তারেক রহমানের জন্য কড়া নিরাপত্তার ছক
তারেক রহমান/ফাইল ছবি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবসান হতে চলেছে নির্বাসিত জীবনের। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে রাজধানীজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দলটির পক্ষ থেকে ৫০ লাখ মানুষ জমায়েতের প্রস্তুতি চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এরইমধ্যে ঢাকায় এসে জড়ো হচ্ছেন। প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখতে এবং বরণ করে নিতে তাদের এই আগমন বলে জানিয়েছেন তারা।
‘রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট জোন’
সূত্র জানায়, তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট-এই তিন জোনে ভাগ করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তার ছক। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)।

তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছে বিএনপি, যা এরইমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। এছাড়াও টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেল গাড়ি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:
শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তারেক রহমান
মঞ্চে একাই বক্তব্য রাখবেন তারেক রহমান
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান ও তার পরিবার লন্ডনের সময় আজ সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সিলেট হয়ে ফ্লাইটটি আগামীকাল বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
বিমানবন্দরে কড়াকড়ি
তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। কেবল যাত্রীরাই এই সময়ে প্রবেশ করতে পারবেন।
বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট, অভ্যর্থনা ও রুট
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় যাবেন। বিমানবন্দর থেকে ৩০০ ফিট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা তাকে সংবর্ধনা জানাবেন। ৩০০ ফিট এলাকায় তৈরি মঞ্চে তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন। সেখানে কেবল তারেক রহমানই বক্তব্য দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জনসভা শেষে তিনি সরাসরি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন। সেখানে চিকিৎসাধীন তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করবেন। মায়ের সঙ্গে দেখা করার পর তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় উঠবেন।
পুলিশ বলছে, দেশে ফেরার পর তারেক রহমান এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার সময় পাবেন পুলিশ প্রটেকশনসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এছাড়া তারেক রহমানের বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তার ধারেকাছে ভিড়তে দেবে না পুলিশ। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও ছদ্মবেশে গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তার দিকটি দেখভাল করবেন।
আরও পড়ুন:
ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা না করতে নেতাকর্মীদের প্রতি রিজভীর আহ্বান
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং বিএনপির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভা থেকে নিরাপত্তাব্যবস্থাকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো, রেড, ইয়েলো ও হোয়াইট জোন। রেড জোনে যারা প্রবেশের সুযোগ পাবেন, তাদের বিশেষ সিকিউরিটি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। ওই কার্ড ছাড়া কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। ইয়েলো জোনের জন্য থাকছে আলাদা কার্ড। যারা এই কার্ড পাবেন, তারাই কেবল ইয়েলো জোনে যেতে পারবেন।
রুট ক্লিয়ারেন্স ও নজরদারি
রেড ও ইয়েলো জোনের বাইরে যে এলাকা থাকবে, সেটা বিবেচিত হবে হোয়াইট জোন হিসাবে। এই জোনে প্রবেশ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ। তারেক রহমানের আগমনের দিন পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার প্রায় দুই হাজার সদস্য মোতায়েন থাকতে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবন ও তারেক রহমানের বাসভবন দেওয়ালঘেঁষা হওয়ায় দুটি বাসা এবং তারেক রহমানের অফিসকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়েছে। বাসা ও অফিসের মাঝখানের দূরত্ব ও চলাচলের পথকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই পুলিশের বিশেষ নজরদারি শুরু হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর রুট ধরে প্রতিটি থানা এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
এছাড়া বিশেষ এসকর্টসহ একাধিক চেকপোস্ট থাকবে। সাধারণত গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ৯টি চেকপোস্ট চালু থাকে। যেখানে সার্বক্ষণিকভাবে ১৫০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে তার বাসভবনের আশপাশেও।
মাঠে থাকবে সোয়াট টিম-বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট
জানা যায়, তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে কয়েক হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওইদিন তার নিরাপত্তা উপলক্ষে মাঠে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা। তার বাসা ও অফিস ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিংয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী পরবর্তীতে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
তারেক রহমানকে বরণ করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি বিএনপির
অবশেষে ফিরছেন তারেক রহমান, উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা
ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বলেন, ‘আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও একটা নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেওয়া হবে। ডিএমপি সদর দপ্তরের সেন্ট্রালি একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে, সে হিসাবে তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এরইমধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নিরাপত্তায় পর্যাপ্তসংখ্যক গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তার সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকে তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে বিএনপি। তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে তার নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টিটি/এসএনআর/এমএমএআর/এমএস