করোনায় দেশের অর্থনীতি ও প্রবাসী শীর্ষক টেলিকনফারেন্স

আহমাদুল কবির
আহমাদুল কবির আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯:২৪ পিএম, ২২ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পূর্বনির্ধারিত আলোচনা সভা পরিবর্তন করে সেন্টার ফর এনআরবি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও প্রবাসী বিষয়ে প্রস্তুতি শীর্ষক টেলিকনফারেন্সের আয়োজন করেছে। সেন্টারের লিয়াঁজো কার্যালয় ঢাকা থেকে এই কনফারেন্স পরিচালিত হয়। দুই দিনব্যাপী (২১ ও ২২ মার্চ) কনফারেন্স পরিচালনা করেন চেয়ারপার্সন এম এস সেকিল চৌধুরী।

সার্বিক সহায়তা করেন সেন্টারের সদস্যবিশিষ্ট ব্যাংকার ইশতিয়াক আহমদ চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার এম এ রাজ্জাক ও এবিএম মোস্তাক হোসেন, গবেষণাকর্মী মুশরেকা আফরোজ খান অরিন ও আয়েশা সিদ্দিকা ও স্বেচ্ছাসেবক ওয়াসমির চৌধুরী।

টেলি-কনফারেন্স শুরুর মুহূর্তে বাংলাদেশ সময় ২১ মার্চ বেলা ১১টায় বিশ্বব্যাপী করোনার হালনাগাদ তথ্য পরিসংখ্যান ছিল মোট আক্রান্ত ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৩ জন। ও মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ৪২১ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরে ৯১ হাজার ৯৫২ জন।

টেলি-কনফারেন্সে বিভিন্ন দেশের প্রবাসী, অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী নেতারা ছাড়াও যোগদান করেন সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও বিভিন্ন পেশার নেতারা।

Corona4.jpg

দেশে-বিদেশে নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে টেলিফোনের মাধ্যমে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মতামত দেন বহু প্রবাসী-দেশি ব্যক্তিরা। তাদের মধ্যে বিভিন্ন পেশার লোকজন ছিল। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী শেখ শহিদুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সংসদ সদস্য ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী, পুলিশের সাবেক আইজি একেএম শহিদুল হক, প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহিদুল আলম এনডিসি, আইইডিসিআর- এর উপদেষ্টা চিকিৎসা গবেষক ডা. মোস্তাক হোসেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাশ উদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দীন আহমদ, এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়াঁ, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন, ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডে অ্যাডভোকেট মো. ইকবাল হোসেন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, এফবিসিসিআই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ, এফবিসিসিআই-এর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও দোকান মালিক সমিতির নেতা মো. হেলাল উদ্দিন, অর্থনীতিবিদ খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ, সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবির উপস্থিত ছিলেন।

Corona4.jpg

আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমদ, দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, সাপ্তাহিক ২০০০ সম্পাদক গোলাম মোর্তাজা, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান, টিভি অ্যাঙ্কর ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জিল্লুর রহমান, বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান, বায়রার মহাসচিব শামীম আহমদ চৌধুরী নোমান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর সদস্য খুজিসতা নুর-ই-নাহনী মুন্নী, ব্যাংকার আব্দুল হালিম চৌধুরী, ব্যাংকার ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. একেএম শিরিন, মার্চেন্ট ব্যাংকার মো. আহসান উল্লাহ, ঢাকা বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মো. গোলাম মোতফা, ঢাকা চেম্বারের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী সুয়েব চৌধুরী।

