ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

উৎসবের অর্থনীতি ও সামাজিক বন্ধন

ঈদ-উল-আজহার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

ড. মতিউর রহমান | প্রকাশিত: ০৯:১৯ এএম, ০৭ জুন ২০২৫

ঈদ-উল-আজহা, যা কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত, বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক গভীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া যা সমাজের ভেতরে পারস্পরিক সম্পর্ক ও বিনিময়ের এক জটিল কাঠামো তৈরি করে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব হলেও, এর আচার-অনুষ্ঠান ও সামাজিক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এটি সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের (Social Exchange Theory) আলোকে এক গভীর বিশ্লেষণের ক্ষেত্র তৈরি করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এমন এক বিনিময় কাঠামোর ভেতরে, যেখানে প্রত্যেকটি লেনদেন—তা অর্থনৈতিক, সামাজিক বা প্রতীকী—কোনো না কোনোভাবে লাভ বা সুবিধা প্রত্যাশার সঙ্গে যুক্ত থাকে। এভাবে ঈদ-উল-আজহা বাংলাদেশের সমাজে এক বৃহৎ সামাজিক বিনিময় মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।

সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব একটি সমাজবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক কাঠামো, যা ব্যাখ্যা করে মানুষ কীভাবে পারস্পরিক লাভালাভের ভিত্তিতে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং বজায় রাখে। এই তত্ত্ব অনুসারে, মানুষ যেকোনো সামাজিক লেনদেনে অংশ নেয় তখনই, যখন তারা প্রত্যাশা করে যে সেই সম্পর্ক থেকে কোনো না কোনো উপকার বা পুরস্কার পাবে। একই সময়ে, তারা চায় যেন সে সম্পর্কের খরচ বা ক্ষতি যতটাসম্ভব কম হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী জর্জ ক্যাসপার হোম্যান্স (George C. Homans) সর্বপ্রথম ১৯৫৮ সালে Social Behavior as Exchange নামক প্রবন্ধে সামাজিক আচরণকে অর্থনৈতিক লেনদেনের মতো বিশ্লেষণ করে সামাজিক বিনিময় তত্ত্বকে তাত্ত্বিকভাবে উপস্থাপন করেন। তিনি এই তত্ত্বে দেখান, কীভাবে মানুষ সামাজিক সম্পর্ক ও আচরণকে লাভজনক হলে বজায় রাখে, এবং ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে তা থেকে সরে আসে। হোম্যান্স ছাড়াও এই তত্ত্বের পরবর্তীকালে আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন পিটার ব্লাউ (Peter Blau), যিনি ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত Exchange and Power in Social Life গ্রন্থে সামাজিক বিনিময়ে ক্ষমতার ভূমিকা বিশ্লেষণ করেন। এছাড়া, জন ডব্লিউ. থিবট (John W. Thibaut) এবং হ্যারল্ড এইচ. কেলি (Harold H. Kelley) নামে দুইজন মনোবিজ্ঞানী পারস্পরিক ও গোষ্ঠীগত সম্পর্ক বিশ্লেষণে সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব প্রয়োগ করেন।

সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের মাধ্যমে বোঝা যায়, মানবসম্পর্ক কেবল আবেগ-অনুভূতির উপর ভিত্তি করে নয়, বরং এক ধরনের সুপরিকল্পিত খরচ ও লাভ (Costs and Benefits)-এর ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এই তত্ত্ব আজও সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে সম্পর্ক বিশ্লেষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের মূল ধারণাগুলো হলো:

• পারস্পরিক আদান-প্রদান (Reciprocity): যেখানে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক দেয়া-নেয়ার প্রত্যাশা থাকে; অর্থাৎ, আমি যা দিচ্ছি, তার বিনিময়ে কিছু পেতে পারি—এই ধারণাটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
• তুলনামূলক মাত্রা (Comparison Level): অনুযায়ী, মানুষ তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশার আলোকে সম্পর্কের গুণমান নির্ণয় করে এবং বর্তমান সম্পর্কটি তাদের প্রত্যাশা পূরণ করছে কিনা, তা বিচার করে।
• খরচ ও পুরস্কার (Cost and Reward): প্রতিটি সামাজিক আচরণ বিশ্লেষণের ভিত্তি, যেখানে সেই আচরণ থেকে প্রাপ্ত ইতিবাচক ফল (যেমন: প্রশংসা, অর্থ, সম্মান) পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এর জন্য ব্যয়িত নেতিবাচক ফল (যেমন: সময়, শক্তি, অর্থ ব্যয়, সমালোচনা) খরচ নির্দেশ করে।
• যুক্তিবাদী সিদ্ধান্ত (Rational Choice): এই তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা মানুষকে এমন এক যুক্তিবাদী সত্তা হিসেবে দেখে, যারা সম্পর্কের লাভ-ক্ষতির হিসাব করে সিদ্ধান্ত নেয়।

