দাফন শেষে ফিরতে হবে ঢাকায়, ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
বুধবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৪টায় নোয়াখালীতে প্রবেশপথে চেকপোস্টে একটি লাশবাহী গাড়ি থামায় পুলিশ। মৃত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, মৃত্যুর কারণ ও সঙ্গে আসা ব্যক্তিদের সম্পর্ক ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করে খাতায় লিপিবদ্ধ করে। এরপর পুলিশের একজন কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে বলেন, ‘আপনাদেরকে লাশ দাফন করাসহ অন্যান্য সব কাজ শেষ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোয়াখালী ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় পুলিশ যাবে বাড়িতে।’
রাজধানীর আশকোনার বাসিন্দা নুরুল আলম লিটন তার বাবা হাজি আবদুস সাত্তারের লাশ নিয়ে পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির কাশিপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে পুলিশের কাছ থেকে নোয়াখালী ত্যাগের আল্টিমেটাম পান তিনি।
নুরুল আলম জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে নোয়াখালীতে লকডাউন চলছে। তার বাবা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। দিন দশেক আগে স্ট্রোক করেন। গত কয়েক দিন তার বাবাকে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করাতে চাইলেও নানা অজুহাতে হাসপাতাল তাকে ভর্তি নেয়নি। তারা অনলাইনে ফি জমা দিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর ব্যাপারে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে সঠিক চিকিৎসাটুকুও করাতে পারেননি বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও লকডাউনের কারণে পথে ঝামেলার কারণে তারা হাতেগোনা ৩-৪ জন লাশ নিয়ে গ্রামে দাফন করতে যান। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তার একমাত্র বোনকেও বাবার লাশটি দাফনের জন্য সঙ্গে করে আনার সাহস পাননি।
আজ দুপুরে জাগো নিউজকে নুরুল আলম বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নোয়াখালী ত্যাগ না করলে পুলিশ বাড়িতে এসে ঝামেলা করতে পারে- এ আশঙ্কায় লাশ দাফন করে দুপুরের পরই ঢাকার উদ্দেশে নোয়াখালী ত্যাগ করবেন তিনি।
করোনাভাইরাসের কারণে নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় লকডাউন পরিস্থিতিতে এভাবেই নিজের গ্রাম ছেড়ে দ্রুত ফিরে আসতে হচ্ছে মানুষকে। সংক্রমণ ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লকডাইন করা এলাকায় কাউকে প্রবেশ ও বের হতে দিচ্ছে না। যথাযথ কারণ দেখিয়ে প্রবেশ করতে পারলেও নিজ বাড়িতে থাকতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে নিজ বাড়িতেও অচেনা মানুষ যেন তারা।
মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ১২ জন। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৬ জন।
এমইউ/এসআর/পিআর