ভিক্ষা ছেড়ে গানেই জীবন চলছে তার


প্রকাশিত: ০৩:২৮ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

মধুর সুরে গান, সঙ্গে দোতারার নিদারুণ সুর। কখনো ঝরছে চোখের অশ্রু, আবার কখনো প্রতিবাদের আগুন। যদিও তার জীবনের ৫০টি বছর কেটেছে ভিক্ষা করে। কিন্তু এখন ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছেন। ধরেছেন গান। গান গেয়ে শ্রোতাদের মন কুড়িয়ে কিছু টাকা পান। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গান করেন তিনি। যখন কোনো বড় অনুষ্ঠান বিশেষ করে মেলা হয় সেখানে গিয়ে গান করেন তিনি। আর এভাবেই গান গেয়ে চলছে তার জীবন। 

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলায় দেখা মিলে এই বৃদ্ধের। তার নাম মনসুর আলী। বাড়ি রাজশাহী। দেখা গেছে- তার মধুর সুরের গানে মুগ্ধ হচ্ছে আগত দর্শকরা। পৃথিবীর আলো-বাসাত দেখতে না পাওয়া এই দুঃখী বৃদ্ধের গানে মেতেছেন তারা।

alom

মনসুর আলী জানান, একেবারেই দরিদ্র পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। জীবনের ৫০টিরও বেশি বছর কেটেছে ভিক্ষায়। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও কোনো উপায় ছিল না। কিন্তু তিনি গান গাইতে পারেন। ভিক্ষার টাকায় একতারা-দোতারা কিনে কিছু টাকা দিয়ে নিজ জেলা রাজশাহীতে এক ওস্তাদের কাছ থেকে গান ও দোতারা বাজানো শেখেছেন।
 
এরপর থেকে ভিক্ষা ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন জনসমাগম স্থলে গিয়ে কিছু স্থান দখল করে গান করতে থাকেন। আগত দর্শকরা তার গানে মুগ্ধ হয়ে তাকে সহযোগিতা করেন। ৫ থেকে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্তও দেয়। এ দিয়েই নিজের জীবন চলে।

alom
 
গ্রামের বাড়ি রাজশাহীতে সরকারের এখটি খাস জায়গায় ছোট একটা কুড়ে ঘর থাকলেও তিনি ঢাকায় থাকেন খোলা আকাশের নিচে। হাইকোর্টের মাজার গেটের বটতলায় তার ঠিকানা। সেখানেই থাকেন তিনি। ঝড়-বাদল-বৃষ্টি-শীত যাই হোক না কেন ফুটপাতের ছোট্ট একটি পলিথিন মোড়ানো ঘরেই কাটে তার সংসার।
 
মনসুর আলী জানান, বই মেলা কিংবা বাণিজ্য মেলাসহ বড় বড় কোনো আয়োজন হলে তিনি সেখানে যান। মাঠের এক কোণে বসে সুন্দর সুরে গান করতে থাকেন। গান শুনে লোকজনের দেয়া টাকা নিয়ে বাসায় ফেরেন।

alom
 
জীবন-সংসারে মনসুর আলীর চার সন্তান ছিল। এর মধ্যে এক ছেলে মরা গেছে। কিন্তু সন্তানদের কেউই তার খবর নিতে পারে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তারাও গরিব। নিজেদের ঘর-সংসার চালাতে কষ্ট হয়। আমার খবর নেবে কীভাবে?’
 
এদিকে মেলায় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত দামের একটি টিকিট কিনে প্রবেশ করতে হয়। মনসুল আলীকে মেলায় প্রবেশে কোনো টিকিট কিনতে হয় না। বরং তার গানের সুর শুনে মানবিক কারণ বিবেচনা করে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে মেলায় ঢুকতে সহযোগিতা করছেন বলে জানান মনসুর আলী।

alom
 
মনসুর আলীর গান শুনে বাবার কাছ থেকে ১০ টাকা নিয়ে তাকে দান করেছে ছোট্ট শিশু রিতা। সে জাগো নিউজকে বলে, ‘আমি গান পছন্দ করি। উনার গানগুলো খুব সুন্দর। তাকে টাকা দিয়েছি।’
 
এমএসএস/জেডএ/এমএস

জাগোনিউজের খবর পেতে ফলো করুন
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।