ভিডিও EN
  1. Home/
  2. মতামত

মাহে রমজান

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে জাকাত

মাহমুদ আহমদ | প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০২৩

 

আজ পবিত্র মাহে রমজানের মাগফিরাতের দশকের ৭ম দিনের রোজা রাখার তৌফিক আমরা লাভ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত বন্দেগি আর দানখয়রাতের বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কীভাবে বেশি বেশি পুণ্যকর্ম করে আল্লাহপাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আমরা যেভাবে নামাজ আদায় করাকে ফরজ জানি তেমনি জাকাত প্রদানও ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোর একটি। পবিত্র কুরআন করিমে বিরাশি জায়গায় আল্লাহতায়ালা সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন। আর সবখানেই সালাতের সাথে সাথে জাকাত প্রদানের নির্দেশও দিয়েছেন। এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যবহ বিষয়। জাকাত প্রদান করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ আদায় করো ও জাকাত প্রদান করো এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা , আয়াত: ৪৩)।

সালাতের সাথে জাকাতের সম্পর্ক ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। সংগতিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে জাকাত ব্যতীত সালাত কায়েম হওয়া সম্ভব নয়। মূলত সালাত ও জাকাত ব্যতীত পরিপূর্ণভাবে ইসলামি জীবন গঠন অসম্ভব। পৃথিবীর বুকে মানুষ যাতে সুখে শান্তিতে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করতে পারে তার জন্যই বান্দার দয়াময় আল্লাহতায়ালা জাকাতের ব্যবস্থা করেছেন। শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির নামই ইবাদত নয়। সংসারে জন্মগ্রহণ করে সংসারধর্ম রক্ষা করে, সত্য ও সঠিক পথে চলে মানব জীবনে প্রতিটি কর্মই ইবাদতের মধ্যে শামিল। হজরত নবী করিম (সা.) আজানের পর নিজ কক্ষ থেকে বের হয়ে মসজিদে আগমন করতেন এবং সমবেত মুসল্লিগণের সাথে বসতেন এবং উপস্থিত অনুপস্থিত প্রত্যেক মুসলিম ভাই বোনদের খবরাখবর নিতেন ও প্রত্যেকের জাগতিক সমস্যার সমাধান করতেন।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সহিহ বোখারি শরিফে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআজ (রা.)কে ইয়ামেন দেশে শাসক হিসেবে প্রেরণ করেন। প্রেরণকালে তিনি বলেন, সেখানকার অধিবাসীদের (প্রথমে) এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহ্বান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। যদি তারা তা মেনে নেয়, তাহলে তাদের অবহিত করবে যে, আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানাবে, আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে জাকাত ফরজ করেছেন। এটা ধনীদের থেকে গ্রহণ করা হবে এবং দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে। (সহিহ বুখারি)।

ইসলামে সালাত ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য করার অবকাশ নেই। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রা.) বলেছেন, ‘তোমাদের এক সাথে আদেশ করা হয়েছে সালাত কায়েম করা ও জাকাত আদায় করার। তাই কেউ জাকাত আদায় না করলে তার সালাতও আদায় হবে না।’ ইসলাম শুধু উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয় নাই। বাস্তব জীবনে জাকাতকে ফরজ কার্যের আওতায় এনে প্রতিফলন ঘটিয়েছে। জাকাত দ্বারা দরিদ্র জনসাধারণের জন্য একটি চিরস্থায়ী দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

হজরত মহানবী (সা.) জাতীয় দৈন্য দুর্দশার মুক্তি সাধনায় বহু ত্যাগ স্বীকার করে তিনি বায়তুল মালকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে মুসলমান জাতির প্রাণশক্তি ছিল বায়তুল মাল। তখন জাকাত আদায় করার জন্য আদায়কারী নিযুক্ত ছিল। তারা নিয়মিত জাকাত আদায় করে বায়তুল মালে জমা দিতেন এবং তা থেকে দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে যথাবিধি বণ্টন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসার কল্পে ব্যয়িত হতো।

হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার জাকাত দেয়নি, কেয়ামতের দিন তা বিষধর সাপ ধারণ করবে এবং তা তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের উভয়পাশে দংশন করবে এবং বলবে, আমিই তোমার ধন, আমিই তোমার জমাকৃত সম্পদ।’ (বুখারি)

অন্য এক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাকাত আদায়কে ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম বলে অভিহিত করে বলেন, ‘ইসলামের ভিত্তি রাখা হয়েছে পাঁচটি জিনিসের ওপর। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহতায়ালা ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল। নামাজ কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজ করা ও রমজান মাসের রোজা রাখা।’ (সহিহ বুখারি)।

বিজ্ঞাপন

আমরা যদি সঠিক নিয়মে জাকাত প্রদান করি তাহলে আমাদের এই রোজা এবং অন্যান্য ইবাদতগুলো আল্লাহপাকের দরবারে বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের ক্ষেত্রেও জাকাতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, কেননা সঠিকভাবে জাকাত আদায় না করলে আমাদের অন্যান্য ইবাদতের কোন মূল্য পাবে না আল্লাহপাকের দরবারে।

তাই আসুন, পবিত্র এ মাহে রমজানে আমাদেরকে সব রকমের পুণ্যকর্মের পাশাপাশি জাকাত প্রদানের বিষয়েও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে সঠিক নিয়মে জাকাত প্রদান করার তৌফিক দান করুন, আমিন।

লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

বিজ্ঞাপন

এইচআর/এমএস

বিজ্ঞাপন