চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত পুলিশের সংখ্যা বেড়ে ১২, ব্যারাক লকডাউন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১১:৫০ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২০

চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও একজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। তিনি একজন পুলিশ কনস্টেবল। এ নিয়ে ৩৫ দিনে শুধু চট্টগ্রামেই ১২ জন পুলিশ সদস্য করোনায় সংক্রমিত হলেন। সংক্রমিত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রীও। চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত ৭৩ জনের মধ্যে ১৩ জনই পুলিশ পরিবারের।

বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) ১৬৯টি ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) ল্যাবে ৮৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিআইটিআইডি ল্যাবে নতুন ১৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কনস্টেবল করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে আইসোলশনে আছেন।’

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) আবু বক্কর সিদ্দিক জাগো নিউজকে বলেন, আজ শনাক্ত হওয়া পুলিশ সদস্য নগরের খুলশী থানায় কর্মরত কনস্টেবল। থাকেন থানার ব্যারাকে। আগ থেকেই অসুস্থবোধ করায় তিনি চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে আইসোলেশনে ছিলেন।

আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে যোগাযোগ করেছি। চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকা ওই পুলিশ সদস্যের এখন করোনারোগী হিসেবে চিকিৎসা হবে। এছাড়া তিনি থানার যে ব্যারাকে ছিলেন সেখানকার সব পুলিশ সদস্যকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত নগর পুলিশের ১১ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।’

এর আগে, দামপাড়া পুলিশলাইন্সের ট্রাফিক ব্যারাকের ৯ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। এছাড়া নগরীর লালখানবাজার এলাকার বাসিন্দা সিএমপির এক নায়েক এবং র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনে কর্মরত পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের মোট ১২ পুলিশ সদস্য এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন।

৩৫ দিনে শনাক্ত ৭৩ জন

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। চট্টগ্রামে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। নগরীর দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি তার ওমরাফেরত মেয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হন বলে ধারণা করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় করোনারোগী শনাক্ত হন ওই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলে।

৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হন তিনজন। একদিন বিরতি দিয়ে ১০ এপ্রিল বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় আরও দুইজন করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনারোগী শনাক্ত হন তিনজন। ১২ এপ্রিল চট্টগ্রামে সে সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে উন্নীত হয়। আক্রান্তদের একজন শিশু ওইদিন দিবাগত রাতে জেনারেল হাসপাতালে মারা যায়। এছাড়া ওইদিন প্রথমবারের মতো ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যও করোনা আক্রান্ত হন।

১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া দুই করোনারোগীর একজন নারী করোনা শনাক্তের আগেই আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় মারা যান। ১৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে এক চিকিৎসক, সাতকানিয়ার পাঁচ যুবক ও নগরের সাগরিকা এলাকার এক পরিবারের চারজন করোনায় আক্রান্ত হন। এর পরের চারদিন ১৫, ১৬,১৭ ও ১৮ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা কমে হয় যথাক্রমে ৫, ১,১ ও ১ জনে।

তবে ১৯ এপ্রিল হঠাৎ আবারও বাড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এদিন চারজনের শরীরে ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। এছাড়াও পুরোনো এক রোগীর আবারও পজিটিভ আসে। ২১ এপ্রিল নতুন একজন করোনা শনাক্ত হওয়ায় জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ জনে। ২২ এপ্রিল নতুন তিনজন করোনা শনাক্ত হয়। ২৪ এপ্রিল নগরের দামপাড়ায় আরও একজন রোগী শনাক্ত হয়।

২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে শনাক্ত হয় নতুন দুই রোগী, ২৬ এপ্রিল শনাক্ত হয় ৭ জন, ২৭ এপ্রিল ৯ জন, ২৮ এপ্রিল ৩ জন, ২৯ এপ্রিল এক পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন ও সর্বশেষ আজ নতুন করে আরও এক পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ায় মোট রোগীর সংখ্যা হলো ৭৩ জন। এদের মধ্যে ঢাকা ও রাজবাড়ীতে করানো শনাক্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়া তিন ব্যক্তিও রয়েছেন।

এদিকে চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত এক শিশু, দুই বৃদ্ধ ও দুই নারীসহ মোট ছয়জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্য‌ন্ত মারা গেছেন ছয়জন। মৃত্যুর পর তাদের পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ১৬ জন। ৪৮ জন আইসোলেশনে ভর্তি আছেন।

আবু আজাদ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।