ঈদ-উল-আজহা: ধর্মীয় প্রেক্ষাপট ও সামাজিক তাৎপর্য

ঈদ-উল-আজহার মূল ধর্মীয় প্রেক্ষাপট হল হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ঈমানের পরীক্ষা, যেখানে তিনি আল্লাহর আদেশে নিজের পুত্রকে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হন। যদিও বাস্তবে তাঁর কোরবানি গ্রহণ করা হয়নি, তবুও তাঁর সেই আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্মরণে প্রতিবছর মুসলমানরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশে এই ধর্মীয় অনুশীলন বহু সামাজিক অনুষঙ্গ নিয়ে আসে, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল কোরবানির মাংস বণ্টন। এই বণ্টনের মাধ্যমে সমাজে একটি পারস্পরিক সাহায্য ও সহমর্মিতার পরিবেশ গড়ে ওঠে, যা সামাজিক বিনিময় তত্ত্বের আলোকে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব অনুসারে, মানুষ স্বার্থহীনভাবে কোনো কিছু দেয় না; প্রতিটি দান বা সহযোগিতা কোনো না কোনো রূপে প্রত্যাবর্তনের আশায় করা হয়। ঈদ-উল-আজহায় কোরবানির পশু কেনা, কোরবানি দেওয়া এবং মাংস বণ্টন করা—এই সব কার্যক্রম একটি সামাজিক প্রত্যাবর্তন কাঠামোর মধ্যে সংঘটিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি তার প্রতিবেশীকে কোরবানির মাংস পাঠায়, তাহলে সে ভবিষ্যতে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে সাহায্য, আমন্ত্রণ বা দান প্রত্যাশা করতেই পারে। অনুরূপভাবে, নিম্ন আয়ের পরিবার যারা কোরবানি দিতে অক্ষম, তারাও সামাজিক সম্পর্কের কারণে অন্যদের কাছ থেকে মাংস পেয়ে থাকেন, যা ভবিষ্যতে পারস্পরিক সাহায্যের সম্ভাবনা তৈরি করে। এই প্রক্রিয়াটি একটি নিরবচ্ছিন্ন সামাজিক চক্র তৈরি করে, যেখানে পারস্পরিকতা একটি মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।

সামাজিক বিনিময় ও মর্যাদা

বাংলাদেশে ঈদের সময় গবাদিপশুর হাটগুলো বিশাল আকার ধারণ করে। এই হাটগুলোতে শুধুমাত্র পশু ক্রয়-বিক্রয় হয় না, বরং এক ধরনের সামাজিক সম্মান ও মর্যাদার প্রতিযোগিতাও চলে। কে কত বড়, সুন্দর কিংবা দামি পশু কিনেছে, তা সমাজে তার অর্থনৈতিক অবস্থান, দানশীলতা ও ধর্মীয় অনুশীলনের এক প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধরনের প্রতিযোগিতা আবার সামাজিক বিনিময়ের এক অনন্য রূপ, যেখানে সামাজিক সম্মানই হল লাভ। অনেকেই সামর্থ্যের অতিরিক্ত খরচ করে কোরবানির পশু কেনেন শুধুমাত্র সমাজে ভালো মুসলমান বা দানশীল ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আশায়। এখানে আর্থিক ব্যয় (পশুর দাম) হলো খরচ, যার বিনিময়ে সামাজিক স্বীকৃতি এবং সম্মান হলো পুরস্কার। এই খরচ বহন করে ব্যক্তি তার সামাজিক মর্যাদা বাড়িয়ে নেয়।

