ঐক্যের বার্তা নিয়ে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ফাইল ছবি

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সরাসরি মাঠে থেকে এতদিন দলকে নেতৃত্ব দিতে পারেননি। তবে ধরে রেখেছেন দলের ঐক্য। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা বেসামাল। এই মুহূর্তে তার ঢাকায় ফেরার আনন্দে ভাসছে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিশ্চয়ই তারেক রহমান দল ও দেশের মানুষের কল্যাণে ঐক্যের বার্তা নিয়ে পৌঁছাবেন।

আরও পড়ুন:

তারেক রহমানকে বরণ করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি বিএনপির 

বিশৃঙ্খলা-অরাজকতা না করতে নেতাকর্মীদের প্রতি রিজভীর আহ্বান

২৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের সংবর্ধনায় মানুষের মহামিলন হবে 

তারেক রহমান বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ১২টায়) হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন। তাকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। তার এ যাত্রা সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ঘণ্টা বিরতির পর সম্পন্ন হবে।

‘সবার আগে বাংলাদেশ’

তারেক রহমানের আগমনের বার্তায় উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা। নিজ নিজ জেলা থেকে বাস, ট্রাক ভাড়া করে, কেউ আবার ট্রেনে যে যেভাবে পারছেন তারেক রহমানকে বরণ করতে ঢাকায় আসছেন। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে তারেক রহমানের সংবর্ধনা মঞ্চের আশপাশের এলাকাসহ পুরো ঢাকা শহর।

কী বার্তা নিয়ে দেশে ফিরছেন তারেক রহমান এমন প্রশ্নে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জাগো নিউজকে বলেন, এইবার দেশে আসছেন একজন নেতা, যিনি দেশের নেতৃত্ব দেবেন। যারা একসময় তার কট্টর সমালোচক ছিলেন, তারাও এখন তার প্রশংসা করছেন। এটি প্রমাণ করে যে তারেক রহমানের ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগানটি জনগণ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠন সম্ভব হবে।

‘ফিরবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা’

সম্প্রতি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যা, প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, দৈনিক নিউ এজ-এর সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তাসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার জেরে সবার মধ্যে একধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সেকারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার শঙ্কাও করছেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে আসছেন তারেক রহমান।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী বলেন, তারেক রহমানের আগমন দেশের জন্য একটি ভালো বার্তা। তার প্রত্যাবর্তনের ফলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়ার অনেকটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা, সেখানে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে দেশের বর্তমান এলোমেলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে, এমন প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মনে করেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে সরাসরি দলকে নেতৃত্ব দেবেন এবং নিয়ন্ত্রণ করবেন, যেটি এতদিন অনুপস্থিত ছিল। বিদেশে থাকার সময় নেতাকর্মীরা অনেকটাই অনুপ্রেরণাহীন ছিলেন। তার প্রত্যাবর্তনে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষও স্বস্তি বোধ করবে।

মহিউদ্দিন খান আরও বলেন, জাতির সংকটকালে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমান সময়েও জাতির স্বার্থে ঐক্যের রাজনীতির নেতৃত্ব প্রয়োজন। সেই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান ধীরে ধীরে ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠছেন। তার উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। সেই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের সক্ষমতাই ভবিষ্যতে তার নেতৃত্বের সাফল্য নির্ধারণ করবে।

আরও পড়ুন:

অবশেষে ফিরছেন তারেক রহমান, উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা 

মায়ের মতো বাসায় বসেই ভোটার হতে পারবেন তারেক রহমান 

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোবাশ্বের হোসেন টুটুল বলেন, উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতির একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃত্ব হিসেবে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশসহ পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মায়ের অসুস্থতায় ব্যক্তিগত কষ্ট, নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের চাপ, এই সবকিছু মিলিয়ে একটি জটিল ও মিশ্র অনুভূতির মধ্য দিয়ে তাকে এগোতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান, উগ্রপন্থি রাজনীতির উত্থানের ঝুঁকি মোকাবিলা, ভঙ্গুর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন এবং চাপের মুখে থাকা অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার, এই কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে তারেক রহমানকেই। উন্নত দেশে দীর্ঘদিন বসবাসের অভিজ্ঞতা যদি তিনি বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের বাস্তবতায় প্রয়োগ করতে পারেন, তবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে একটি আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে তিনি কিংবদন্তি হয়ে উঠতে পারেন।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেফতার হয়ে তারেক রহমান প্রায় ১৮ মাস কারাভোগ করেন। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সপরিবারে যুক্তরাজ্যে চলে যান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করবে।

কেএইচ/এসএনআর/এমএমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।