ভিডিও EN
  1. Home/
  2. জাতীয়

ডেইলি স্টার-প্রথম আলোর ষড়যন্ত্রের শেষ নেই : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৩:৩৯ পিএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অভিযোগ করেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে, এদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। কোনো রকমে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে অসাংবিধানিক সরকার আসলে তাদের কপাল খুলবে, সেই ষড়যন্ত্রেই তারা লিপ্ত। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্রে কোনো কাজ হবে না।

জাতীয় সংসদে সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনার ও অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি।

সম্প্রতি একটি টকশোতে গিয়ে সেনাসমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ডেইলি স্টার পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনের জন্য পত্রিকাটির সম্পাদক ভুল স্বীকার করলে সারাদেশে তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা হয়। মূলত ওই অনুষ্ঠানে আলোচনার একপর্যায়ে সম্পাদক মাহফুজ আনামের ভুল স্বীকারের মধ্য দিয়েই এক-এগারো প্রসঙ্গ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে।    

সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি পত্রিকায় ২০টি বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে এ দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না। ভালো কিছু লিখলেও শেষে দিকে আমাকে খোঁচা দেবে। এ খোঁচা খেয়ে আমি আত্মবিশ্বাস হারাব। তবে পড়বো কেন? আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে তারা পত্রিকায় যতকিছু লিখেছে সেগুলো নাকি ডিজিএফআই সাপ্লাই দিয়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে লেখা থাকে নির্ভিক সাংবাদিকতা। আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে। এই লেখাগুলো ছাপালো কিন্তু সূত্র লেখা হলো না কেন?

প্রথমে কেন আমাকে গ্রেফতার করা হলো?
এক-এগারোর কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রথমেই আমার ওপর আঘাত আসে। আমি তো সরকারে ছিলাম না, বিরোধী দলে ছিলাম। তবে কেন প্রথমে আমাকে গ্রেফতার করা হলো। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে ওই দুটি পত্রিকা একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে গেছে। ডিজিএফআইয়ের বিগ্রেডিয়ার বারী ও আমিনের হাত থেকে ওই সময় কেউ-ই রেহাই পায়নি। ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ছাত্রদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের সঙ্গে কী সখ্যতা ছিল তা কী প্রথম আলোর মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামরা দিতে পারবেন?

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ডিজিএফআইয়ের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে নতুবা মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গে জড়িত ছিল- এমন সন্দেহ করে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকলে অসত্য সংবাদ ছাপাবে কেন? বিগ্রেডিয়ার আমিন ও বারীর চোখের আলো হয়ে ছিলেন ওই দুটি পত্রিকা। এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ক্ষমতায় যেতে চাইলে তারা রাস্তায় নামুক, জনগণের কাছে যাক। মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে আমরা রাজনীতি করি। রাজনীতি করার এতো শখ, ক্ষমতায় যাওয়ার এতো শখ থাকলে মানুষের ভোট নিয়ে আসুক।

ষড়যন্ত্রে আরো একজন জড়িত
কারো নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আরেকজন জড়িত। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য মাঠে নেমেছিলেন। একজন সম্পাদক লোক যোগাতে নেমেছিল। কিন্তু কেউ আসেনি। ওই ভদ্রলোককে আমিই মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়েছিলাম। ব্যাংকের এমডি পদ আইন লঙ্ঘন করে ১০ বছর পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। আইন লংঘন করলেন, মামলায় হারলেন। আর সব দোষ শেখ হাসিনার ওপর। এমডি পদ হারানোর ক্ষোভ পড়লো পদ্মা সেতুর ওপর। আমেরিকার বন্ধুকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করালেন। নোবেল পুরস্কার পেয়েও একটি এমডির পদ ছাড়তে পারেন না। ওখানে কী মধু আছে। এতো বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তবে মর্যাদাটা কোথায় থাকলো? অনেকে ভেবেছিল বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা না নিয়ে বাংলাদেশ চলতে পারবে না। এদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। এ আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।

বিএনপি-জামায়াতের ভুলের খেসারত জনগণ দেবে না
রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবটিতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে আসেনি, এটা তাদের রাজনৈতিক ভুল। সেই ভুলের খেসারত জনগণ দেবে না। রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদেরই দিতে হবে। তাদের খুন-খারাবি, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেশের জনগণ গ্রহণ করেনি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দেখা যাচ্ছে দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করছে।

ধন্যবাদ রওশনকে
নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও নেতা রওশন এরশাদকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট একটি জঙ্গি সংগঠন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এরা এখনও সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যেই হত্যা, খুন, অস্ত্র, বোমাসহ ধরা পড়ছে তাদের সবার গোড়া খুঁজলে দেখা যাচ্ছে আগে হয় ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্রদল করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই কারণ তারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে রক্ষা করছেন।
 
বর্তমান সংসদকে অধিক কার্যকর দাবি করে সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সংসদ অধিবেশন দেশের জনগণ দেখতে পারেন। বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখন তাদের সংসদে খিস্তিখেউড়, নোংরা ও অসভ্য বক্তব্য, গালিগালাজ, হুমকি-ধমকি কোনো ভদ্রলোক দেখতে বা শুনতে পারতেন না। এখন সেই অবস্থা নেই। দেশের জনগণ এখন সংসদের কার্যবিবরণী কান পেতে শুনতে পারছেন। বিরোধী দল সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসা করছে। সংসদে বিরোধী দল গঠনমূলক ভূমিকা রাখছে।

শিশু হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার অনুরোধ
শিশু হত্যাকারীদের যেন দেশের আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে সেই আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সামান্য কারণে শিশু হত্যা করে তারা সমাজের ঘৃণ্য জীব। এর আগে কয়েকজন শিশু হত্যাকারীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। আমি আদালতের কাছে অনুরোধ জানাবো, শিশু হত্যাকারীদের যেন তারা সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়। যাতে ভবিষ্যতে কেউ শিশু হত্যার সাহস না পায়।

পাড়া-মহল্লায় শিশু নির্যাতন বন্ধে দেশের মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হঠাৎ করেই শিশু হত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতো ছোট ছোট শিশুদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর জিঘাংসা কেন? এসব খুনিরা সমাজের সবচেয়ে ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট জীব, এদের প্রতি আমি ঘৃণা জানাই।

রাস্তায় বের হয়ে দেশের মানুষ কেমন আছে তা দেখে আসতে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের পরামর্শের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশের অবস্থা আগের মতো নেই। এখন প্রযুক্তির যুগ। এখন কোনকিছু দেখতে নিজে যেতে হয় না। কাউকে একটি মোবাইল দিয়ে পাঠালে ঘরে বসেই সবকিছু দেখা যায়। আমি ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টুঙ্গিপাড়ার মাজার দেখতে পাই, অনেক কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করি। দেশের কোনো মানুষ ফুটপাতে না থাকে, ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত না থাকে, সেই নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব মানুষকে নিয়ে গিয়ে আমরা ভালো রাখলেও পরে বেরিয়ে এসে সেই পুরনো কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এটাই সমস্যা।

এইচএস/এনএফ/পিআর

আরও পড়ুন