৪ মাসে ৮৫ সাংবাদিক নির্যাতন-হয়রানির শিকার : আসক
এ বছরের গত চার মাসে ৮৫ সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা দেয়া হয়েছে এবং নানাভাবে হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত।
শুক্রবার (৮ মে) সন্ধ্যায় আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক (অ্যাডভোকেসি এবং নেটওয়ার্কিং) আবু আহমেদ ফজলুল কবির স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত চার মাসে ৮৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ সময়ের অন্যতম আলােচিত ঘটনা ১৫ মার্চ কুড়িগ্রামে বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ‘মাদকবিরােধী অভিযানে’ আটক দেখানাে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অপরাধে তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনা। যদিও সাংবাদিকের পরিবার থেকে মাদক পাওয়ার অভিযােগ অস্বীকার করে বলা হয়, জেলা প্রশাসকের অনিয়ম সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্নীতি সংক্রান্ত পােস্ট দেয়ায় তাকে জোর করে ধরে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে। ১৫ মার্চ স্থানীয় আদালত তাকে জামিন প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে জেলা প্রশাসককে
প্রত্যাহার করা হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিশেষত মার্চ-এপ্রিল মাসে যেভাবে বাধা দেয়া হয়েছে এবং নানাভাবে হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত।
গত চার মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে আসকের পক্ষ থেকে বলা হয়, চার মাসে গ্রেফতারের আগে ক্রসফায়ারে ৬১ জন, গ্রেফতারের পর ক্রসফায়ারে ২১ জন, গ্রেফতারের আগে শারীরিক নির্যাতনে তিনজন, গ্রেফতারের পর শারীরিক নির্যাতনে ১০ জন, গ্রেফতারের আগে বন্দুকযুদ্ধে দুজন, কাস্টডিতে অসুস্থ হয়ে একজন, কাস্টডিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। শরীরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতারের পর দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এই চার মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক দু’জনকে গুম করার অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ছয় মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মােট ৫৬টি। এতে নিহত হয়েছেন নয়জন এবং আহত হয়েছেন ৬৪১ জন। একই সময়ে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে ১৩ জন গুলিতে এবং শারীরিক নির্যাতনে চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ১১ জন ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ১১ জন।
এতে আরও বলা হয়, করোনাকালে মার্চে করােনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকারের লঙ্ঘন, ডাক্তারি অবহেলা, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের অপর্যাপ্ত সুরক্ষা, প্রান্তিক জনগােষ্ঠীর খাদ্যের অধিকার নিশ্চিতকরণে পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাব, ত্রাণ প্রদানে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা, বহুল বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার, শ্রমিক অধিকার ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা, নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ প্রভৃতি বিষয়ে নানা উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে।
বেশ কিছু অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরকার পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
জেইউ/এমএফ/এইচএ/পিআর