চট্টগ্রামে ওমরাফেরতদের নিয়ে শঙ্কা
চট্টগ্রামে প্রথম করোনা ভাইরাস ব্যক্তি নিজে প্রবাস ফেরত ছিলেন না। তবে তার মেয়ে ও বেয়াইন ওমরা ফেরত বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা, চট্টগ্রামের করোনা রোগী কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার হয়েছেন। কারণ এর আগে কক্সবাজারে যে বৃদ্ধার শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যায় তিনি ছিলেন ওমরা ফেরত।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০ ও ২১ মার্চ এয়ার অ্যারাবিয়া ও ফ্লাই দুবাইয়ের তিনটি ফ্লাইটে মোট ৩৫৩ যাত্রী মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরেছেন। এর মধ্যে ২১ মার্চ (শনিবার) এয়ার অ্যারাবিয়া ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ১১৬ যাত্রীর সবাই ওমরা ফেরত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আগের দিনে ২০ মার্চ এয়ার অ্যারাবিয়া ও ফ্লাই দুবাইয়ের দুটি ফ্লাইট ২৩৭ যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম আসলেও এদের মধ্যে কতজন ওমরা ফেরত ছিলেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সে সময় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন, ২০ মার্চ ফ্লাই দুবাই ও এয়ার এরাবিয়ার ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ২৩৭ যাত্রী চট্টগ্রামে এসেছেন। তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। পরে ২১ মার্চ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছিল। এয়ার অ্যারাবিয়া ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ যাত্রীরা চট্টগ্রামে পৌঁছান। তারা সবাই ওমরাহ যাত্রী ছিলেন।
এ অসস্থায় এত বিপুল সংখ্যক যাত্রী যারা ওমরা ও মধ্যপ্রাচ্য ফেরত ছিলেন তাদের ঘিরেই চট্টগ্রামের করোনা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যদিও এসব যাত্রীদের সবারই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টানের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, যেহেতু মেয়ে ও বেয়াইন করোনা আক্রান্ত না হয়েও কমউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে ওই বৃদ্ধকে আক্রান্ত করেছেন তাই বাকি ওমরা ফেরতরাও তাদের সংস্পর্শে আসারাও ঝুঁকি মুক্ত নন।
ওমরা ফেরতদের তালিকা নেই প্রশাসনে
ওমরা ফেরতদের মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রথম করোনা রোগী আক্রান্ত হয়েছেন এ তথ্য পাওয়ার পর স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে জেলার ওমরা ফেরত যাত্রীদের তালিকার বিষয়ে জানতে চেয়েছিল জাগো নিউজ।
তবে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওমরা ফেরতদের আলাদা কোনো তালিকা নেই, তবে বিমান যোগাযোগ বন্ধের আগ পর্যন্ত ৯৭৩ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছিল। সেই তালিকা পুলিশ, গোয়েন্দা ও উপজেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছিল।’
হাটহাজারী উপজেলা কর্মকর্তা রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিভিল সার্জন অফিস থেকে আমি মাত্র ৪০ জনের তালিকা পেয়েছিলাম। তবে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ মিলে হাটহাজারীতে বিদেশ প্রত্যাগত ৫০৩ জনের তালিকা করি। এদের সবার কোয়ারেন্টাইন বাস্তবায়নে করিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ।’
তিনি জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকায় ওমরাহ ফেরতদের তালিকা নেই। তবে কোনো দেশে থেকে ফিরেছেন তা উল্লেখ আছে।
চট্টগ্রামের প্রথম করোনা ভাইরাস বৃদ্ধের মেয়ের শ্বশুর বাড়ি সাতকানিয়ার পুরানগড় ইউনিয়নে। সৌদি আরব থেকে ফিরে মেয়ে দামপাড়ায় পিতার বাড়িতে থেকে গেলেও মেয়ের শাশুড়ি বর্তমানে সাতকানিয়ার পুরানগড়ে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। এই তথ্য জানার পর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে প্রথমে নগরের চকবাজার থানা এলাকার দামপাড়া ১ নম্বর গলির ছয়টি বাড়ি লকডাউন করা হয়। পরে মধ্যরাতে সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর এ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ নারী যে ওমরা ফেরত সে তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। প্রশাসন থেকে পাওয়া তালিকায় ওমরা ফেরতদের আলাদা কোনো তালিকা নেই। তারে তার এক আত্মীয় করোনা আক্রান্ত খবর পেয়ে সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চারটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। ওই বাড়িগুলোতে ১২টি পরিবার বসবাস করেন। পুলিশি পাহারা বসিয়ে বাড়িগুলোতে যে কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, ওই চারটি বাড়ি থেকে কেউ বের হতে পারবেন না।’
এদিকে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার আগে ওই ব্যক্তি নগরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ায় ওই হাসপাতালের তিন চিকিৎসকসহ ২৩ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
আবু আজাদ/এএইচ/জেআইএম