খেলাপি মালিকদের বিরুদ্ধে ধিক্কার কর্মসূচি ডিইউজের
ঈদের আগে বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ না করায় এবং করোনা দুর্যোগের মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছাটাই বন্ধের দাবিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের ডাকে ঈদের দিন দুপুরে সমাবেশ ও মিছিল করেছেন ঢাকার সাংবাদিকরা।
সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন দুপুরে রাজধানীর কারওরান বাজারের সার্ক ফোয়ারার মোড়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। সমাবেশে ঈদের আগে যেসব সংবাদমাধ্যম সাংবাদিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে, তাদের ধন্যবাদ আর যেসব প্রতিষ্ঠান বেতন-বোনাস দেয়নি তাদের ধিক্কার জানানো হয়।
একই সঙ্গে সংবাদপত্র ও টিভি মালিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ডিইউজে’র নেতারা বলেছেন, করোনা মহামারির এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের কোনো অজুহাত দিয়ে চাকরিচ্যুত বরদাস্ত করা হবে না। ইতোমধ্যে যাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে বহালের দাবি জানানো হয়।
সমাবেশে ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, ‘করোনা মহামারির দুঃসময়ে গোটা বিশ্বে যেখানে মানুষ মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সেখানে এ দেশের গণমাধ্যম মালিকেরা বিভিন্ন অজুহাতে সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে। যা অন্যায় ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।’
তিনি চাকরিচ্যুত গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান। অন্যথায় ডিইউজে কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ডিইউজের সভাপতি বলেন, আজ ঈদের এই আনন্দঘন দিনে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বন্ধু মহলে সময় কাটাতে পারতাম। কিন্তু আমরা দেখছি এই করোনাভাইরাসের সময়েও অনেক প্রতিষ্ঠান, আমাদের-সাংবাদিকদের বেতন-বোনাস দেয়নি। অপরদিকে চলছে অবৈধ চাকরিচ্যুতি। আজ পবিত্র ঈদের দিনেও আগামী নিউজ নামের এক অনলাইন পোর্টাল থেকে ৬ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। করোনাকালে এই প্রতিষ্ঠানে দুই দফায় চাকরিচ্যুত করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে। এই অবস্থা চলতে পারে না। সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত বন্ধ করতে হবে। বেতন-বোনাস দিতে হবে, যারা দেবেন না তাদের বিরুদ্ধে আগামীতে ধর্মঘটের মতো কঠিন কর্মসূচির ডাক আসতে পারে।
বিভিন্ন মিডিয়ার মালিকদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে সিনিয়র এই সাংবাদিক বলেন, ‘ইউনিয়ন কিন্তু আগের জায়গায় নেই। যে সকল মালিকেরা মনে করেন ইউনিয়নকে তাদের মতো করে পুষতে পারবেন, তারা ভুল জায়গায় আছেন। যারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মালিকদের কাছে দালালি করে, সাংবাদিক কমিউনিটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ভুঁইফোড় কিছু সংগঠনের ব্যানারে চ্যারিটি করে সাংবাদিকদের রুটি-রুজির আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছেন, এগুলো বন্ধ করেন। ইউনিয়নের মাধ্যমে সংগঠিত হোন, ইউনিয়নকে শক্তিশালী করেন। ইউনিয়ন শক্তিশালী হলে সাংবাদিকদের দাবি আদায় সহজ হবে।
তিনি বলেন, সরকার যদি তার কর্মীকে করোনা আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে, তাহলে গণমাধ্যমের মালিকেরা কেন তার কর্মীর জন্য ক্ষতিপূরণ দেবে না? যেসব সাংবাদিক এরই মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার ব্যয় বহন ও ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান ডিইউজে সভাপতি।
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে ইতোমধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, করোনা কালে ছাটাই আমরা মানি না। যারা ছাটাই করছেন তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি বার্তা। আপনারা নিজেদের বিলাসিতায় অর্থ খরচ করছেন অথচ সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন-বোনাস দিচ্ছেন না। যা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, ‘আলোকিত বাংলাদেশ, এসএ টিভি, গাজী টিভি, আগামী নিউজ, যায়যায়দিন, এনটিভি, এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঢালাও ভাবে সাংবাদিকদের ছাটাই করে অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। আপাতত আমাদের এটা প্রতীকী কর্মসূচি। আগামীতে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি আসবে।’
ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক এ জিহাদুর রহমান, বিএফইউজের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব অমিও ঘটক পুলক, ডিইউজের প্রচার সম্পাদক আছাদুজ্জামান, জনকল্যাণ সম্পাদক পদে সোহেলী চৌধুরী, দফতর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরী সোহেল, নির্বাহী সদস্য রাজু হামিদ, সাব এডিটর কাউন্সিলের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শামসুল আলম সেতু, আলোকিত বাংলাদেশের ইউনিট প্রধান মতলু মল্লিক, শফিক বাশার, এম জহিরুল ইসলাম প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে বেতন-বোনাস খেলাপি এনটিভি দফতরের নিচে প্রতীকী অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
এমইউ/এমএফ/পিআর