এ ছাড়া আমেরিকা প্রবাসী পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ সুমন, ব্রিটেন প্রবাসী ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স-এর নেতা শাহ্গির বক্ত ফারুক, ব্রিটেন প্রবাসী সাংবাদিক মাহবুব রহমান, ব্রিটেন প্রবাসী কো-অপারেটিভ কর্মী শাহিন রশীদ, মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক আহমেদুল কবির, ইতালি প্রবাসী সাংবাদিক মো. মনিরুজ্জামান, সৌদী প্রবাসী কাপ্তান হোসেন ও দুবাই প্রবাসী মামুন সরকার উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা বিশিষ্ট চিকিৎসা গবেষক ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ১৪ দিনের সেল্ফ কোয়ারেনটাইন সার্বিকভাবে পালন করতে হবে। এতে শুধু প্রবাসী নয় তাদের আত্মীয় স্বজন ও দেশবাসী এই বিপদ থেকে রক্ষা পাবেন। চিকিৎসা সরঞ্জামের পূর্বে স্বল্পতা থাকলেও এখন তা নেই সুতরাং চিকিৎসা কর্মীদের ও আক্রান্ত রোগীদের অসুবিধা হবে না।

অর্থনীতিবিদ খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন যেন প্রবাসীরা নির্বিঘ্নে তাদের র্কমস্থলে যোগদান করতে পারে যে সকল প্রবাসীরা বেকার অবস্থায় আছে তাদের জন্য সরকার কিছু ভাতার ব্যবস্থা করলে তারা তাদের জীবনযাপন স্বাভাবিকভাবে করতে সক্ষম হবে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি, বাংলাদশে মিশিন এবং হাইকশিনের সহযোগিতা আমাদের কাম্য।

প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শহিদুল আলম এনডিসি বলেন, যথাযথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে করোনা আমাদের শ্রম বাজারের জন্য নতুন সুযোগ হিসেবে আসতে পারে।

এফবিসিসিআই-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, খুবই বিপদজনক পরিস্থিতি। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক শক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে শুধু রেমিট্যান্সই ইতিবাচক ধারায় ছিল। আজ রোগ বিস্তার করে তারা যেন বদনামী না হন। এ ব্যাপারে দেশবাসী ও প্রবাসীদের রোগ প্রতিরোধের নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে।

পুলিশের সাবেক আইজি একেএম শহিদুল হক বলেন, ব্যাংক ও কর্পোরেট হাউসগুলোর উচিত বিলম্ব না করে এখনই নিজেদের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।

অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমদ বলেন, আর্থিক সংকট মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহায়তার পরিকল্পনা নেয়া দরকার। যারা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ না নিয়ে ছোট ছোট বিনিয়োগ করেছেন তাদের বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে যাতে তারা সহায়তার বাইরে পড়ে না থাকেন।

ব্রিটেন প্রবাসী বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স-এর নেতা শাহ্গির বক্ত ফারুক বলেন, প্রবাসীদের দেশে ও প্রবাসে ভ্রমণ পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে সবার স্বার্থে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-এর সদস্য খুজিসতা নুর-ই-নাহনি মুন্নী বলেন, ব্যবসা ও প্রবাসী আয় দু’জায়গায় ক্ষতি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, দুনিয়ার সর্বত্র ত্রাস সৃষ্টি করেছে করোনা। ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, রাজা উজির কেউ এর আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। আমরা এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারিনি তাই প্রস্তুতি নিতে বিলম্ব করেছি, নিয়মিত ব্রিফিং সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে হলে মানুষ এর গুরুত্ব দেবে। দেশে দেশে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীরা নিয়মিত ব্রিফিং করছেন, বাংলাদেশে মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হলে উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

Corona4.jpg

তিনি বলেন, প্রবাসীদের আরও সচেতন করা প্রয়োজন। তারা আমাদের প্রাণ ও অর্থনৈতিক শক্তি। সামগ্রিকভাবে রোগের পরীক্ষা পদ্ধতি জোরদার করে সকলে মিলে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ব্যাংকার ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. একেএম শিরীন বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো নানা সহায়তা প্রদান করছে ব্যবসায়ীদের। আপাতত আমরা নিজেরাই এই তহবিল সরবরাহ করতে পারব তবে দীর্ঘ মেয়াদে তহবিল লাগবে।

সাপ্তাহিক ২০০০ সম্পাদক গোলাম মোর্তাজা বলেন, প্রায় পৌনে তিন মাস সময় নষ্ট হয়েছে না বুঝে, অভিজ্ঞতা নেয়া যেত অন্য দেশ থেকে তা করা হয়নি। আর বিলম্ব না করে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন। জনসচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমান বলেন, কঠিন পরিস্থিতি, অযথা কথা না বলে প্রধানমন্ত্রীর উপর আস্থা রাখতে হবে। সরকারের সার্বিক তদারকি জোরদার করা জরুরি।

