করোনা আতঙ্কে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে হাত মেলাননি সিইসি!
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে হাত মেলাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম।
শনিবার (১৪ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাত মেলাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ জান্নাতুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের সম্মানিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাহেব এখানে এসেছেন। এসেই করোনাভাইরাসের ভয়ে উনি হাত মেলাননি আমাদের সঙ্গে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিনিতভাবে অনুরোধ করবো, আমাদের শত বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের যে অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছিলো, আমার মনে হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান, সেটা যখন আমরা পেছাতে পেরেছি, এই নির্বাচন পাবলিকের কাছে, ভোটরদের কাছে, সিটিবাসির কাছে একটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বিষয় হয়ে গেছে। এই প্রোগ্রাম পেছাতে পারলে, আমাদের নির্বাচন কমিশনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন করোনা যতদিন না সারে ততদিন চট্টগ্রামের নির্বাচন স্থগিত করা হোক।’
নির্বাচন কমিশনার করোনা আতঙ্কে হাত না মেলালেও নির্বাচনের প্রার্থীরা তা করতে পারেন না জানিয়ে এ মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘উনি (সিইসি) আমাদের নির্বাচন কমিশনার আমরা নির্বাচন করতেছি, উনি যা বললেন আমরা তা শুনলাম। কিন্তু কোনো ভোটার হাত বাড়িয়ে দিলে হ্যান্ডশ্যাক না করলে বা মোসাফা না করলে, তখন বলবে, ‘বাবারে বাবা এখনো মেয়র হতে পারে নাই এখনি হ্যান্ডশ্যাক করেনা, আর মেয়র হলে কি করবেন?’
নির্বাচন কমিশনের কিছু নিয়মকানুন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে অভিযোগ করে জান্নাতুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি ঢাকা সিটি নির্বাচন হয়ে গেছে। আমাদের দলীয় প্রার্থী ছিলো, আমি সেখানে ছিলাম, ক্যাম্পেইন করেছে দেখেছি। তিন মিটারের ওপরে কোনো ব্যানার বানায় নাই, তারপরও আমাদের ব্যানারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এ ব্যপারে নির্বাচন কমিশনারের সিদ্ধান্ত আমি আশা করছি।’
এ সময় তিনি নির্বাচনী প্রচারের সময়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ তাদের প্রচারে সমস্যা করছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘বিকেল ২টার আগে মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা হোক, আমরা সে সময় ফ্রি আছি।’
৫০ শতাংশ ভোট ব্যালটে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে এ মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘ইভিএমের ক্ষেত্রে আমরা আমার আগের ভাইদের সাথে একমত। অর্ধেক ভোট ইভিএমএ নেয়া হোক, বাকিটা ব্যালট দেয়া হোক। আমরা বুঝতে পারবো আপনারাও জানতে পারবেন ভোট কোথায় বেশি কাস্ট হয়। রিজার্ভ ভোটের ক্ষেত্রে একমত ১ শতাংশ রিজার্ভ ভোট রাখা হোক।’
গোপন কক্ষে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘বুথ কেন করা হয়? বুথ হলো গোপনীয় রক্ষার জন্য। আমরা ঢাকায় দেখেছি ভোটাররা ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ভোট দিতে গেছে, কিন্তু বুথে গিয়ে দেখা গেছে আগে থেকেই সেখানে কেউ বসে রয়েছে। বুথে বসে বলছে, আপনার ভোট হয়ে গেছে আপনি চলে যান। ভোটরদের একটাই কথা, ভোট কি দিতে পারবো? ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে এক ঘন্টা পরে কি ফিরে আসতে হবে? এই প্রশ্নগুলো যাতে চট্টগ্রামে যেন না হয় এই দাবি আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে করছি।’
প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘মানুষ আমাদের বলেন আপনারা তো মাঠে থাকেন না। মাঠে থাকতে হলেতো মাথা ফাটাফাটি করতে হবে, খুন করতে হবে অথচ প্রশাসন চুপ থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের বলতে হবে বুথের ভেতর কেউ বসে থাকলে তাকে বের করে দেয়ার জন্য প্রশাসনকে জানানোর জন্য। বিগত নির্বাচনের অভিজ্ঞতাতে আমরা দেখেছি প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে। পাওয়ারফুল (ক্ষমতাবান) দলের পক্ষই নেয়, আমি আশা করছি এমন যেন না হয়। বুথের ভেতর মানুষ বসানোর যে সিস্টেম, সে সিস্টেমটা যেন প্রতিহত করা হয়।’
সভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মঞ্জুর, ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও সতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী।
জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব ফরহাদ আহমেদ খান, সিএমপির উপ-কমিশনার (সিটি এসবি) আবদুল ওয়ারিশ, চসিক নির্বাচনের রির্টানিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মনির হোসেন খান।
আবু আজাদ/এমএসএইচ