করোনা সংকটে যে ৫ বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসকে মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। চীনে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত করা হলেও এখন আর চীনে সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে ১২৪টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। এক কথায় বৈশ্বিক এই মহামারিতে মানুষের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করছে।

তবে এই কঠিন সময়ে আমাদের যেমন ভীতি কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত, তেমনি কিছু নির্দেশনাও মানতে হবে আমাদের।

করোনাভাইরাস বিষয়ে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছে সংবাদ ও মতামতভিত্তিক মার্কিন ওয়েবসাইট ভক্স। চলুন, সেসব নির্দেশনাগুলো জেনে নেয়া যাক-

১. হাত ধোয়ার বিকল্প নেই

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবার প্রথমে যে কাজটি করতে হবে, তা হলো-ঘনঘন হাত ধোয়া। গবেষণা বলছে, সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে এটি সবচেয়ে সহজ উপায়। এর মাধ্যমে ১৫-২০ শতাংশ সংক্রামক রোগ এড়ানো যায়। গবেষকদের মতে, বাথরুম ব্যবহার, নখ কাটা, কাশি, হাঁচি, অসুস্থ ব্যক্তির সেবাযত্ন করার পর এবং খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেয়া উচিত।

মার্কিন ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকে এক নিবন্ধে জেমস হাম্বলিন লিখেছেন, ‘হাত ধোয়ার পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন, বারবার মুখমণ্ডল স্পর্শ না করা, অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে অবস্থান করা এবং মোবাইল ফোনের মতো যেসব কঠিন পদার্থকে প্রয়োজেন আমাদের বারবার স্পর্শ করতে হয়, সেগুলো পরিষ্কার করা।

গবেষকরা বলছেন, এই সহজ পদ্ধতিগুলো মেনে চললে আপনি যেমন সুস্থ থাকবেন, তেমনি আপনার আশপাশের মানুষগুলোও নিরাপদে থাকবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত ধোয়া উচিত এবং এজন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে সাবানই উত্তম।

সতর্ক থাকার পরও আপনি যে রোগে আক্রান্ত হবেন না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরও যদি আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, আপনি কোনো ভালো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর শরণাপন্ন হন।

২. অতিরিক্ত সুরক্ষা সামগ্রী কেনা থেকে বিরত থাকুন

আপনার আর্থিক অবস্থা যদি ভালো থাকে তাহলে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে বড়জোর একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক কিনে রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই অতিরিক্ত নয়। কেননা আপনার মতো অন্যদেরও এ জিনিসগুলো ব্যবহার ও কেনার অধিকার রাখেন। আপনি যদি এগুলো অতিরিক্ত মজুত করে রাখেন, তাহলে স্টক শেষ হয়ে যাবে। ফলাফল সুরক্ষা জিনিসগুলোর দাম বেড়ে যাবে। এতে করে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এগুলো কেনা সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই এসব জিনিস কেনার সময় অন্তত তাদের কথা একটু ভাবুন। আর এগুলো কেনার জন্য কিন্তু দলবেঁধে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। কেননা বাইরে যত বেশি মানুষ ঘোরাফেরা করবে, তত সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।

৩. জাতিগত বিদ্বেষ নয় এবং বিদেশিদের অহেতুক ভয় করার কারণ নেই

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। সেখানকার একটি সামুদ্রিক মাছের বাজার থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে। এরপর বিশ্বের ১২৪টির বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। বিশ্বে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৭৩ জন। শুধু চীনেই মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৭০ জন।

চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চীন। এমনকি দেশটি থেকে যারা দেশে ফিরছেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।

খাদ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ইটার-এ জেনি জি. ঝাং লিখেছেন, ‘এই প্রাদুর্ভাব (করোনাভাইরাস) নিশ্চিতভাবেই অমানবিক প্রভাব ফেলেছে। এমন অবস্থা হয়েছে যে, চীনাদের অসভ্য, বর্বর জাতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কুকুর, বিড়াল এবং অন্যান্য প্রাণী ভক্ষণের মাধ্যমে বিপদজনক ও ছোঁয়াচে এই রোগ ছড়িয়ে চীনারা।’

চীন যেহেতু এশিয়ার একটি দেশ, তাই এশিয়ার দেশগুলো বর্ণবাদের শিকার হচ্ছে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর কয়েকজন জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন-এমন ঘটনাও দেখা গেছে। এর সবচেয়ে প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন দেশে চায়না টাউনে। চীনা অধ্যুষিত এই এলাকাগুলোর সব দোকান-পাট বন্ধ। তাদেরকে এড়িয়ে চলছে স্থানীয়রা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের আচরণগত কারণে কোনো বিপদজনক রোগ ছড়াচ্ছে কি না, তা বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে, জাতিগত বিদ্বেষ ছড়িয়ে নয়। তার মানে হলো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দেশনা অনুযায়ীই আমাদের চলতে হবে। এজন্য কোনো এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা এ জাতীয় কোনো সম্প্রদায় বসবাস করে বলে পুরো এলাকা এড়িয়ে চলা ঠিক হবে না। আমাদেরও সেখানে যাওয়া উচিত এবং তাদের কাছ থেকে কেনাকাটা করা উচিত।

৪. বয়স্ক ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ান

করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত যতজনের প্রাণহানি ঘটেছে, পরিসংখ্যান বলছে, এদের বেশিরভাগই বয়স্ক এবং বাকিরা বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তাই এ রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বয়স্করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কঠিন সময়ে আমাদের উচিত তাদের পাশে থাকা। বিশেষ করে যারা সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন, তারা পর্যাপ্ত খাবার-পানীয় পাচ্ছেন কি না, তা তদারকি করা উচিত। অন্ততপক্ষে আমরা সামাজিক যোগামাধ্যমে তাদের সঙ্গে কানেক্ট হতে পারে কিংবা ফোন কথা বলতে পারি।

৫. ভুয়া খবরে কান না দিই

করোনাভাইরাস আবির্ভাবের শুরুতেই এই ভাইরাস নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়া হচ্ছে। ফেসবুক ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ-সংক্রান্ত পোস্ট দেয়া হচ্ছে এবং ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয়েই কেবল তা আমরা আমলে নিতে পারি। এজন্য সব খবরে যেন আমরা কান না দিই এবং কেবলমাত্র বিশ্বস্ত সূত্র থেকেই তথ্য নিই।

সূত্র : ভক্স

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।