‘করোনা তো ভয় ভাই, কিন্তু কাজ কইরা খাইতে অইবো’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:১৪ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২০

সারা বিশ্বে এখন এক আতঙ্কের নাম নভেল করোনাভাইরাস। বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৮ এবং মারা গেছে ১৬ হাজার ৫১৪ জন। বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৩৩ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে মারা গেছেন তিনজন।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বন্ধের এ সময় নিয়মিত বেতন পাবেন চাকরিজীবীরা।

করোনাভাইরাসের কারণে রাস্তায় মানুষের চলাফেরা কমেছে, গণপরিবহনে মানুষ কমেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। সব মিলিয়ে কাজ কমেছে খেটে খাওয়া মানুষের। এ বিষয়টিই তাদের ভাবিয়ে তুলছে। আবার ফুটপাতের হকার, পরিচ্ছন্নতাকর্মী যারা আছেন, তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছেন না। ফলে তারা যেভাবে বাইরে ঘোরাফেরা করছেন তাতে তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে।

এমনই একজন রাজধানীর বেগুনবাড়ির মাছু। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কাওরান বাজারের কাঁচাবাজারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছিলেন তিনি। করোনায় সংক্রমণের এই সময়ে বাসায় থাকা যায় কি না জানতে চাইলে মাছু বলেন, ‘না ভাই। আমরা হইছি গরিব মানুষ। একদিন বাইয়া (কাজে না গেলে) থাকলে আমরার (আমাদের) পেট চলবো না। ৪০০ টাকা রোজ পাইয়া, সব জিনিসের দাম বাড়াইয়া হালাইছে। আমরা দিন কামাই করি, দিন খাই। ওইডাই (করোনা আক্রান্ত হওয়া) তো ভয় ভাই। কিন্তু কাজ তো কইরা খাইতে অইব।’

কেবল বেসরকারি নয়, সরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও করোনার এই সময়ে নিরাপদ নন। মঙ্গলবার কারওয়ান বাজার এলাকায় কোনো রকম সুরক্ষা ছাড়াই (মাস্ক, গ্ল্ভস) কাজ করছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী লুৎফর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এখন পযর্ন্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষার কোনো কিছু হাতে পাইনি। হাতে পাইলে না বুঝতে পারব। অফিস থেকে বলছে দেবে। কিন্তু কখন দেবে, সেটা নিশ্চিত এখনও হয় নাই।’

lab

১৯৫ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা, ১৬৫১৪ জনের মৃত্যু
চীনের উহান থেকে উৎপত্তি লাভ করা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৮ এবং মারা গেছে ১৬ হাজার ৫১৪ জন। অপরদিকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১ লাখ ২ হাজার ৬৯ জন। করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। ইউরোপের এই দেশটিতে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ৬০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃত্যু ৬ হাজার ৭৭। দেশটিতে নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮৯। ফলে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৯২৭। এছাড়া চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭ হাজার ৪৩২ জন।

এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে চীনে। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজার ১৭১ এবং মারা গেছে ৩ হাজার ২৭৭ জন।

বাংলাদেশে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ
করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রণালয় থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক ভিডিও বার্তায় এ কথা জানান।ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার দেশবাসী জনগণ, যাত্রীসাধারণ, মালিক, শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছে যে, আগামী ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে গণপরিবহন লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ওষুধ, জরুরি সেবা, জ্বালানি, পচনশীল পণ্য পরিবহন এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। পণ্যবাহী যানবাহনে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না বলেও ভিডিও বার্তায় জানান ওবায়দুল কাদের।

পিডি/এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।