নিষ্ঠুরতা, বাবার লাশ ঢাকার পর গ্রামেও দাফনে বাধা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২০

পরিবারের ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মানুষটি আর নেই। স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত এ পারিবারের পাশে দাঁড়ালেন না এলাকাবাসী। উল্টো নিষ্ঠুর আচরণ। তারা এই বৃদ্ধের লাশ দাফন করতে দেবেন না। নিরূপায় সন্তানরা ঠিক করলেন, ঢাকা থেকে বাবার লাশ নিতে হবে গ্রামে।

ছেলে-মেয়ে, স্বজনরা বাবার লাশ নিয়ে গ্রামে ছুটলেন। কিন্তু শহর, গ্রামে এই নিষ্ঠুরতা যেন একাকার। সেখানেও তাদের বাবার লাশ দাফনে বাধা। এলাকাবাসীর সন্দেহ ওই একই।

উপায় না দেখে উপজেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানান তারা। অবশেষে তাদের পাশে এসে দাঁড়ান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ভাইস চেয়ারম্যান ও কয়েকজন মুসল্লি। তারা বৃদ্ধের লাশ উপজেলায় এনে গোসল ও জানাজা পড়ান।

করোনাসন্দেহে দেশে লাশ দাফন করতে না দেয়ার এটাই প্রথম ঘটনা নয়। এই বৃদ্ধের পরিবারের সাথে দুটি ঘটনার একটি ঘটেছে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায়। দ্বিতীয়টি ঘটেছে নিজ গ্রাম ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন ইউনিয়নে মুসলিমহাটি গ্রামে।

বুধবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফেসবুক পেজে এই ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়। এতে জানানো হয়, মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও জানাজা পড়িয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করিয়ে দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তাবির হোসেন খান পাভেলসহ কয়েকজন মুসল্লি। বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

ওই বৃদ্ধের ছেলের বরাত দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফেসবুক পেজের স্ট্যাটাসে আরও জানানো হয়, ওই বৃদ্ধ গত দেড়মাস ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। আর্থিক সমস্যার কারণে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারেননি স্বজনরা। বুধবার রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় বাসায় ওই বৃদ্ধ বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। করোনাভাইরাসে তার মৃত্যু হয়েছে, প্রতিবেশীদের এমন সন্দেহের কারণে তাকে ঢাকায় দাফন করা সম্ভব হয়নি।

যার কারণে লাশ তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এখানেও একই অবস্থা। একাধিক ব্যক্তির সন্দেহ হলো, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ফলে লাশের গোসল, জানাজা, দাফনে জটিলতা দেখা দেয়।

অবশেষে উপায় না পেয়ে নিহতের স্বজনরা নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। মৃত ব্যক্তির লাশ হাসপাতালে এনে গোসল ও জানাজা পড়িয়ে তার নিজ গ্রামে দাফনের জন্য পাঠানো হয়। এ পুরো প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেন উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান তাবির হোসেন খান পাভেল।

যেসব ব্যক্তি লাশের গোসল ও জানাজা পড়িয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে ওই ফেসবুক পেজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

সেইসঙ্গে এ ধরনের ঘৃণীত কাজের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন অনেকে। তারা বলেছেন, করোনাভাইরাসে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে, এমন সন্দেহ করে প্রতিবেশী ও সাধারণ জনগণ যে অসহযোগিতামূলক আচরণ করেছেন, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আসাদুজ্জামান সুমন/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।