করোনা পরিস্থিতি যেভাবে সামলাবে চট্টগ্রাম

আবু আজাদ
আবু আজাদ আবু আজাদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২০ এএম, ৩১ মার্চ ২০২০
রাজধানী ঢাকার পর চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছিল। ইতোমধ্যেই তিন সপ্তাহ কেটে গেছে, সুখবর হলো এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে কোনো করোনা রোগী নেই। তবে ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে সমন্বিত প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রামের প্রশাসন।

ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে নেওয়া প্রস্তুতিতে সন্দেহভাজন করোনা রোগী শনাক্ত করা থেকে শুরু করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে তাকে দাফন বা দাহ করা পর্যন্ত বিস্তারিত সব এই কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

রোববার (২৯ মার্চ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের আহ্বানে করোনা মোকাবেলায় মাঠে থাকা সেনাবাহিনী, পুলিশ, সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশেষ সমন্বয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় গৃহীত ১৮টি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি।

১ . করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণ :

রাজধানী ঢাকার পর চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা শুরু হয়েছে গত ২৫ মার্চ থেকে। স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে চট্টগ্রাম বিভাগের সন্দেহভাজন সকল করোনা রোগীর নমুনা পরীক্ষা করবে বিআইটিআইডি। এক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সহায়তা নেবেন।

এছাড়া প্রথমবারের মতো সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাজে লাগিয়ে এলাকাভিত্তিক করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। তিনি জানান, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকায় সন্দেহভাজন করোনা রোগী ও বিদেশ প্রত্যাগতদের বিষয়ে তথ্য দেবেন। এছাড়া যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের বাড়ি মার্কিং ও প্রয়োজনে সঠিকভাবে নির্দেশনা মেনে চলছেন কিনা তা মনিটরিং করবেন এবং তাদের বিষয়েও প্রশানসকে তথ্য দেবেন।

এদিকে এ সিদ্ধান্তে পর সোমবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কাউন্সিলরদের বৈঠকে করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বৈঠকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতের জন্য জনপ্রতিনিধিদেরকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। সম্ভাব্য করোনা রোগী ও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাদের মনিটরিংয়ের জন্য কাউন্সিলরদের চসিকের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানের পিপিই সরবরাহ করা হবে।

এছাড়া গুরুতর রোগীদের নমুনা রোগীর বাড়িতে গিয়েই সংগ্রহ করবে চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) বিশেষজ্ঞ টিম।

২. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা :

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের দু’টি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে। হাসপাতাল দু’টি হচ্ছে জেলার সীতাকুণ্ডে অবস্তিত বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ও নগরের আন্দরকিল্লায় অবস্থিত ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বিআইটিআইডিতে ৫০টি ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০০টি আইসোলেশন শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে পুরোপুরিভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হবে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।

chittagong

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নগরের আন্দরকিল্লাস্থ ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে।

২ (ক). কেমন হবে সে চিকিৎসা? :

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আলাদা কোনো চিকিৎসা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। মূলত ভাইরাসে আক্রন্ত রোগীর যে ধরনের সমস্যা দেখা দেবে সেই চিকিৎসাই করা হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারো লিভার ফেইলিয়র হতে পারে, হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। উপসর্গ বুঝেই তার চিকিৎসা করা হবে।’

৩. রোগীরা আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে যেভাবে :

চট্টগ্রামে সম্ভাব্য করোনা আক্রান্ত রোগীদের যে দু’টি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে তার একটিতেও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট বা আইসিইউ সুবিধা নেই। ফলে করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীরা আইসিইউ সেবা পাবেন না এ আশঙ্কা করছেন অনেকে।

তবে সে আশঙ্কা না করার আহ্বান জানিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর জাগো নিউজকে বলেন,‘হুট করে চাইলেই কোথাও আইসিইউ সুবিধা দেওয়া যায়না। এ ক্ষেত্রে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার বিষয় যুক্ত রয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি সচল আইসিইউ বেড রয়েছে। আমরা আপাতত চমেক হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার বাইরে রাখতে চাইছি। তবে খুব জরুরি হয়ে গেলে তো ব্যবহার করতে হবে।’

সবার জন্য আইসিইউ সুবিধার প্রয়োজন হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি একশ করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসে, সেখান থেকে হয়তো দুইজনের আইসিইউ সুবিধার প্রয়োজন হতে পারে। তাই আইসিইউ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে তাদের আইসিইউ বেড তৈরি রাখতে বলা হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রামের ছয়টি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সুবিধা আমরা নেবো। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নগরের বেসরকারি ‘পার্কভিউ হসপিটাল’। আর বাকি পাঁচটি হাসপাতালের বিষয়ে পর্যায়ক্রমে ঘোষণা আসবে। আর যদি প্রয়োজন হয় তাহলে সব বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’

৪. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন বা দাহ :

দুর্ভাগ্যবশত যদি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির যদি মৃত্যু হয় তাহলে তাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত পন্থা অনুযায়ী দাফন বা দাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির যদি মৃত্যু হয় তাহলে তাকে দাফন বা দাহ করার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দাায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে বলা হয়েছে লোক তৈরি রাখার জন্য।’

সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জানিয়েছেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী মারা গেলে যার যার ধর্মীয় রীতিতে সৎকার করাসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার আরেফিননগরে একটি খালি জায়গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফন করা হবে। হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিষয়ে সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’

চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত পন্থা অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কবর দেওয়া হবে। প্রশিক্ষিত চারজন ব্যক্তি মৃতের গোসলসহ অন্যান্য সব কাজ করবেন। এই ব্যক্তিরা সম্পূর্ণভাবে সেফটি নিয়েই এ কাজ করবেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীকে কবর দেওয়া হলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়ানোর আর কোনো সম্ভাবনা থাকে না।’

korona

ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট সুবিধা সম্বলিত নগরের বেসরকারি ‘পার্কভিউ হাসপাতাল’ এ করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

৫. সন্দেহভাজন মৃত্যু হলে :

দেশে বিভিন্ন এলাকায় নানা কারণে মৃত ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবার অনেকে করোনা রোগের লক্ষণ নিয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় কবর দেওয়া নিয়ে নানা সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, ‘কোনো সন্দেহভাজন মৃত্যুকে যদি করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়, তাহলে তাকে গোসল দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। কিন্তু অবশ্যই ওই ব্যক্তিতে স্বাভাবিকভাবেই দাফন করা হবে। কারণ মৃত ব্যক্তির যেহেতু শ্বাস-প্রশ্বাস থাকে না তাই এতে করোনা ছড়ানোর ঝুঁকি নেই।’

৬. চিকিৎসক-চিকিৎসাকর্মী ও তাদের সুরক্ষা :

করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকাদের একেবারে শীর্ষে রয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের যারা সহায়তা করবেন নার্স বা ব্রাদাররাও কোনোভাবেই এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত নন। তাই চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে চিকিৎসকদের সুরক্ষার কথা ভাবছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হবে। এছাড়া সে সকল চিকিৎসক ‘আইসিইউ’তে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের থাকা-খাওয়ার জন্য আইসোলেটেড হোমের সুব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া তাদেরকে মানসিকভাবে উৎসাহিত করতে সকলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করারও উদ্যোগ থাকবে।

সে কথা জানিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিটি ধাপে আলাদা আলাদা সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ সুরক্ষা পাবেন। তাদের জন্য সরবরাহ করা পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসসহ সব ইকুইপমেন্ট হবে হাইলি সিকিউর। এর বাইরে যারা থাকবেন, তাদের স্ব স্ব কাজের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।’

৬ (ক). কারা দেবেন করোনা চিকিৎসা ?:

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমাদের মোট ৬৭৩ জন চিকিৎসক রয়েছেন। তাদের নিয়েই করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হবে। এখানে মূলত করোনাভাইরাসের কারণে আক্রান্ত রোগী যে ধরনের সমস্যা ফেস করবেন সে চিকিৎসাই করা হবে।’

৭. সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন বাস্তবায়ন :

গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ছুটির ষষ্ঠ দিন আজ (মঙ্গলবার)। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আগামী ৪ জুলাই পর্যন্ত এ অঘোষিত লকডাউন চলবে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকার মনে করছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে ছুটি ভালো ফল দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এই ছুটির মেয়াদ আরও কিছুদিন বাড়তে পারে। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এ অবস্থায় লকডাউন বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর ১৭টি টিম কাজ করছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম জেলাসহ তিন পার্বত্য জেলায় মোট ৪৩টি টিম এখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় মাঠে আছে। চট্টগ্রামে অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে জেলা প্রশাসনের ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট। আছেন থানার ওসিরাও।

ইতোমধ্যে পতেঙ্গা সৈকত, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা, গুলিয়াখালী সৈকত, বাঁশবাড়িয়া সৈকত, কুমিরা ঘাট, বাঁশখালী সৈকত, আনোয়ারা সৈকতসহ সব দর্শনীয় স্থান ও পর্যটন কেন্দ্রে জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘সরকার ঘোষিত এই লকডাউন বাস্তবায়ন করতে মাঠ পর্যা্য়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে নগর পুলিশ। বন্দরনগরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রতি মুহূর্তে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ দল। অযাচিতভাব যে কেউ বাইরে ঘোরাঘুরি করলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বাসায় পাঠবে।’

korona

প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য ব্যবহার হবে নগরের সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতাল।

৮. কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়ন :

বিদেশ প্রত্যাগত বা করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন এমন ব্যক্তিকে আলাদা রাখার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ হোম কোয়ারেন্টাইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন দুটো বিষয়েই উদ্যোগ নিচ্ছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হোম কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় স্ব স্ব থানার ওসি ও কাউন্সিলররা তত্ত্বাবধায়ন করবেন। এছাড়া উপজেলাগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার সর্দাররা দেখবেন।’

তিনি জানান, বিদেশ প্রত্যাগত ৯৭৩ জনকে জেলা প্রশাসন থেকে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। এখনও ৯৩৮ জনের ক্ষেত্রে সেই কোয়ারেন্টাইন বলবৎ আছে। কোয়ারেন্টাইন পূর্ণ করেছেন ৩৫ জন। তাদেরকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে থ্যাঙ্কিউ লেটার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যারা কোয়ারেন্টাইন মানেননি তাদের অনেককেই জরিমানাও করা হয়েছে। এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ‘ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজ নিজ এলাকায় সন্দেহভাজন করোনা রোগী ও বিদেশ প্রত্যাগতদের বিষয়ে তথ্য দেবেন। এছাড়া যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের বাড়ি মার্কিং ও প্রয়োজনে সঠিকভাবে নির্দেশনা মেনে চলছেন কিনা তা মনিটরিং করবেন এবং তাদের বিষয়েও প্রশানসকে তথ্য দেবেন।’

চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রথমে দু’টি স্কুল ও পরে দু’টি হোটেলকে কোরেন্টাইনের জন্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এখন নগরের সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতালকে সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

এর কারণ হিসেবে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘চীনে যে হোটেলে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল, পরে সে হোটেলটি পুরোই জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ অবস্থায় আমাদের হোটেল ভাড়া কে দেবে? তাই রেলওয়ে হাসপাতালকে সেক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

৯. আক্রান্ত ব্যক্তির ইভাকুয়েশন :

ইভাকুয়েশন নিয়ে জানাতে গিয়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইভাকুয়েশন মানে হলো আক্রান্ত ব্যক্তিকে সরিয়ে নেওয়া। এ ক্ষেত্রে দুই ভাবে এটা হতে পারে। প্রথমত করোনাভাইরাসে আক্রন্ত রোগীকে ঘরের মধ্যেই আলাদা রুমে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুর আগ পর্যন্ত। রোগী যদি বুঝতে পারেন তিনি নিজের মধ্যে করোনার লক্ষণ খেয়াল করছেন তাহলে নিজে থেকেই আলাদা হয়ে যাওয়া ভালো। এছাড়া প্রশাসন করোনার লক্ষণ আছে এমন ব্যক্তিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে ইভাকুয়েশন করতে পরে বা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে।

korona

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় পিপিই, মাস্ক ও প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

১০. করোনা রোগী ও চিকিৎসকদের যাতায়াত ব্যবস্থা :

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আনা নেওয়ার জন্য ১০টি অ্যাম্বুলেন্স তৈরি রাখা হয়েছে। এসব অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও প্রয়োজনীয় লোকবলকে সুরক্ষা পিপিই সরবরাহ করা হবে। এছাড়া গুরুতর রোগীদের রক্তের নমুনা তাদের বাড়িতে গিয়েই সংগ্রহ করতে চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) বিশেষজ্ঞ টিমের জন্য একটি আলাদা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জাগো নিউজকে জানান, সিএমপি’র হটলাইনে (০১৪০০৪০০৪০০) ফোন করলে মহানগরে কর্মরত চিকিৎসকদের যাতায়াতের সুবিধা প্রদান করবে পুলিশ।

