করোনা আতঙ্কেও সাজছে শহর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৩৫ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২০

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস এখন মহামারি রূপ নিয়েছে। প্রতিদিনই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে শতশত মানুষ। শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্রই বিরাজ করছে আতঙ্ক। ফাঁকা হচ্ছে রাস্তা-ঘাট। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে শহরজুড়ে করা হচ্ছে আলোকসজ্জা। বিভিন্ন সড়ক, সড়কদ্বীপ ও ভবনে শোভা পাচ্ছে নানা রঙের বাতি। সন্ধ্যার পরই রং-বেরংয়ের আলোতে আলোকিত হচ্ছে শহর।

বৃহস্পতিার ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের ৪৯তম মহান স্বাধীনতা ও লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় দিবস। মহান এ দিনটি স্মরণ রাখতেই এ আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সচিবালয়, ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

jagonews24

তবে এলাকাগুলোতে রাতে আলোকসজ্জা থাকলেও নেই আগের মতো জনসমাগম। নেই কোলাহল। দলবেঁধে আগের মতো মানুষ দেখছে না এসব রঙিন আলোক বাতি। সবাই এখন মরণব্যাধি ভাইরাসের ভয়ে আতঙ্কিত। ফলে লোকহীন শহরে বর্ণিল সাজ যেন ফিকে হয়ে গেছে।

রাত সাড়ে ৮টা। কাজ শেষে বাসায় যাচ্ছেন মাসুদ নামের এক ব্যক্তি। সচিবালয় মনোমুগ্ধকর আলোকসজ্জা দেখছেন আর বলছেন। প্রতি বছরই স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস উপলক্ষে রঙিন বাতি দিয়ে শহরের ভবনগুলো আলোকসজ্জা করা হয়। এবারও করা হচ্ছে। কিন্ত বিগত বছরগুলোর মতো এগুলো দেখার লোক নেই। মানুষ খুব ভয়ে আছে। করোনাভাইরাসের কারণে কি যে হবে দেশের। আল্লাহ ভালো জানে।

jagonews24

এদিকে আশরাফুল নামের আরেক পথচারী বলেন, ভবনগুলোর এ আলোকসজ্জা আমার ছেলে-মেয়ে দেখে খুব খুশি হয়। তাই প্রতি বছর ২৫ মার্চ রাতে এসব দেখানোর জন্য তাদের নিয়ে ঘুরতে বের হই। কিন্তু এবার হবে না। দেশের যে অবস্থা। প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। অফিস বন্ধ হলে আমিও আর বেরই হব না। টানা ১০ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে চলে যাব।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে স্বাধীনতা দিবসের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার সরকার ২৬ মার্চ জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোসহ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে গণঅভ্যর্থনা এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানও বাতিল করা হয়েছে।

তারপরও জাতীয় এ দিবসটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে স্মরণ করে বাঙালি জাতি। তাই মহামারি করোনা আতঙ্কেও চলছে আলোকসজ্জা। জানিয়ে দিচ্ছে আসছে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস।

jagonews24

৪৯ বছর আগে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল।

পাক বাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন’। সেই থেকে শুরু। এরপর টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচার হত্যা, অগ্নি সংযোগ, ধ্বংসলীলা ও পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াইয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।

এসআই/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।