সংস্কৃতি খাতে করোনার প্রভাব কমাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে: প্রতিমন্ত্রী
সংস্কৃতি খাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব কমাতে বিভিন্ন সময়োপযোগী উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা সংকট উত্তরকালীন সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণে সহায়তা করবে বলে ইউনেস্কোকে জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রেক্ষিতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য সংকট এবং সংস্কৃতি খাতে এর প্রভাব ও করণীয় বিষয়ে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর আয়োজনে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সংস্কৃতি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে প্রথম ভার্চুয়াল মিটিংয়ে যোগদান করে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বুধবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট থেকে জনপ্রিয় অনলাইন মিটিং অ্যাপ 'জুম' এর মাধ্যমে এ ভার্চুয়াল মিটিংয়ে যুক্ত হন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউনেস্কো নির্ধারিত তিন মিনিটের নির্দিষ্ট বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও করোনা মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এর ফলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কার্যক্রম বর্তমানে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন মেয়াদী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যেখানে কর্মহীন, অস্বচ্ছল, প্রান্তিক শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ও সংস্কৃতি খাতে করোনার প্রভাব হ্রাসকল্পে বিভিন্ন সময়োপযোগী উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা সংকট উত্তরকালীন সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণে সহায়তা করবে।
কে এম খালিদ বলেন, করোনার ফলে সৃষ্ট সংকট নিরসনে সংস্কৃতি খাতে অগ্রাধিকারমূলক যেসব প্রশমন কৌশল নেয়া প্রয়োজন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সংস্কৃতি খাতে এর প্রভাব নিরূপণ, ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সব জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত স্থাপনা পরিদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ, অস্বচ্ছল ও প্রান্তিক শিল্পীদের এককালীন অনুদানের ব্যবস্থা, সরকার কর্তৃক শিল্পীদের তৈরি মূল শিল্পকর্ম ক্রয় করা যাতে উভয়পক্ষ উপকৃত হয়, ভালো মানের রেকর্ড অনুষ্ঠান তৈরি করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সম্প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠান প্রস্তুত করে বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়ায় সম্প্রচার, জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগত স্থাপনার জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রদান ইত্যাদি।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধার ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন তা হলো- ইউনেস্কোর পক্ষ হতে জরুরি তহবিল প্রদান করা যার মাধ্যমে এ খাতের প্রভাব নিরূপণ ও ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীকে সহায়তার ব্যবস্থা করা যায়, আন্তর্জাতিকভাবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ইভেন্ট বা অনুষ্ঠান আয়োজন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক হারে সংস্কৃতি খাতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুনর্বিনিয়োগ ও পুনঃপরিদর্শন, ফলপ্রসূ আন্তরাষ্ট্রীয় সংলাপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিপূর্বক সংস্কৃতি খাতকে পুনরুদ্ধার করা, সরকার ও ইউনেস্কো প্রদত্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে এ খাতে সহায়তা করা।
প্রতিমন্ত্রী সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। সেই সঙ্গে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিগগিরই এ মারাত্মক সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় সময় বুধবার দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টা হতে রাত ১০টা) পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত ১০৮টি দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন। ইউনেস্কোর সংস্কৃতি বিষয়ক নির্বাহী অফিসের প্রধান মিস ডরিন ডুবোইস পাঁচ ঘণ্টার এ অনলাইন মিটিং পরিচালনা করেন।
এমইউএইচ/এমএসএইচ/এমকেএইচ