১১. দুর্গত মানুষের খাদ্য সহায়তা :

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী রূপ ধারণ করায় বাংলাদেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ২৬ মার্চ হতে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে গরিব, দিনমজুর, নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ যোগাতে পারছে না। তাই দিনমজুরদের সহায়তায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন শনিবার (২৮ মার্চ) থেকে জেলার ১৭ হাজার পরিবারকে চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। এছাড়া সরকারি তথ্য সেবা নম্বর ৩৩৩-এ ফোন করলে যে কেউ জেলা প্রশাসন থেকে এ সহায়তা পাবেন।

এদিকে দেশের শীর্ষ স্থানীয় লোহার রড প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম’র সহায়তায় নগরীর ৩০ হাজার পরিবারকে পর্যায়ক্রমে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) দক্ষিণ জোন। সোমবার (৩০ মার্চ) প্রথম পর্যায়ে নগরীর ৩ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে।

এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউনের ফলে বাড়িতে বন্দি থাকা খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্য-শস্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। সোমবার (৩০ মার্চ) প্রতি পরিবারের জন্য ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আটা, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি লবণ সম্বলিত প্যাকেট বিতরণের জন্য জেলার ১৬টি থানা এলাকার অফিসার ইনচার্জ এর কাছে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া জাতীয় এই সংকটে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজের বিত্তবানদের সমাজের কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলা হয়েছে।

১২. জোর দেওয়া হচ্ছে টেলিমেডিসিন সেবায় :

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই রোগী ভর্তি একেবারেই থমকে গেছে। জ্বর, সর্দি বা ডায়রিয়া নিয়ে আসা রোগীরা এক প্রকার চিকিৎসাই পাচ্ছেন না। মূলত বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা একের পর এক কোয়ারেন্টাইনে চলে যাওয়ায় এক প্রকার ভীতি ছড়িয়ে পরেছে চিকিৎসকদের মাঝে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও উপজেলা হাসপাতালগুলো রোগীদের প্রাথমিকভাবে টেলিমেডিসিন সেবা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চালু হয়েছে টেলিমেডিসিন সেবা। সোমবার (৩০ মার্চ) বিকেল থেকে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে ।’

তিনি জানান, টেলিমেডিসিন সেবার জন্য ০১৮১৮-৯৯২৬৫৭ ও ০১৯৪০-২৩৩০৭৯ নম্বর দু’টি খোলা থাকবে। এই সেবার আওতায় ২৪ ঘণ্টা দু’টি মোবাইল নম্বরে কল করে চিকিৎসা সংক্রান্ত সব পরামর্শ নিতে পারবেন সেবাপ্রার্থীরা।

korona

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের আয়োজনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধ এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

করোনাভাইরাসের এসময়ে ফোন করেই ঘরে বসে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবেন রোগীরা। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য ‘জরুরি টেলিমেডিসিন সেবা’ চালু করেছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা। চট্টগ্রাম বিএমএ পক্ষ থেকে পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা উপসর্গের রোগীরা হাসপাতাল বা ডাক্তারের চেম্বারে যাবেন না। ঘরে থেকে চিকিৎসা নিন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা উপসর্গ নিয়ে শুরুতেই উপজেলা হাসপাতালে না গিয়ে হাসপাতালের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে চিকিৎসকরা ফোনেই নির্দেশনা দেবেন। এছাড়া স্বাস্থ্য বাতায়নের হেল্পলাইন ১৬২৬৩ ও সরকারি তথ্য সেবা নম্বর ৩৩৩-এ ফোন করে দেশের যেকোনো নাগরিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। এই দু’টি হেল্পলাইন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছে। এছাড়া স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে সরকারি হাসপাতাল, ডাক্তারের তথ্য কিংবা স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক অন্যান্য যেকোনো তথ্য এবং ফোন নম্বর পেতে পারেন নগরবাসী।’

১৩. নগরে জীবাণুনাশক ছিটানো :

চট্টগ্রাম নগরে করোনাভাইরাসে প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, সেনাবাহিনী ও চট্টগ্রাম ওয়াসা জীবাণুনাশক ওষুধ ও পানি ছিটানোর কাজ করছে। আগামীতেও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার সীদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করবেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সড়কে ও নালায় জীবাণুনাশক ছিটানো হবে। ইতোমধ্যেই হাটহাজারীসহ বেশ কয়েকটি নিজস্ব উদ্যেগে এ কাজ শুরু করেছে।

১৪. বাজার মনিটরিং :

করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাড়তি দামে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার তদারকি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। নগরে বাজার মনিটরিং অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পণ্যের দাম বেশি রাখার দায়ে চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলায় ৫০ জনের বেশি ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। সিলগালা করা হয়েয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। সমন্বয় সভায় এ ধরনের অভিযান চালু রাখার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পরপরই চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি ওষুধের বাজার হাজারী গলিতে অভিযান চালায় নগরের কোতোয়ালী থানা পুলিশ। প্রয়োজনে এমন আরো অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।

১৫. জরুরি সেবা - ৯৯৯ :

নগরবাসীর যেকোনো প্রয়োজনে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যেই ঘরবন্দি মানুষের সহায়তায় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রয়োজন মেটাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশ কমিশনার’র (সিএমপি) উদ্যোগে চালু হয়েছে ‘ডোর টু ডোর শপ’।

সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা ঝুঁকির কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বলা যায় তারা এক প্রকার গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন। তাই কয়েকটি থানার পুলিশ সদস্যরা মানুষের জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও ওষুধ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন। সামাজিক দায়বদ্ধাতা থেকে বিষয়টিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে করার চেষ্টা করছি। পুলিশ সদস্যদের কয়েকজনের একটি টিম সবসময় এ কাজে নিয়োজিত থাকবে।’

এসময় তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও ওষুধসহ যেকোনো প্রয়োজনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশের হটলাইন নম্বরে (০১৪০০০৪০০৪০০) ফোন করার আহ্বান জানান।

korona

ঘরবন্দি মানুষের সহায়তায় চট্টগ্রামে নগর পুলিশ চালু করেছে ‘ডোর টু ডোর শপ’।

১৬. ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা :

দেশের পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দৃষ্টি এখন করোনাভাইরাসের দিকে। এই রোগ মহামারী আকারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই তা রোধ করতে এখন সব শক্তি নিয়োগ করতে হচ্ছে। ফলে মহানগরের বিভিন্ন স্থান জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা করতে গিয়ে মশকনিধন কার্যক্রমে ভাটা পড়লে এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ সামলানো অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিন পুলিশের পক্ষ থেকে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের মতই এ বছরও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে এডিস মশা নিধন এবং এর জন্ম-বিস্তার রোধে দিনব্যাপী ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে গিয়ে ঢাকার দুই মেয়র বেকায়দায় পড়লেও বছরজুড়ে ব্যতিক্রম ছিল চট্টগ্রাম। এখানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন কম, তেমনি কম ছিল মৃতের সংখ্যাও। সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা লাখের ঘর ছাড়ালেও চট্টগ্রামে এ সংখ্যা ছিল মাত্র দেড় হাজার।

১৭. শর্তসাপেক্ষে খোলা যাবে খাবারের দোকান :

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার প্রতিরোধ এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সমন্বয় সভায় চট্টগ্রাম নগরে শর্তসাপেক্ষে খাবারের দোকান ও হোটেল খোলা রাখার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জানান, ‘জনগণের সুবিধার কথা চিন্তা করে শর্তসাপেক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীর খাবার দোকান, বেকারি ও রেস্টুরেন্ট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে যেন রেস্টুরেন্ট মালিকরা খাবার বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করেন সে বিষয়ে সকল থানার ওসিদের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে। শুধু খাবার সংগ্রহ করে বাসায় পার্সেল করে নেয়া যাবে।

রেস্টুরেন্ট বা দোকানের ভেতর খাবার খাওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রেস্টুরেন্টে আসা-যাওয়া করতে হবে। খাবার সংগ্রহের সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়াতে হবে। রেস্টুরেন্ট বা খাবার দোকানকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার আড্ডা চলবে না। খাবার তৈরি থেকে বিক্রি পর্যন্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলতে হবে। প্রত্যেক খাবারের দোকানে প্রবেশপথে হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজেশন ব্যবস্থা রাখতে হবে। খাবার পার্সেলে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে।’

১৮. মুখপাত্র :

সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনাভাইরাসের বিষয়ে তিনজন মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন। এর মধ্যে বিভাগীয় বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির, জেলার বিষয়ে সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বী এবং মহানগরীর বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা মুখপাত্র নিযুক্ত হয়েছেন।

এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।