‘আপনার সন্তান পড়বে সানিডেইলে, আমার সন্তানের কী হবে’

‘আপনার সন্তান না হয় পড়বে নামি দামি ইংলিশ মিডিয়ামের সানিডেইল স্কুলে, কিন্তু আমার সন্তানের তো সাধারণ একটা স্কুলে পড়ার অধিকার আছে। আমার সন্তানের কী হবে? আমাদের ন্যায্য পাওনা মিটিয়ে দিন।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সানোফি বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডমাইক হাতে নিয়ে ঠিক এভাবেই চাকরির অনিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছিলেন একজন কর্মকর্তা।
সানোফির প্রধান কার্যালয়ের সামনে লম্বা রাস্তার অনেকটা অংশজুড়ে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে সারিবদ্ধভাবে বসে বক্তৃতা শুনছেন অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘উই ওয়ান্ট কম্পেন্সেশন’, ‘উই নেভার গো টু অ্যানি থার্ড পার্টি’।
জানা গেছে, বহুজাতিক এ কোম্পানির ৫৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি, এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ও ক্ষতিপূরণ দেয়া নিয়ে টালবাহানা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিলম্ব করার প্রতিবাদে সানোফি বাংলাদেশ কর্মকর্তা কল্যাণ পরিষদ আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন।
সানোফি বাংলাদেশ কর্মকর্তা কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড তাদের ৫৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে চলে যাওয়ার প্রতিবাদে তারা দেড় মাস ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। কিন্তু সানোফি কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি না মেনে কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের দিকে হাঁটছে, যা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা পরিস্থিতির দিকে যেতে বাধ্য করছে।
তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সের এ কোম্পানিটি গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে লাভজনকভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া বা শেয়ার বিক্রির জন্য কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়ী নয়। সুতরাং কোম্পানি তার কৌশলগত কারণে শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণের দাবি পূরণ করা উচিত।’
আনোয়ার হোসেন বলেন, দাবি আদায়ের জন্য বিক্রয় বিভাগ টঙ্গী কারখানার সিবিএ আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কান্ট্রি চেয়ার রামপ্রসাদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুইন উদ্দিন মজুমদার এ ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সাড়া দেননি। উপরন্তু প্রতিষ্ঠান বিভাগের সব সেলস কলিগ ও ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজারদের সতর্কতামূলক চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন যে, কাজে যোগদান না করলে বেতন-ভাতা বন্ধ করা হবে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শুধু তাই নয়, বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা সানোফির মতো কোম্পানির জন্য লজ্জাজনক। যাদের টাকায় কোম্পানি চলে তারা অফিসের বাইরে- এটা অমানবিক সিদ্ধান্ত বলে তিনি মনে করেন।
ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের বিক্রয় বিভাগ, প্রধান কার্যালয় ও টঙ্গী ফ্যাক্টরির শ্রমিক তথা সিবিএ এবং কর্মকর্তারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। প্রয়োজনে তারা সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে যুক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায়ে সচেষ্ট থাকবেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমইউ/এসআর/পিআর