ব্রিটেন প্রবাসী সাংবাদিক মাহবুব রহমান বলেন, প্রবাসীদের উচিত নিজেদের, পরিবারের ও দেশবাসীর স্বার্থে নিরাপদ দূরত্বে থাকা। অন্যথায় রোগের বিস্তার সামাল দেয়া যাবে না। খোদ ব্রিটেন এ ব্যাপারে হিমশিম খাচ্ছে।

আমেরিকা প্রবাসী পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ সুমন বলেন, আমেরিকায় কর্মহীনতার জন্য সরকার ভাতা প্রদান করছে কিন্তু তাও যথেষ্ট নয়, সহসাই মানুষের মধ্যে অস্থিরতা আরো বেশি তৈরি হবে। দেশে-বিদেশে আমাদের প্রবাসীদের কঠোর ‘সেল্ফ কোয়ারেনটাইন’ এ থাকতে হবে, দেশে অথবা দেশ থেকে প্রবাসে সকল প্রকার ভ্রমণ সম্পূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে। সকল প্রকার কায়িক যোগাযোগ কঠোরভাবে বন্ধ রাখতে হবে। সোশ্যাল ও সকল প্রকার জমায়েত নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মিডিয়া ব্যক্তিত্ব জিল্লুর রহমান বলেন, প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াতে হবে সক্রিয়ভাবে। কথায় ও কাজে তাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা যাবে না। ঢাকা চেম্বারের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কৃষি উপকরণ ব্যবসায়ী সুয়েব চৌধুরী বলেন, কৃষি পণ্যের সরবরাহ লাইন প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। প্রতিদিন যেখানে হাজারও মালবাহি গাড়ি ঢাকায় আসতো এখন তা হচ্ছে না এতে প্রান্তিক চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা প্রয়োজন।

ব্যাংকার আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, পোশাক শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা করোনাজনিত কারণে শিগগিরই প্রভাবিত হবে এবং এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক অর্ডার ক্যান্সিল হয়ে যাচ্ছ, কাঁচামালের রপ্তানিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এতে কল-কারখানাগুলো বন্ধের ঝুঁকিত পড়েছে।

এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ২০০৭, ২০০৮ ও ২০০৯ এর মতো এবারও বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হতে পারে এবং এটি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এনবআিররে রেভিনিউ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে ব্যবসায়ীদের আয় কমবে, কমে যাবে ক্রয় ক্ষমতা ও দেশের বাইরে টাকা আদান প্রদানে যেন কোনো বাঁধা না আসে সেই ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকে নজর রাখতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন দেশে কলকারখানা বন্ধে ঘোষণা এবং উৎপাদন স্থগতি-এর ফলে বাংলাদেশে কাঁচামাল রপ্তানি ও বন্ধ। জুন ৩০ পর্যন্ত বাংলাদশে ব্যাংক ঋণ খেলাপি ঘোষণা করবে না প্রবাসীদের মধ্যে সচতেনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং কোয়ারেন্টাইন এর পদ্ধতি তাদেরকে শেখাতে হবে।

বায়রার মহাসচিব শামীম আহমদ চৌধুরী নোমান বলেন, প্রবাসী ও জনশক্তি রপ্তানিকারক সকলেই বিপদে আছি। আর্থিক সহায়তা জরুরিভাবে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন অন্যতায় কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান করা কঠিন হবে।

ইতালি প্রবাসী সাংবাদিক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার ইতালিতে সব কাজকর্ম স্থবির আছে অর্থনৈতিক অবস্থা করুণ। নিত্যদিনের খরচের টাকার ব্যবস্থা করা ও প্রবাসীদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে, অত্যন্ত জরুরি কাজ যেমন খাবার এবং ওষুধ কেনার অনুমতি আছে সরকার থেকে, নিয়ম লঙ্ঘন করলে জেল অথবা জরিমানা হতে পারে।

ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারের উচিত স্থলবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা, করোনাভাইরাস শনাক্ত করার জন্য জরুরি যন্ত্রপাতি এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ সরকারকে দ্রুততম সময়ে প্রদান করতে হবে, কোয়ারেন্টাইন-এর বিষয়টা সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে এবং যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. ফরাশ উদ্দীন আহমদ বলেন, স্বল্পকর্মী দিয়ে উৎপাদন খাত চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে, সরকাররে উচিত স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য কিছু দিনের জন্য হলেও রেশন ব্যবস্থা করা। দু:খের বিষয় তাদের হয়ে কথা বলার কেউ নেই।

সংসদ সদস্য ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, করোনার কারণে রেমিট্যান্সে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, এর কারণ হচ্ছে অনেক প্রবাসী চাকরি হারাচ্ছেন এবং কেউ কেউ দেশে ফেরত চলে আসছে এবং এখন অনেক অনশ্চিয়তা আছে যে এই প্রবাসীরা কবে আবার তাদের র্কমস্থলে ফেরত যেতে পারবে, রপ্তানি খাতে সিংহভাগ ও হুমকির মুখে, বস্ত্র খাতের বড় দুই ক্রেতা ইউরোপ এবং আমেরিকা এখন সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো প্রবাসীরা এখন যেখানে আছে সেখানেই থাকা উচতি।

অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবির বলেন, শুধু আইইডিসিআর নয় দেশে আরও অনেক সক্ষম প্রতিষ্ঠান রয়েছে এদের কাজে লাগাতে হবে। ব্রিটেন প্রবাসী কো-অপারেটিভকর্মী শাহিন রশীদ বলেন, যারা বাংলাদেশের র্অথনীতিতে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রাখবে তারা বেকার হয়ে আছে, আবার কিছু প্রবাসীরা দেশে এসে আত্মীয়-স্বজনদরে সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করছে এতে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে।

মালয়েশিয়া প্রবাসী সাংবাদিক আহমেদুল কবির বলেন, মালয়েশিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছে নয়জন নতুন রোগী ১৫৩ জন এবং আক্রান্ত ১১৮৩ জন, প্রবাসীরা র্কমস্থলে যেতে পারছে না এতে রেমিট্যান্স প্রেরণেও বাধা পড়েছে, রোববার থেকে সেনাবাহিনী রাস্তায় নামবে যেকানো ধরনের অনিয়মে হলে ১০ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ৩২৭ মিলিয়ন ডলারে পোশাক শিল্পের অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ এবং সরকারের বৈঠক হয়েছে যেখানে সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যথাযথ নীতিমালা প্রণয়ন করবে, পুঁজিবাজারেরও প্রভাব পড়েছে করোনার। চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি, হাইকমিশন ও মিশনগুলোর উচিত সংশ্লিষ্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলোর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা যেন প্রবাসীরা নির্বিঘ্নে তাদের র্কমস্থলে ফেরত যেতে পারে।

কনফারেন্সে যোগদানকারী সকল বক্তা বিলম্ব না করে রোগ প্রতিরোধ সরঞ্জাম সংগ্রহ ও কাজ এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মতামত দেন। আলোচক ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তারা বলেন, সকলের ঐকবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে এই বিপদ থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করতে হবে।

প্রবাসীদের প্রতি সহমর্মিতা নিয়ে পাশে থাকতে হবে এবং বিদেশে যেন তারা চাকরি না হারায় এ ব্যাপারে সরকারকে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। দিনমজুর ও স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা বাড়াতে হবে এবং ঋণ ব্যবস্থাপনার সুবিধাদি অব্যাহত রাখতে হবে নচেৎ বেকারত্ব ও মহামন্দা দেখা দিবে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় হতে হবে। প্রবাসীরা যাতে বিদেশে আর্থিক সহায়তা পান সে ব্যাপারে মিশনগুলোকে তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে।
দীর্ঘ এই টেলি-কনফারেন্সে যোগদানকারী, সহায়তাকারী ও মতামত প্রদানকারী সকলকে সেন্টার ফর এনআরবির পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।

এমআরএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।