ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচন

নৌকার বিদ্রোহী পেয়ারুল পেলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

ইকবাল হোসেন | প্রকাশিত: ০৭:৫৪ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন এ টি ম পেয়ারুল ইসলাম। তবে এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও পরে দলের মনোনয়নের বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিলেও পরে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাননি। এ কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আওয়ামী লীগ।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে ‘আপেল’ প্রতীক নিয়ে ২৮১ ভোট পেয়েছিলেন। তবে মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাগো নিউজের কাছে দাবি করেন, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

এদিকে, দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর ১৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে এসে রেলওয়ে স্টেশনে নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছা সিক্ত হন পেয়ারুল ইসলাম। এসময় তিনি বলেন, আগামীতে দলের নেতাকর্মীদের একত্রিত করেই জেলা পরিষদের মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করবো।

জানা যায়, নিজ উপজেলা ও সংসদীয় আসন ফটিকছড়িতে মহাজোটের শরিক হিসেবে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারিকে ২০১৮ সালে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। ওই সময় আওয়ামী লীগ বাঁচানোর ঘোষণা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময়েও তিনি প্রত্যাহার করেননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশন থেকে ওই সময়ে তাকে আপেল প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ওই সময়ের ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল আলম বাবু এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন মো. আবু তৈয়ব ছিলেন নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির পক্ষে। তারা ওই নির্বাচনের আগে সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সড়ে দাড়ানোর কারণে এটিএম পেয়ারুল ইসলামকে দলীয়ভাবে কোনো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি।

এ বিষয়ে কথা হলে ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু পরে প্রচারণায় ছিলেন না।

জেলা পরিষদ নির্বাচনে এটিএম পেয়ারুল ইসলামের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে কথা হলে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো হাত ছিল না। আওয়ামী লীগে স্থানীয় সরকারের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। মনোনয়ন বোর্ড থেকে তাকে (এটিএম পেয়ারুল ইসলাম) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও পরে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনের পরেও তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ তোলেননি। তাকে বহিষ্কার কিংবা অন্য কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া এটিএম পেয়ারুল ইসলামের বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার নানুপুর ইউনিয়নে। উপজেলার আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় স্কুল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৯ সালে নাজিরহাট কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন। একই বছরে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পেয়ারুল। এরপর ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ১৯৮৭ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হন। ১৯৯০ সালে ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সহ-সম্পাদকও হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কাছে হেরে যান। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি।

আগামী ১৭ অক্টোবর দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, জেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলরসহ দুই হাজার ৭৩১ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

ইকবাল হোসেন/কেএসআর/এমএস