মাংস বণ্টন: একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক

ঈদ-উল-আজহার অন্যতম সামাজিক দিক হল মাংস বণ্টনের প্রথা। শরীয়ত মোতাবেক কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে—নিজের পরিবারের জন্য, আত্মীয়স্বজনের জন্য ও দরিদ্রদের জন্য—বণ্টন করা হয়। এই বণ্টন একটি সাংবিধানিক সামাজিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি কোনো না কোনোভাবে এই বিনিময়ের অংশীদার হয়। বিতরণপ্রাপ্ত পরিবারটি ভবিষ্যতে অন্য কোনো রকম সামাজিক বিনিময়ের মাধ্যমে এই সহায়তার প্রতিদান দেয়, যেমন বিপদের সময় সাহায্য, সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ কিংবা কোনো আমন্ত্রণ রক্ষা করা। এইভাবে সামাজিক সম্পর্কগুলো কেবল আত্মিক বা আবেগগত নয়, বরং বাস্তবভিত্তিক ও কৌশলগতভাবে পরিচালিত হয়। কে কতটুকু মাংস পাবে, কার কাছে পাঠানো হবে, এই সিদ্ধান্তগুলো প্রায়শই সামাজিক সম্পর্ক এবং ভবিষ্যতের প্রত্যাশিত বিনিময়ের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

বাড়ির বাইরে গিয়ে, শহর ও গ্রামের মধ্যে ঈদের সামাজিক বিনিময় আরও স্পষ্ট হয়। বিদেশে ও শহরে কাজ করা বহু মানুষ ঈদের আগে গ্রামের বাড়িতে টাকা পাঠান কোরবানির জন্য। গ্রামে বসবাসরত আত্মীয়রা তাদের হয়ে কোরবানি দেন এবং সেই মাংস এলাকার দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেন, যাতে শহরে থাকা সেই সদস্যের নামেও ছওয়াব বা সামাজিক স্বীকৃতি পাওয়া যায়। এই অর্থ ও ধর্মীয় দায়বদ্ধতা এক ধরনের প্রতীকী সামাজিক বিনিময়, যা দূরত্ব সত্ত্বেও সামাজিক বন্ধনকে অটুট রাখে।

বিভিন্ন সামাজিক ভূমিকা

ঈদের এই বিনিময় কাঠামোর মধ্যে শিশু-কিশোরদের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। তারা পশু কেনা, যত্ন নেওয়া, কোরবানি দেওয়ার প্রক্রিয়া, এবং মাংস বিলি করার মতো নানা কাজে অংশগ্রহণ করে। বিনিময়ে তারা প্রশংসা, ভালোবাসা এবং কখনো নগদ উপহার পেয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়া সামাজিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, যেখানে তারা ছোটবেলা থেকেই পারস্পরিক সহানুভূতি, সাহায্য, এবং সামাজিক দায়িত্বের চর্চা শিখে ফেলে। এটি তাদের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা ভবিষ্যৎ সামাজিক সম্পর্ক গঠনে সাহায্য করে।

নারীদের ভূমিকাও এই সামাজিক বিনিময়ের কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ। যদিও তারা সাধারণত কোরবানির পশুর প্রত্যক্ষ কাজ থেকে দূরে থাকেন, তবে মাংস বণ্টনের কৌশল, রান্নার ব্যবস্থা, অতিথি আপ্যায়ন এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সামাজিক কূটনীতি রক্ষার দায়িত্ব নারীরাই পালন করেন। কার বাড়িতে কেমন মাংস পাঠানো হবে, কার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ, এইসব সিদ্ধান্তে নারীরাই মুখ্য ভূমিকা রাখেন। এইভাবেই নারীরা ঈদ-উল-আজহার সামাজিক বিনিময় প্রক্রিয়ার নেপথ্য নায়ক, যারা সামাজিক সম্পর্কগুলোকে সচল রাখতে সাহায্য করেন।

বিজ্ঞাপন

ঈদ-উল-আজহার সময় বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও এনজিও-ও কোরবানির আয়োজন করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে মাংস বিতরণ করে থাকে। অনেকে এইসব সংস্থায় টাকা বা পশু দান করে থাকেন। এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিনিময় ঘটে—দাতা ব্যক্তির ধর্মীয় ছওয়াব অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পরিচিতি, সম্মান বা প্রতিষ্ঠানগত বিজ্ঞাপনও সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে, যারা এই মাংস পান, তারা হয়তো সরাসরি কিছু দিচ্ছেন না, কিন্তু ভবিষ্যতের কোনো প্রকার কৃতজ্ঞতা বা আনুগত্য প্রকাশের সম্ভাবনা তৈরি করেন, যা সামাজিক বিনিময়ের এক পরোক্ষ উপাদান।

ঈদের সময় বিশাল পরিমাণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টি হয় যা এই বিনিময় কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পশু পরিবহন, বিক্রয়, কসাইগিরি, প্যাকেজিং, হিমায়িতকরণ প্রভৃতি খাতে অস্থায়ীভাবে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়। অনেকেই এখানে শ্রম দেয় অর্থ, খাদ্য বা ভবিষ্যতের সুযোগের বিনিময়ে। এই অস্থায়ী শ্রমবিনিময় কেবল অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিক সুরক্ষা ও সম্পর্ক রক্ষার অংশও হয়ে ওঠে।

নেতিবাচক দিক এবং আধুনিক প্রবণতা

তবে, এই সামাজিক বিনিময় কাঠামোর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধির কারণে অনেক নিম্নবিত্ত পরিবার সামাজিক চাপে পড়ে যায় কোরবানির অংশ না হতে পারায়। এতে তারা নিজেদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন বা লাঞ্ছিত অনুভব করে। একইভাবে, অনেক ধনী ব্যক্তি ঈদের সময় অত্যাধিক ব্যয় করে পশু কিনে তা প্রদর্শনের মাধ্যমে এক ধরনের সামাজিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন, যা ঈদের আত্মত্যাগ ও বিনয়পূর্ণ মূল্যবোধের পরিপন্থী। এ ধরনের আচরণে ঈদের আসল সামাজিক মর্মবোধ ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি প্রযুক্তি ও অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে অনলাইন কোরবানি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, যেখানে মানুষ পশু নির্বাচনের পর কোরবানির পুরো কার্যক্রম কোনো এনজিও বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পন্ন করাচ্ছেন। একদিকে এটি শহুরে ব্যস্ত মানুষের জন্য সহায়ক হলেও, অন্যদিকে এটি ঈদের সঙ্গে জড়িত পারিবারিক, প্রতিবেশী ও সামাজিক অংশগ্রহণকে কমিয়ে দিচ্ছে। এতে করে ঈদের সামাজিক বিনিময় কাঠামো এক ধরনের বাজারভিত্তিক পণ্য সেবায় পরিণত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে এই উৎসবের মানবিক দিক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অনলাইন কোরবানি একটি দক্ষতাপূর্ণ লেনদেন হলেও, এটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক বিনিময়ের উষ্ণতা ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরির সুযোগকে হ্রাস করে।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের ঈদ-উল-আজহা একটি জটিল সামাজিক বিনিময় প্রক্রিয়া, যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি ও সমাজ একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। প্রত্যেকটি কোরবানি, প্রত্যেকটি মাংস বিতরণ এবং প্রত্যেকটি সামাজিক সৌজন্য—সবই কোনো না কোনোভাবে পারস্পরিক প্রত্যাশা, সম্মান এবং ভবিষ্যতের সামাজিক লাভের সঙ্গে জড়িত। সামাজিক বিনিময় তত্ত্ব এই উৎসবকে নতুন দৃষ্টিতে বুঝতে সাহায্য করে—ঈদ কেবল একটি ধর্মীয় রীতি নয়, বরং একটি সমাজগত প্রতিষ্ঠান যা পারস্পরিক সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে, অর্থনৈতিক গতি তৈরি করে এবং সমাজের দুর্বলদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে একটি সামষ্টিক ন্যায়বোধ সৃষ্টি করে।

এই উৎসবের অন্তর্নিহিত শক্তি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সহায়ক। তবে ভবিষ্যতে এই বিনিময় কাঠামোর মানবিকতা ও অংশগ্রহণমূলক দিক বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন হবে সচেতনতা ও মূল্যবোধের পুনর্গঠন। ঈদ-উল-আজহার প্রকৃত তাৎপর্য তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন ত্যাগ, সহমর্মিতা ও বিনিময় সত্যিকারের মানবিক বন্ধনে পরিণত হবে, কেবল লাভ-ক্ষতির হিসেব নয়।

