দিনভর বাসায় বন্দি, শেষ বিকেলে ছাদে মুক্তির স্বাদ
করোনাভাইরাস আতঙ্কে দিনভর বাসার ভেতর থেকে এক ধরনের বন্দি জীবন কাটছে নগরবাসীর। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বহুতল ভবনের বাসিন্দারা শেষ বিকেলে মুক্তির স্বাদ পেতে ছাদে উঠছেন। শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ বুক ভরে শ্বাস নিতে ছাদে পায়চারী করছেন কিছু সময়। এমন দৃশ্য রাজধানীতে এখন নিত্য চোখে পড়ছে।
স্বাভাবিক সময়ে এমন দৃশ্য খুব একটা চোখে পড়ে না। পরিবারের গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রী যারা জীবিকার তাগিদে চাকরি, ব্যবসা কিংবা অন্য কোনো পেশায় রয়েছেন, ভোর থেকে তাদের ব্যস্ততা শুরু হয়। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর জন্য নাস্তা তৈরি, নিজে কিংবা চালককে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে কর্মস্থলে ছুটে যাওয়া এবং দিনভর ব্যস্ততায় যাদের সময় কাটতো, সেসব ব্যস্ত মানুষের করোনা নামক অদৃশ্য ভাইরাসটি এক প্রকার ঘরবন্দি করে ফেলেছে। সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে তারা অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না বা যেতে পারছেন না। এ কারণে শেষ বিকেলে বাসার ছাদে উঠে যেন বন্দিদশা থেকে মুক্তির স্বাদ পাচ্ছেন।
রাজধানীর লালবাগের খাজে দেওয়ান এলাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আফজাল হোসেন বলেন, মাসখানেক আগেও ছুটির জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকতাম। একটি দিন ছুটি পেলে দিনভর আরাম করে ঘুম ও বাইরে ঘুরতে যাওয়ার নানা পরিকল্পনা করতাম। কিন্তু এখন অফুরন্ত ছুটি। সময় কাটতে চায় না। আগের মতো ঘুমও আসে না। এখন মনে হয় দৌড়ঝাপের জীবনটাই হয়তো ভালো ছিল।
আজিমপুর নতুন পল্টন এলাকার আকবর হোসেন নামে এক বৃদ্ধ বলেন, করোনা আতঙ্কে কাটছে। আগে মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ভালো সময় কাটতো। সরকারি নির্দেশে এখন মসজিদে যেতে পারছি না। তাই বিকেলে ছাদে উঠে ঘণ্টাখানিক হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটাই।
রাজধানীর একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আবির হোসেন বলেন, খাঁচায় পাখিরা কেন ছটফট করে এখন তা অনুভব করছি। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ। বন্ধুদের সাথে দেখা হয় না। সারাদিন ঘরে শুয়ে-বসে কাটাতে হয়। আগে পড়াশোনার চাপে বিকেলে ছাদে ওঠার সময় না পেলেও এখন পরিবারের সবার সাথে বিকেলের সময়টা সবচেয়ে ভালো কাটছে।
এমইউ/এমএসএইচ/এমএস