বন্দর ইজারা দিয়ে সরকার গণঅভ্যুত্থানের বিপরীতে কাজ করছে: বাসদ
বাসদের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে অতিথিরা/ছবি: সংগৃহীত
জনমত উপেক্ষা করে ও দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দিয়ে সরকার গণভ্যুত্থানের চেতনার বিপরীতে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতারা। বর্তমান সরকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে নতজানু হয়ে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর পুরাতন বটতলী রেলস্টেশন চত্বরে বাসদের ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও রুশ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ১০৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার ইনচার্জ আল কাদেরী জয়ের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য ও ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্য স ম ইউনুচ, হেলাল উদ্দিন কবির, নুরুল হুদা নিপু, জোবায়ের বীনা, মহিন উদ্দিন, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা শাখার সদস্যসচিব মনির হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের জেলা সদস্য আহমদ জসীম।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাসদ শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অবিচলভাবে কাজ করছে। এদেশের জনগণ দেখছে স্বাধীনতার পর সময় যত পেরোচ্ছে বৈষম্যও ততই বেড়ে চলেছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর থেকে দেশের জনগণ বারবার স্বৈরাচারি সরকার হটিয়েছে, অভ্যুত্থান করেছে। কিন্তু সঠিক নেতৃত্বের অভাবে আন্দোলনের সুফল ঘরে তুলতে না পেরে বারবার প্রতারিত হয়েছে। ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তারাও গণমানুষের স্বার্থের বদলে সংস্কার, আদেশ, গণভোট বিতর্কে সময়ক্ষেপণ করছে।
বক্তারা আরও বলেন, শ্রমিকের চাকরি, মজুরি, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, বেকারত্ব দূর, প্রবাসীদের যন্ত্রণা লাঘব, ছাত্রদের শিক্ষার খরচ কমানো, ওষুধের দাম ও চিকিৎসা ব্যয় কমানো, নারী লাঞ্ছণা, অপমান ও নির্যাতন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে রাষ্ট্র কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। কিন্তু জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্য থেকে মুক্তি, বিশেষ করে দুঃশাসন, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির হাত থেকে মুক্তি; আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, জনগণের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা, হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। কিন্তু পুঁজিবাদী পথে বুর্জোয়া শাসন-শোষণে, সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহারের মাধ্যমে গত ৫৪ বছর ধরে শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দেশ পরিচালনা করে চলেছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ২৪ এর অভ্যুত্থানের পরও বৈষম্যবিরোধী চেতনার বিপরীতেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। একদিকে চলছে দুর্নীতি, দখল, চাঁদাবাজি, অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরসহ তিনটি বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। কথিত মানবিক করিডোর, অস্ত্র কারখানা, স্টারলিংককে দেশের বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলে দিচ্ছে। এরইমধ্যে গোপন চুক্তির মাধ্যমে লালদিয়া চর ৪৮ বছর ও পানগাঁও টার্মিনাল ২২ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হলেও সম্প্রতি নির্বাচন বানচালের নানামুখী ষড়যন্ত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুনাখুনিসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমশই অবনতি ঘটছে। নির্বাচন বানচালের যে কোনো ষড়যন্ত্র দেশকে আরও ভয়ানক সংকটে ঠেলে দেবে।
এমডিআইএইচ/এমএমকে/এএসএম