বিজ্ঞাপন

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী

এইআর/এমএস

টাইমলাইন

  1. ০৯:১৯ পিএম, ০৮ জুন ২০২৫ গত বছরগুলোর তুলনায় এবার চামড়ার দাম বেশি: বাণিজ্য উপদেষ্টা
  2. ০৯:৩৮ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ মাঠ পর্যায়ে দাম নেই চামড়ার
  3. ০৯:১৩ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ পোস্তায় কাঁচা চামড়ার সরবরাহ কম, দামে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা
  4. ০৭:৩৩ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ ক্রেতারা বলছেন চামড়ার ‘ভালো’ দাম দিচ্ছেন, অখুশি বিক্রেতারা
  5. ০১:৪০ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ কোরবানির মাংস দ্রুত বরফ করতে ফ্রিজের তাপমাত্রা কত রাখবেন
  6. ০১:২৭ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ শাকিবের ‘তাণ্ডব’ হল সংখ্যায় এগিয়ে, অন্য সিনেমার অবস্থা কেমন
  7. ০১:১৪ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ কিশোরগঞ্জে মৌসুমি কসাইয়ের হাট
  8. ০১:০৭ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ বায়তুল মোকাররমে ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত
  9. ০১:০০ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ বেশি মাংস খেয়ে ফেলার অস্বস্তি কাটাবেন যেভাবে
  10. ১২:৫০ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ জাতি যেনতেন নির্বাচন চায় না: ডা. শফিকুর রহমান
  11. ১২:৪৩ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ ঈদের দিন ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি
  12. ১২:৩৯ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ কোরবানি হোক শুদ্ধ
  13. ১২:২২ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ কোরবানির চামড়া সংক্রান্ত বিধি-বিধান
  14. ১২:০৯ পিএম, ০৭ জুন ২০২৫ স্মৃতির ঘ্রাণে বিএনপি নেতাদের ছোটবেলার ঈদ
  15. ১১:৫৬ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ চেনা ঢাকা অচেনা রূপে
  16. ১১:৫১ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ কম মসলায় গরুর মাংস রাঁধবেন যেভাবে
  17. ১১:৪৭ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ বরিশালে পাঁচ শতাধিক মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত
  18. ১১:৩৫ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও লবণ দেওয়ার পদ্ধতি
  19. ১১:৩০ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ দেশে দেশে ঈদুল আজহা পালনের যত মিল-অমিল
  20. ১১:১৮ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ ঈদুল আজহার পয়গাম
  21. ১১:০০ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ সুনসান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
  22. ১০:৩৮ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ কারাগারে ঈদ উদযাপনে গরু ও খাসি কোরবানি
  23. ১০:২০ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে মুসল্লির ঢল
  24. ১০:১১ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ সাদা পোশাক থেকে কোরবানির পশুর রক্তের দাগ তোলার ৫ উপায়
  25. ১০:০৬ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ মেট্রোরেল আজ চলবে না
  26. ০৯:৫৪ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে গোর-এ শহীদ ময়দানে ঈদের জামাত
  27. ০৯:৪৮ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ দেশের মঙ্গলে সবার দোয়া চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
  28. ০৯:৪৫ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ কোরবানির পশু জবাইয়ের সঠিক পদ্ধতি
  29. ০৯:১৯ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ ঈদ-উল-আজহার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
  30. ০৮:৪৮ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ ঈদুল আজহার গুরুত্ব ও আমল
  31. ০৮:৪৪ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ টিভি চ্যানেলে ঈদের যেসব বিশেষ অনুষ্ঠান রয়েছে আজ
  32. ০৮:৪০ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ ত্যাগের মহিমায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন
  33. ০৮:৩৩ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ রাজধানীতে পশু কোরবানি চলছে
  34. ০৮:২৯ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ যমুনা সেতু দিয়ে ছয়দিনে সোয়া ১৯ কোটি টাকা টোল আদায়
  35. ০৮:২৩ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানি
  36. ০৮:১৯ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ বিশেষ মোনাজাতে দেশ-জাতির শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা কামনা
  37. ০৮:১৩ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ ঈদুল আজহা: আত্মত্যাগের এক সুমহান শিক্ষা
  38. ০৮:০৮ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ ঈদের সকালে ঝটপট বানাতে পারেন আরবের ডেজার্ট ‘কাতায়েফ’
  39. ০৮:০১ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ ঈদুল আজহা: ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমা
  40. ০৭:৫৭ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ রাইহান উদ্দিনের কবিতা: কোরবানি
  41. ০৭:৫৪ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত
  42. ০৭:৪৭ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত শুরু
  43. ০৭:৪৫ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ মিরপুরে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত
  44. ০৭:৩৬ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ ঢাকায় কখন কোথায় ঈদ জামাত
  45. ০৭:২৭ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত
  46. ০৫:২২ এএম, ০৭ জুন ২০২৫ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার বাণী

বিজ্ঞাপন