দয়া করে আর নিচে নামবেন না

অষ্টধার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শমসের আলী গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। এ টাইপের মানুষরা সাধারণত শব্দ করে হাসেন না। শমসের আলীও এতদিন তাই করে এসেছেন। তার ছাব্বিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে কেউ তাকে শব্দ করে হাসতে দেখেনি। অথচ এই শমসের আলীই আজ সবাইকে অবাক করে দিয়ে হো হো শব্দে হেসে উঠলেন।
ঘটনাটা ঘটল ইন্টারভিউ বোর্ডে। স্কুলে একজন বিজ্ঞান শিক্ষক নেওয়া হবে। স্থানীয় দৈনিক জাহান পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর মোট তেরজন প্রার্থী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে মৌখিক পরীক্ষা দিতে হাজির হয়েছে। এদের মধ্যে নকলা থেকে আসা একজন প্রার্থীকে শমসের আলী জিজ্ঞেস করলেন, শিক্ষকতাকে তিনি কেন পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান? উত্তরে সেই প্রার্থী নিরীহ ভঙ্গিতে জানায়, শিক্ষক হওয়ার কোনো ইচ্ছাই তার ছিল না। কিন্তু ইচ্ছে না থাকলেও সারাজীবন তাকে শিক্ষক হয়েই কাটাতে হবে। কারণ এটাই তার নিয়তি। বিষয়টির ব্যাখ্যা দাবি করলেন শমসের আলী। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সেই প্রার্থী তখন বললেন-
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
: স্যার, ছাত্রজীবনে আমি একবার ইতরামি করে এক বিধবা মহিলার বাড়ির উঠানের শশা গাছের প্রথম শশাটি চুরি করে খেয়ে ফেলেছিলাম। ঘটনাটা জানাজানি হবার পর সেই বিধবা আমাকে একদিন সামনে পেয়ে সুর করে বলে ওঠল-
চাইয়া খাইলে খাওয়া হয় মায়ের বুকের দুধ,
চুরি কইরা খাইলে খাওয়া হয় কুত্তার মুত।
স্যার, সারমেয়কুলের তরল পদার্থটির ব্যাপারে আমি আপত্তি উত্থাপন করে তার কথা তাকে ফিরিয়ে নিতে বললে সে তখন জানাল, এক শর্তে সে তার কথা ফিরিয়ে নিতে রাজি আছে। শর্তটা হচ্ছে, বড় হয়ে আমাকে শিক্ষক হতে হবে। আর চুরি করা যে খারাপ কাজ এটি ছাত্রদের বোঝাতে হবে।
নকলার এই প্রার্থীর নাম শামসুল হক। শমসের আলীর হাসি দেখেই বোর্ডের সবাই বুঝতে পারল, শামসুল হকের উপর তিনি সবিশেষ প্রীত হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত অষ্টধার হাইস্কুলে শামসুল হকের চাকরিটা হয়ে গেল। চাকরি হবার পর শামসুল হককে ক্লাস টেনে পাঠানো হলো ফিজিক্সের ক্লাস নেওয়ার জন্য। প্রাথমিক আলাপ পরিচয় শেষে পাঠ্যসূচি অনুযায়ী শামসুল হক পদার্থের রূপান্তর সম্পর্কে ছাত্রদের পাঠদান শুরু করলেন। তিনি পানির উদাহরণ দিয়ে বললেন-
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
: পানি সাধারণ অবস্থায় তরল থাকে। কিন্তু এই পানিকে তাপ দেওয়া হলে বাষ্পে পরিণত হয়। আবার নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করলে বরফের আকার ধারণ করে।
এবার ছাত্রদের পালা। শামসুল হক ছাত্রদের কাছে জানতে চাইলেন, তারা কেউ পদার্থের রূপান্তর সম্পর্কে নতুন কিছু বলতে পারবে কিনা? শামসুল হকের আহ্বানে যে ছাত্রটি সাড়া দিল, তার নাম হুরমুজ আলী। হুরমুজ ছাত্র হিসেবে খারাপ না; তবে চান্স পেলে ফজুল টাইপের কথাবার্তা বলতে সংকোচ বোধ করে না। সে প্রথমেই শামসুল হকের কাছে জানতে চাইল-
: স্যার, চুল কি একটা পদার্থ?
: যদি আকার,আয়তন এবং ওজন বিবেচনায় আনা হয়, তাহলে চুল অবশ্যই একটা পদার্থ বা বস্তু।
কাঁধ ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলেন শামসুল হক। শামসুল হকের উত্তর শুনে হুরমুজ আলী বলল-
: স্যার, আমি এই বস্তুর রূপান্তর সম্পর্কে বলতে চাই।
: গুড। বলো...
: এই বস্তুটি যখন আমাদের মাথায় থাকে তখন আমরা তাকে চুল বলি।
: অবকোর্স বলি।
: তারপর চোখের ওপরে থাকলে ভুরু আর চোখের পাতায় থাকলে পাঁপড়ি বলি।
: রাইট।
: তারপর মুখমন্ডলে যখন থাকে, তখন বলি, দাড়ি-গোফ।
: দাড়ি অ্যান্ড গোফ? হ্যাঁ, ঠিক আছে।
: এরপর বগলে এবং বুকে যখন থাকে বলা হয় লোম।
: বগল..., বুক...; ইউ আর কারেক্ট।
: এরপর স্যার নাভি...
হুরমুজ আলী এ পর্যন্ত বলতেই আঁতকে উঠলেন শামসুল হক। তিনি হুরমুজ আলীকে থামার নির্দেশ দিয়ে বললেন- স্টপ...! স্টপ...! বুঝতে পেরেছি। কাইন্ডলি আর নিচে নেমো না।
দুবাইয়ে আইসিসির টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে আমাদের টাইগাররা লেজ গুটিয়ে দেশে ফেরার পর মিরপুর স্টেডিয়ামে পাকিস্তানিদের বিপক্ষে যে লজ্জাজনক হার হেরেছে, এরপর শামসুল হকের মতো তাদের কাছে আমাদের একটাই নিবেদন- দয়া করে আর নিচে নামবেন না।
লেখক : সাংবাদিক, রম্যলেখক।
mokamia@hotmail.com
বিজ্ঞাপন
এইচআর/জিকেএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন