ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ভ্রমণ

পাহাড়ি জলের সৌন্দর্যের খোঁজে একদিন

ভ্রমণ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:০৫ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মো. আনসারুজ্জামান সিয়াম

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা পাহাড়ি সৌন্দর্যের খোঁজে রওয়ানা দিলাম রাঙ্গামাটির পথে। শহরের কোলাহল, ব্যস্ততা এবং ইট-পাথরের জীবনকে পেছনে ফেলে রাতের অন্ধকারে যাত্রা শুরু করলাম। জানালার বাইরে ছড়ানো অন্ধকার আর হালকা বাতাস যেন ভ্রমণের যাত্রাকে আরও আনন্দময় করে দিয়েছিল।

পরদিন সকালে রাঙ্গামাটির শহরে পৌঁছতেই চোখে পড়লো পাহাড়ের ছায়া আর কাপ্তাই লেকের শান্ত নীল জল। সূর্য উদিত হতে শুরু করলে লেকের পানি যেন সোনালি আলোর আয়নায় রূপান্তরিত হলো। চারপাশের সবুজ বন, নীরব লেকের পৃষ্ঠে প্রতিফলিত পাহাড়—সব মিলিয়ে মনে হলো প্রকৃতি আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে।

সারাদিনের ভ্রমণ শুরু হলো কাপ্তাই লেকের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে। ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে নিচের নীল পানি আর চারপাশের সবুজ পাহাড়ের দৃশ্য দেখে মন ভরে উঠলো। নৌকায় উঠেই শুরু হলো ফটোসেশনের ধুম। হালকা বাতাসের সঙ্গে লেকের সুবাস আমাদের ক্লান্তি দূর করে দিলো।

lake

পলওয়েল পার্কে হাঁটতে হাঁটতে পাখির কিচিরমিচির শোনা, পাহাড়ের নীরব ছায়া—সবই যেন ভ্রমণকে আরও জীবন্ত করে তুললো। পলওয়েল পার্কের ইতিহাস শুনে একদল প্রেমিকের মনে এ রকম ইতিহাস তৈরির স্বপ্ন জাগ্রত হলো। এ ছাড়া চাকমাদের বাজারে স্থানীয় সংস্কৃতি, রঙিন পণ্য এবং সরল মানুষের মাঝে মিলে গেলাম। পাহাড়িদের সংগ্রামী জীবনযাপনের অসাধারণ গল্প হতবাক করেছিল।

আরও পড়ুন
সমুদ্রের ডাক আর নোনাজলের স্মৃতি 
ভোলার তারুয়া সমুদ্রসৈকতে যেভাবে যাবেন 

খাবারের আনন্দও ভ্রমণের অংশ হয়ে উঠলো। সকালে গরম পরোটা, সবজি এবং চা দিয়ে শুরু করলাম দিনের কার্যক্রম। দুপুরে ব্যাম্বো চিকেন, ভাত, ডাল এবং তাজা সবজি উপভোগ করে পাহাড়ি দিনের আনন্দকে সম্পূর্ণ করলাম। বিশেষ করে সবার আকর্ষণ ছিল ব্যাম্বো চিকেনের দিকে।

দুপুরে কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ পানিতে সবাই গোসল করলাম। হালকা ঢেউ, লেকের নীল জল এবং পাহাড়ের ছায়া আমাদের মনে অদ্ভুত প্রশান্তি ঢেলে দিলো। সারাদিনের ফটোসেশনে সর্বাধিক ফটো তুলেছিল সাকিব, নাবিল এবং প্রিতম। পাহাড়ি রাস্তা ছিল ভয়ংকর কিন্তু রোমাঞ্চকর। মাটি থেকে অনেক উঁচুতে বাঁকগুলো খাড়া হওয়ায় প্রথমবার অনেকেরই ভয় কাজ করেছিল। তবুও আমরা একে অপরকে উৎসাহ দিয়ে সাহসের সঙ্গে পথ পেরিয়েছি। পাহাড়ের দৃশ্য এবং লেকের নীল জল ভয়ের অনুভূতিকে ক্ষুদ্র করে দিয়েছে। মনে হলো প্রকৃতির সঙ্গে এক হয়ে ভয়ও অদৃশ্য হয়ে যায়।

lake

সন্ধ্যায় আবার রাতের যাত্রা শুরু করলাম ঢাকার দিকে। পাহাড়ের আকাশ, লেকের নীরবতা, হালকা বাতাস—সবই আমাদের মনে শান্তি বইয়ে দিলো। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, পাহাড়ের নীরবতা এবং কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জল জীবনকে সরল, নির্মল এবং সুখময় করে তোলে।

রাঙ্গামাটি ভ্রমণ আমাদের শুধু আনন্দ দেয়নি; শিখিয়েছে প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। বন্ধুত্বের মাধুর্য বুঝতে এবং নীরবতার মধ্যে শান্তি খুঁজে পেতে। ঝুলন্ত সেতুর দোল, লেকের ঢেউ, পাহাড়ি রাস্তার চড়াই—সবই আমাদের স্মৃতিতে চিরকাল স্থায়ী হয়ে গেছে।

লেখক: ৪র্থ বর্ষ, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার।

এসইউ

আরও পড়ুন