন এবং নির্দেশিকাতে প্রদত্ত পদ্ধতিতে ব্যালট পেপারে মুদ্রিত প্রতীকের পাশে ফাঁকা ঘরে টিক বাঁ কিংবা ক্রস চিহ্ন দেবেন। ভোট দেওয়ার পদ্ধতির ভিডিও টিউটোরিয়াল বা ডিজিটাল কন্টেন্ট থাকবে অ্যাপে। পোস্টাল ব্যালট পেপারে ভোটার ভোট চিহ্নিত করার পর শুধু ব্যালট পেপারটি ছোট খামে রেখে খামটি বন্ধ করবেন। এরপর এই ব্যালট পেপার সংবলিত খামটি এবং সই করা ঘোষণাপত্রটি রিটার্নিং অফিসারের ঠিকানা মুদ্রিত খামে প্রবেশ করিয়ে বন্ধ করতে হবে। এরপর খামটি ডাকযোগে দ্রুত পাঠাতে হবে।
উভয় খামই সেলফ অ্যাডহেসিভযুক্ত থাকবে। ফলে সেলফ অ্যাডহেসিভ অংশের উপরিভাগের টেপটি খুলে নিলেই খাম বন্ধ হবে। খামটি পাঠানোর জন্য কোনো ডাক মাশুল প্রেরককে দিতে হবে না। পোস্টাল ভোট গণনা শুরু করার আগ পর্যন্ত প্রাপ্ত পোস্টাল ব্যালট পেপারগুলোই কেবল গণনার আওতায় আসবে। নির্বাচন কমিশন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে পোস্টাল ব্যালট ভোটারের কাছে পাঠানোর পর থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ফেরত আসা পর্যন্ত সমগ্র প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যালটের অবস্থান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
পোস্টাল ব্যালট পেপার গণনার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি গণনাকক্ষ প্রস্তুত করা হবে। পোস্টাল ভোট গণনার সময় প্রার্থী, নির্বাচনি এজেন্ট, প্রার্থীর প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, পর্যবেক্ষকরা অন্যান্য কেন্দ্রের মতো একই নীতিমালা অনুসরণ করে উপস্থিত থাকতে পারবেন।
পোস্টাল ব্যালট পেপার গণনা শেষ হলে অন্যান্য সাধারণ কেন্দ্রের মতো পোস্টাল ব্যালটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো সাধারণ ভোটকেন্দ্রের ফলাফলের পাশাপাশি পোস্টাল ব্যালটে প্রাপ্ত ভোটের হিসাব ঘোষণা ও অন্যান্য কেন্দ্রের ফলের সঙ্গে এক করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করবেন। পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রাপ্ত ভোটের হিসাব এক না করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা যাবে না। দেশে বিদেশে ভোটার হতে গেলে এনআইডি থাকা আব্যশক। দেশে এনআইডি ছাড়া ভোট দেওয়া যাবে না, অন্যদিকে এনআইডি ছাড়া প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটের জন্য লগইন করতে পারবেন না।
এমওএস/এমএএইচ/এমএস